ঝামেলা: ম্যাচের শেষে হেনস্থার শিকার ইস্টবেঙ্গল কোচ। ফাইল চিত্র
ইস্টবেঙ্গল ০ : আইজল এফ সি ০
ম্যাচে যা উত্তেজনা ছিল, তা ছাপিয়ে গিয়ে খেলার শেষে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল আইজলের রাজীব গাঁধী স্টেডিয়াম।
ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ জিতে মঙ্গলবার লিগ টেবলের শীর্ষে পৌঁছতে তো পারলই না, উল্টে পয়েন্ট নষ্ট করে পিছিয়ে পড়ার দিনে চূড়ান্ত হেনস্থার স্বীকার হতে হল কোচ খালিদ জামিল-সহ পুরো টিমকে। বিপক্ষ টিমের সমর্থকদের বিক্ষোভে প্রায় আধ ঘণ্টা আটকে থাকার পর পুলিশের সাহায্যে স্টেডিয়ামের পিছনের দরজা দিয়ে মাঠ ছাড়তে হল লাল-হলুদ বাহিনীকে। খালিদ ও লাল-হলুদ টিম বাসের দিকে উড়ে আসে জলের বোতল। পুলিশের গাড়িতে শেষ পর্যন্ত হোটেলে ফেরেন খালিদ।
এখানেই শেষ নয়! হোটেলে ফেরার পর লাল-হলুদ কর্তারা জানতে পারেন আরও ভয়ঙ্কর খবর। তাঁদের কোচের বিরুদ্ধে এফ আই আর করা হয়েছে স্থানীয় থানায়। সাংবাদিক সম্মেলনে উত্তেজক মন্তব্য করে মাঠে বিশৃঙ্খলায় মদত দেওয়ার জন্য খালিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে আইজল ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা। আই লিগের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন। মাঠে উপস্থিত ছিলেন আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর। বললেন, ‘‘খালিদ ম্যাচের আগের সাংবাদিক সম্মেলনে ওই ধরনের মন্তব্য না-ও করতে পারতেন। শুনেছি থানায় এফ আই আর হয়েছে।’’
ম্যাচের আগের দিন সোমবার কী বলেছিলেন আল আমনাদের কোচ? ‘‘আমি আইজলকে গতবছর চ্যাম্পিয়ন করার পর এ বারও থাকতে চেয়েছিলাম, কর্তারা আমাকে রাখেননি।’’ খালিদের এই কথা যে সত্যি নয়, সেটা মিজোরামের মিডিয়া বড় করে প্রকাশ করে। সেখানে নাকি লেখা হয়, ‘‘ইস্টবেঙ্গল কোচ মিথ্যা কথা বলেছেন। বেশি টাকার জন্য খালিদ দল ছেড়েছেন।’’
মজার ব্যাপার হল, আল আমনা-সহ গতবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন আইজল এফ সি-র চার ফুটবলার কলকাতায় এসেছেন খালিদের সঙ্গে। তাঁদের কারও বিরুদ্ধেই বিক্ষোভ হয়নি। যাবতীয় রাগ গিয়ে পড়ে কোচ খালিদ ও গোলকিপার কোচ আব্দুল সিদ্দিকির উপর।
ম্যাচের শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গল রিজার্ভ বেঞ্চের পিছন থেকে খালিদকে উত্যক্ত করতে থাকেন আইজল সমর্থকরা। বোতলও উড়ে আসে। তা অন্য মাত্রা পায় যখন ম্যাচের মাঝেই সময় নষ্ট করা নিয়ে আইজলের পর্তুগিজ কোচ পাওলো মেনেজেসের সঙ্গে উত্তপ্ত তর্কাতর্কি হয় খালিদের। খেলার শেষে আইজল কোচ সৌজন্যের খাতিরে হাত মেলাতে গেলেও সরিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজার রজত গুহ ফোনে অভিযোগ করলেন, ‘‘এখানে আমাদের নিরাপত্তা বলে কিছু ছিল না। ড্রেসিংরুমে আইজলের লোকজন তেড়ে এলেও পুলিশ সাহায্য করেনি।’’ জানা গিয়েছে ম্যাচ কমিশনার রতীশ কুমার কড়া রিপোর্ট দিচ্ছেন। তাতে আইজলের জরিমানা হতে পারে।
এই ম্যাচটি ছিল ডার্বির আগে ইস্টবেঙ্গলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিগ টেবলের ওপর দিকে ওঠার জন্য আইজলও চেয়েছিল জিততে। ফলে খেলাটা হয় হাড্ডাহাড্ডি। গুঁতোগুঁতি, পা চালানো সবই ছিল। ইস্টবেঙ্গলের ইউসা কাতসুমির নাক ফেটে রক্ত ঝরে। রেফারি ছটি হলুদ কার্ড দেখান। কিন্তু গোলই হয়নি। দু’দলই কয়েকটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল। কাতসুমির শট পোস্টে লাগে। চুলোভার হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। উল্টোদিকে আলফ্রেড জারিয়ানের শট ইস্টবেঙ্গল কিপার লুই ব্যারেটো বাঁচান। আইজলের ডোডোজ এবং উইলিয়ামসও গোল নষ্ট করেন। ইস্টবেঙ্গলের জয়ের পথে অবশ্য কাঁটা হয়ে দাঁড়ান আইজলের বঙ্গসন্তান কিপার অভিলাষ পাল। তিনিই হন এ দিনের ম্যাচের সেরা।
ম্যাচের পর খালিদ বলেন, ‘‘টিম জেতেনি ঠিক। কিন্তু খারাপও খেলেনি।’’ আর ঘুরিয়ে আইজল কোচ তোপ দাগেন রেফারির দিকে। বলে দিয়েছেন, ‘‘ম্যাচের শেষে আমি রেফারিকে বলে এসেছি দেশের বড় ক্লাবের পয়েন্ট পাওয়ার জন্য আপনার সাহায্য করার দরকার ছিল না। আপনি ভয় পেয়েছেন বড় ক্লাব দেখে।’’
ইস্টবেঙ্গল: লুই ব্যারোটো, লালরামচুলোভা, অর্ণব মণ্ডল (দীপক কুমার), এদুয়ার্দো ফেরিরা, সালামরঞ্জন সিংহ, প্রকাশ সরকার (ব্যান্ডন ভ্যানলালরেমডিকা), ইউসা কাতসুমি, আল আমনা, বাজো আমার্ন্ড, লালডানামাইয়া রালতে, জোবি জাস্টিন (উইলস প্লাজা)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy