Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পৃথ্বীকে বড়দের দলে দেখছেন মুগ্ধ শ্রীকান্তরা

ছোটবেলায় ছেলেকে লোকাল ট্রেনের ভিড়ে পিষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে নাকি রোজ পথ্বীর বাবা পঙ্কজ তাঁকে ঘাড়ে তুলে নিয়ে বান্দ্রা থেকে ভয়ন্ডর, এই ঘণ্টাখানেকের পথ যাওয়া-আসা করতেন। পিঠে ঝুলত ছেলের বিশাল ক্রিকেট কিটস।

ফর্মে: বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই নজর কাড়লেন পৃথ্বী। ফাইল চিত্র

ফর্মে: বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই নজর কাড়লেন পৃথ্বী। ফাইল চিত্র

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৩৬
Share: Save:

উইল সাদারল্যান্ডের একটা ফুল লেংথ বলে তাঁর ফুটওয়ার্ক ও ব্যাটের অবস্থান দেখে কমেন্ট্রি বক্সে বসে ইয়ান বিশপ বলে উঠলেন, ‘‘দ্যাট ইজ তেন্ডুলকর!’’ টিভি ক্যামেরা সোজাসুজি তাঁকে ফ্রেমে ধরায় ব্যাটসম্যানের মুখটা দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু বুঝে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে ইনি সচিন তেন্ডুলকর নন, নতুন প্রজন্মের প্রতিভা— পৃথ্বী শ।

মুম্বইয়ে তাঁকে অনেকে ‘ছোটা সচিন’ বলে ডাকতে শুরু করেছে। চার্চগেট-ভিরার ফাস্ট লোকালের ভিড়ে রোজ ধস্তাধস্তি করে যাতায়াত করতে করতে ক্রিকেটের পাঠ নেওয়া ১৮ বছরের ছেলেটি নাকি এখনই বড়দের ক্রিকেটে খেলার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে। মুম্বইয়ের যে কোনও ডেইলি প্যাসেঞ্জার পৃথ্বীর এই লড়াইয়ের কাহিনি শুনে চোখ গোল গোল করে বলতেই পারেন, ‘এ তো অতিমানব। মুম্বইয়ের লোকালে যাতায়াত করে যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই যেখানে পাগল হয়ে যেতে পারে, সেখানে একটা বাচ্চা ছেলে এ ভাবে ক্রিকেটের পাঠ নিয়ে ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন হয়ে গেল! ভাবাই যায় না।’

ছোটবেলায় ছেলেকে লোকাল ট্রেনের ভিড়ে পিষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে নাকি রোজ পথ্বীর বাবা পঙ্কজ তাঁকে ঘাড়ে তুলে নিয়ে বান্দ্রা থেকে ভয়ন্ডর, এই ঘণ্টাখানেকের পথ যাওয়া-আসা করতেন। পিঠে ঝুলত ছেলের বিশাল ক্রিকেট কিটস। এত দিনে সেই কষ্টেরই প্রতিদান পাওয়া শুরু হল তাঁর। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের বিস্ময়কে যুব বিশ্বকাপের কল্যাণে এ বার দেখতে পেল গোটা ক্রিকেট বিশ্বও। আর প্রথম দেখাতেই ধন্য ধন্য করা শুরু।

রবিবার ছ’রানের জন্য পৃথ্বী সেঞ্চুরি পেলেন না বটে, কিন্তু যে একশো বলের ইনিংস খেললেন, যে আটটা চার ও দু’টো ছয় মারলেন, তাতেই ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোচনা শুরু হয়ে গেল, আর এক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানের জন্ম কি দেখা গেল?

তবে রবিবারের আগে দেশের ক্রিকেট মহলের অনেকের নজরে আসেনি এই বিস্ময় বালক। তাঁরাও আজ দেখে নিলেন পৃথ্বীর প্রতিভা। যেমন কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্ত। ১৯৮৯-এর নভেম্বরে যিনি করাচিতে ১৬ বছর বয়সি সচিন তেন্ডুলকরকে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে দেখেছিলেন। তখনকার দেখা সচিন আর রবিবার ভোরের পৃথ্বীর মধ্যে মিল পেলেন কি? চেন্নাই থেকে ফোনে শ্রীকান্ত বললেন, ‘‘সচিনের প্রথম অভিষেক তো প্রায় ৩০ বছর আগে। সেই সচিনের ব্যাটিং এখন আর অত স্পষ্ট মনে নেই। তবে আজ এই যে পৃথ্বী শ-কে দেখলাম। এর ব্যাটিং স্টাইল অনেকটাই সচিনের মতো। খুব ভাল ভাল কয়েকটা শট খেলল। সংরক্ষণশীল অথচ দ্রুত রান করতে পারে। মুম্বইয়ের আগ্রাসী ঘরানাটা ওর খেলায় বেশ স্পষ্ট।’’

সচিনকে যেমন ১৮-য় পড়ার আগেই টেস্ট দলে ডেকে নেওয়া হয়েছিল, পৃথ্বীকেও কি এখনই ডেকে নেওয়া যেতে পারে? প্রাক্তন নির্বাচক শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘কেন নয়? একজন ক্রিকেটারকে তার সেরা সময়েই জাতীয় দলে খেলানো উচিত। যুবরাজ সিংহকে তো যুব বিশ্বকাপের পরেই সিনিয়র দলে ডাকা হয়েছিল। বিরাট কোহালিকেও তাই। তা হলে পৃথ্বীই বা নয় কেন?’’

পৃথ্বীকে ছোট থেকে দেখে আসা প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকর অবশ্য মনে করেন, ‘‘আর একটু তৈরি হতে দেওয়া উচিত ওকে। এ বারের আইপিএল-টা খেলুক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের রগড়ানিটা সামলাতে শিখুক। তার পরে নাহয় ওকে জাতীয় দলে ডাকা যাবে। তবে ওকে ইংল্যান্ড সফরে দলের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।’’

আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার ও বর্তমানে সফল কোচ প্রবীণ আমরের বিশ্লেষণ, ‘‘ক্রিকেটের প্রতিভা যে ওর জন্মগত, তা পৃথ্বীর ব্যাটিং দেখলেই বোঝা যায়। তবে ওকে ঘরের মাঠের সিরিজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করানো উচিত। শুরুতেই ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ফেলে দিলে ওর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে যেতে পারে। যদিও ও চাপটা সামলে নিতে পারবে বলেই মনে হয়। কিন্তু তাতে ওর টেকনিকের ক্ষতি হতে পারে।’’ পৃথ্বীর মধ্যে কোহালির ছায়া দেখতে পাচ্ছেন প্রবীণ আমরে। ‘‘বিরাটের ব্যাটিংয়ে আমরা শিল্পের সঙ্গে আগ্রাসন দেখে এসেছি। এই ছায়াটা দেখছি পৃথ্বীর ব্যাটিংয়ে। নিয়মিত ঘষামাজা করে নিজেকে তৈরি করে নিতে পারলে পৃথ্বীও যে ভবিষ্যতে ভারতের সম্পদ হয়ে উঠবে না, কে বলতে পারে?’’

ভিরার লোকাল ট্রেনে তাঁর প্র্যাক্টিসে আসার দিন শেষ। পৃথ্বীর বাবা জানালেন, ছেলে নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরলেই জুহু তারা রোডে তাঁদের নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশ করবেন বাপ-ছেলে। চার বছর বয়সে মা-কে হারানোর পর পঙ্কজই যে পৃথ্বীর পৃথিবী। ক্রিকেটের আসল দুনিয়ায় ঢুকে পড়ার আগে এই পৃথিবীটাকে এ বার একটু গুছিয়ে নিতে চান ‘ছোটা সচিন’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE