নতুন ছাত্রদের সঙ্গে ত্রিজিত্।—নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের খুদে ফুটবলারদের নিয়ে তো কেউ ভাবে না। কিন্তু ওখানকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অদম্য একটা খিদে থাকে। থাকে লড়াইয়ের জেদ আর শারীরিক সক্ষমতা। না হলে ভাইচুং ভুটিয়া, নির্মল ছেত্রী, সঞ্জু প্রধানরা তৈরি হতেন না। এঁরা সকলেই সিকিমের। কিন্তু আমাদের রাজ্যে, দার্জিলিং থেকে তেমন ভাবে ফুটবলার উঠল কোথায়? সেই দার্জিলিং জেলারই ছোট্ট গ্রাম বড়ামাঙ্গওয়ার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ডাক কলকাতায় বসে শুনতে পেয়েছিলেন একজন। তার পর আর ভাবেননি প্রাক্তন ফুটবলার ত্রিজিৎ দাস। সটান হাজির হয়ে যান সেই গ্রামে। শেষ পর্যন্ত তৈরি করে ফেললেন ফুটবল অ্যাকাডেমি। শুক্রবার তা চালুও হয়ে গেল।
ময়দানে ত্রিজিৎ দাস ফুটবল স্কুলের নাম সবার জানা। তাঁর হাত ধরে উঠে আসছে অনেক ফুটবলার। তিনি মন সঁপেছেন ভারতীয় ফুটবলের পরবর্তী প্রজন্ম তৈরির কাজে। প্রতিভা খুঁজতে নজর ছড়িয়ে যেতে চাইছেন বাংলার প্রত্যন্ত জায়গায়।
কিন্তু হঠাত্ এই জায়গাটা কেন বেছে নিলেন? ত্রিজিৎ বলছিলেন, ‘‘আমি আসলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে ভালবাসি। যা কেউ করে না, সেটা করতে ভাল লাগে। অত ভাবি না। ঝাঁপ দিয়ে দিই, তার পর দেখা যাবে কী হয়।’’ এই ঝাঁপটাই বা ক’জন দিতে পারে, যাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে পারে একটা পুরো গ্রাম। কলকাতার বড় দলে খেলা ত্রিজিৎ অনেক দিন ধরেই ফুটবলার তৈরির কাজে নেমেছেন। যখন তাঁর থেকে অনেক সিনিয়র ফুটবলাররাও এখনও খেলছেন তখন তিনি মন দিয়েছেন ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যতের কাজে।
ত্রিজিত্ দাসের ফুটবল স্কুলের উঠতি প্রতিভারা।—নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: পিঠে কিল-চড়, যন্ত্রণায় চোখে জল নিয়েও ক্যামেরা থেকে দৃষ্টি সরাননি চিত্র সাংবাদিক শাজিলা!
ফুটবলার ত্রিজিতের কেরিয়ারটা অনেক ছোট থেকে এবং দারুণ ভাবে শুরু হলেও, চোট আঘাতের চাপে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। টাটা অ্যাকাডেমির এই ছাত্র, ১৯৯৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দলের হয়ে সিঙ্গাপুরে লায়ন্স কাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে উঠে এসেছিলেন শিরোনামে। তার পর খেলেছেন ইস্টবেঙ্গল, সালগাওকর, মহমেডান স্পোর্টিং ও টালিগঞ্জ অগ্রগামীতে। ২০০৩ সালে, ২০ বছর বয়সে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে আইএফএ শিল্ড ফাইনালে ১০৯ মিনিট টানা খেলেছিলেন ত্রিজিৎ। সে বার চার্চিলকে হারিয়ে শিল্ড চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল সুভাষ ভৌমিকের ইস্টবেঙ্গল।
কিন্তু চোট বার বার ভুগিয়েছে এই স্ট্রাইকারকে। ফুটবল পরিবার থেকে উঠে আসা ত্রিজিৎ তাই অনেক ছোট বয়সেই বেছে নিয়েছিলেন কোচিংকে। অনেকটা একই কাহিনী ত্রিজিতের জামাইবাবু মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর। ২০১৩ সালে মির ইকবাল ট্রফিতে বাংলার কোচের দায়িত্ব নিয়ে সাফল্যের পর, আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ত্রিজিৎকে। ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন কোচিংয়ে। এখন নিজের ফুটবল স্কুল চালানোর পাশাপাশি সেল (SAIL)-এর ফুটবল অ্যাকাডেমির দায়িত্বে তিনি। এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে চলা বেবি লিগেরও অন্যতম আয়োজক তিনি।
আরও পড়ুন: আমেরিকাকে জবাব দিতে এ বার ‘মোয়াব’ বোমা বানাল চিন
শুক্রবার, ইংরেজি নতুন বছরের চতুর্থ দিনে বড়ামাঙ্গওয়ায় শুরু হয়ে গেল ত্রিজিৎ দাস ফুটবল অ্যাকাডেমি। বলছিলেন, ‘‘আজ থেকে শুরু হয়ে গেলে নতুন পথ চলা। ২০-২২ জন ছেলেমেয়ে রয়েছে। আমি প্রতি মাসে আসব আর কোচও পাঠাব। তার পর এখানে ট্রায়ালও করব। সেখান থেকে প্লেয়ার বেছে নিয়ে যাব কলকাতায় আমার অ্যাকাডেমিতে আরও ভাল ট্রেনিংয়ের জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy