নজর ফাইনালে। তৈরি হচ্ছেন পস্টিগা।-উৎপল সরকার
সেমিফাইনালে আগে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেললে কলকাতার ভাল হত কি? নাকি প্রথম লেগটা নিজেদের মাঠে খেলার সুযোগ পাওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মে কলকাতা এগিয়ে?
গত ক’দিন যেখানেই যাচ্ছি এই দু’টো প্রশ্ন ধেয়ে এসেছে আমার দিকে।
আমার মতে, কোনও নকআউট লড়াইয়ে প্রথম লেগ ঘরের মাঠে হলে হোম টিম তখনই সুবিধে পায় যদি তারা ম্যাচটা জিততে পারে। ড্র হলে বা হেরে গেলে নিজেদের মাঠ, বিপক্ষের মাঠ, এ সবের আর তাৎপর্য কী! এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে প়ড়ছে। এ বার আইএসএলের লিগে কিন্তু কলকাতায় এসে এটিকে-কে হারিয়ে দিয়ে গিয়েছিল মুম্বই। ফোরলানের গোলে।
সেমিফাইনালের আগে আনন্দবাজারেই পড়লাম সেই ফোরলানকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন না মলিনা। নিজে বড় টিমে কোচিং করার অভিজ্ঞতায় আমার মনে হচ্ছে, এটা এটিকে কোচের একটা স্ট্র্যাটেজি হতে পারে। আমি নিশ্চিত, আজ ফোরলানকে আটকানোর সব ছকই আগে থেকে তৈরি রেখেছেন মলিনা। আর সেটা যদি স্প্যানিশ ভদ্রলোক সত্যিই না করে থাকেন, তবে ওঁর দলকে বিপদে পড়তে হবে। রবীন্দ্র সরোবরে দু’দলের ঠিক আগের ম্যাচটার মতোই।
আইএসএলের সবচেয়ে সফল দল কলকাতার সেমিফাইনাল নিয়ে ফুটবলের শহরে উত্তেজনা থাকবে, এ আর নতুন কী! তবে আমি বিশেষ করে আগ্রহী থাকব মলিনা আর গুইমারেস— একজন ইউরোপিয়ান আর একজন লাতিন আমেরিকান কোচের মগজাস্ত্রের লড়াই দেখতে। দুই কোচের স্ট্র্যাটেজি এই ম্যাচে অনেক কিছু ওলটপালট করে দিতে পারে।
তবু সব কিছু ভেবে আমি এক শতাংশ হলেও আজ এগিয়ে রাখব মুম্বইকে। আসলে যে টিমটা ১৪ ম্যাচের মধ্যে মাত্র চারটে জিতেছে, আটটা ড্র করেছে, সেই কলকাতাকে এত বড় ম্যাচে কী করে ফেভারিট বলি? যদিও আমার হৃদয় চাইছে কলকাতা-ই জিতুক।
কিন্তু আমার মস্তিষ্ক বলছে মুম্বই অনেকগুলো কারণে এই ম্যাচে এগিয়ে। এক) মুম্বইয়ের অ্যাটাকিং বেশি শক্তিশালী। দুই) আই লিগ চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরুর গোলকিপার অমরিন্দরকে পাওয়ায় মুম্বইয়ের ‘লাস্ট লাইন অব ডিফেন্স’ আরও মজবুত। তিন) ওদের বেঞ্চও কলকাতার চেয়ে ভাল। সনি, জ্যাকিচন্দ, হাওকিপের মতো ফুটবলাররা রিজার্ভে থাকবে। মানে পরিবর্তরাও প্রথম এগারোর সমান, হয়তো বা আরও ভাল! চার) টিম বাছার দক্ষতার ক্ষেত্রেও আমার মতে গুইমারেস এগিয়ে মলিনার থেকে।
এটিকে অবশ্য একটা জায়গায় মুম্বইকে বিপদে ফেলতে পারে। সেটা হল উইং প্লে। দ্যুতি, জাভি লারা কখনওসখনও অবিনাশও যে ভাবে উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠে, দু’প্রান্ত থেকে যে ভাবে ক্রস ভাসায় স্ট্রাইকারদের জন্য স্কোরিং এরিয়ায় সেগুলো দারুণ ভাল। বিশেষত মুম্বইয়ের খেলায় লক্ষ্য করেছি, ওদের লেফট ব্যাকটা তেমন ভাল নয়। পুরো ফিট হয়ে ওঠা দ্যুতি যদি আজ শুরু থেকে খেলে তা হলে মুম্বইয়ের চাপ বাড়বে। প্রশ্ন হল, দ্যুতির জুটি কে হবে? আমি কোচ হলে জাভি লারাকে লেফট উইংয়ে খেলাতাম। কিন্তু মলিনা তো দেখছি, ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসেবে বোরহা আর পিয়েরসনকে ব্যবহার করছেন। শনিবারও সেটা হলে লারাকে বেঞ্চে বসতে হবে। আসলে ছয় জন বিদেশি বাছাটা আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ কলকাতার কাছে।
কলকাতাকে আরও একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে— টুর্নামেন্টে প্রথম বার সেমিফাইনালে পৌঁছনো প্রতিপক্ষ কতটা তেতে থাকতে পারে! মুম্বই স্বাভাবিক ভাবেই ফাইনালে উঠতেও মরিয়া হবে। সেখানে এটিকে গত বার সেমিফাইনালে ঘরের মাঠে জিতলেও তার আগে অ্যাওয়েতে এত বড় ব্যবধানে হেরেছিল যে, টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল।
তাই বলব, এ বার ঘরের মাঠে বেশি গোলে জিতে নিজেদের সেফ জোনে রাখুক কলকাতা। তখন অ্যাওয়ে সেমিফাইনালের চাপ অনেকটাই কমে যাবে মলিনার।
(৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy