Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
পাকিস্তান ম্যাচের মতোই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও বৃষ্টির আশঙ্কা

অশ্বিন নিজেই বুঝেছেন বলে স্বস্তি বিরাটের

বরাবরের নরমসরম শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক বলছেন, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে তাঁর দলকে। ওভালে দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সোনার কাঠি-রুপোর কাঠি ছুঁইয়ে কেউ যেন জাদু করে দিয়েছে।

লক্ষ্য: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও বিরাট-দৌড়ের আশায় সমর্থকেরা। ছবি: রয়টার্স

লক্ষ্য: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও বিরাট-দৌড়ের আশায় সমর্থকেরা। ছবি: রয়টার্স

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ০৫:২৩
Share: Save:

বরাবরের আগ্রাসী ভারত অধিনায়ক বলছেন, পাকিস্তান ম্যাচ জিতে ঔদ্ধত্য দেখাতে চায় না তাঁর দল। বরাবরের নরমসরম শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক বলছেন, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে তাঁর দলকে। ওভালে দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সোনার কাঠি-রুপোর কাঠি ছুঁইয়ে কেউ যেন জাদু করে দিয়েছে।

না হলে বিরাট কোহালি বলে যেতে পারেন, ‘‘আমরা এই মুহূর্তে টিম হিসেবে ভাল খেলছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ঔদ্ধত্য দেখিয়ে খেলবে টিম। আমরা প্রত্যেক প্রতিপক্ষকে যোগ্য সম্মান দিয়ে খেলব। প্রত্যেক দলের বিরুদ্ধে একই রকম ফোকাস রেখে এগোব।’’ ২০১৭ সালে দাঁড়িয়ে এটাই ভারতীয় ক্রিকেট। কোহালিদের আগমনে পেশাদারিত্বের স্তম্ভ উঠে আত্মবিশ্বাসের লাল কেল্লা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আত্মতুষ্টি কিছুতেই ঢুকতে দেওয়া হবে না।

পাশাপাশি, উপমহাদেশীয় ক্রিকেটে এতটাই তফাত ঘটে গিয়েছে ভারত ও বাকি শক্তিদের মধ্যে যে, দেখেশুনে মনে হবে দু’টো দলের ক্রিকেট যেন দু’টো গ্রহে ঘটে। আগের সেই ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ আর এখন দেখাই যায় না।

বিরাট কোহালি-রা এতটাই একপেশে ভাবে এগিয়ে গিয়েছেন উপমহাদেশের সেরা বাহুবলী হিসেবে। তেমনই অন্যরা ভাল ক্রিকেটারের অভাবে পিছতে পিছতে অনেক নীচে নেমে যাচ্ছে। সেই ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রমদের পাকিস্তান যেমন নেই, তেমনই অরবিন্দ ডি’সিলিভা, মুথাইয়া মুরলীধরনদের শ্রীলঙ্কাও আর নেই।

আরও পড়ুন: কার্ফু তুলে বিরাটদের বলা হল, লন্ডন উপভোগ করো

এজবাস্টনে পাকিস্তানকে হারানোর পরে শাহিদ আফ্রিদি টুইট করেছিলেন, ‘ভারত আর পাকিস্তান সম্পূর্ণ দুই মেরুতে রয়েছে। গত কয়েক বছরে ওদের ক্রিকেট যত এগিয়েছে, পাক ক্রিকেট ততই পিছিয়েছে’। আজ, বৃহস্পতিবারের ওভালে শ্রীলঙ্কার কোনও প্রাক্তনকেও একই কথা বলতে শোনা গেলে অবাক হওয়ার নেই।

ক্রিকেটের প্রাচীন প্রবাদ হচ্ছে, গেম অব গ্লোরিয়াস আনসার্টেনিটি। অর্থাৎ, ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। কিন্তু ওভালে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগের দিন এমন কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না, যিনি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারছেন যে, শ্রীলঙ্কা জিতবে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এতটা একপেশে ফেভারিট বোধ হয় তিরাশি বিশ্বকাপ ফাইনালে লয়েড, রিচার্ডসদের ওয়েস্ট ইন্ডিজও ছিল না।

এমনকী, শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক পর্যন্ত প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে দারুণ উন্নতি করেছে ভারতীয় দল। যে কোনও পরিবেশে, যে কোনও জায়গায় ওরা দারুণ টিম। ওদের হারাতে গেলে নিজেদের যোগ্যতার শীর্ষে থাকতে হবে আমাদের।’’ এমন ন্যাতানো ভঙ্গিতে বললেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ যে, মনে হবে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক নিজেই খুব একটা আশা দেখছেন না।

অথচ, ওভালের বাইশ গজ দেখে শ্রীলঙ্কানদের মুখে হাসি ফোটা উচিত ছিল। পিচে হাল্কা হলেও সবুজের আভা আছে। শ্রীলঙ্কা চার পেসারে খেলছে। ওভার সম্পূর্ণ করতে বেশি সময় লাগছে বলে স্লো ওভার রেটের জন্য শাস্তি পেয়েছেন গত ম্যাচের অধিনায়ক উপুল থরঙ্গা। তবু চার পেসারের ফর্মুলা পাল্টানো হবে বলে মনে হয় না। শ্রীলঙ্কার প্র্যাকটিসে দেখা গেল, সুরঙ্গা লাকমল আগুন ঝরাচ্ছেন। দীর্ঘকাল লাকমল অফস্টাম্পের বাইরে খুব ভাল জায়গায় বল রাখছিলেন। বাড়তি বাউন্সও পাচ্ছিলেন। আর পিছনে দাঁড়িয়ে তাঁকে সমানে উৎসাহ দিয়ে গেলেন শ্রীলঙ্কার নতুন বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। বার বার পরামর্শ করলেন লাসিথ মালিঙ্গার সঙ্গেও।

মালিঙ্গা এবং লাকমল যদি সবুজের ফায়দা তুলে প্র্যাকটিসের মতো বল করতে পারেন, তা হলে কিন্তু কাজ সহজ হবে না কোহালিদের পক্ষে। ইংল্যান্ডের আবহাওয়া পেসারদের সাহায্য করতেই পারে। মঙ্গলবার সারা দিন বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার বেশিক্ষণ রোদ থাকলেও বিকেলের দিক থেকে আবার অন্ধকার করে এল। ম্যাচের দিন চল্লিশ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মানে পাক মহারণের মতোই স্টপেজ দিয়ে দিয়ে খেলা হওয়ার সম্ভাবনা।

ভারতীয় দলে ফুরফুরে বসন্তের মধ্যেই আবার কোনও না কোনও অস্বস্তিকর বিষয় লেগেই আছে। ইংল্যান্ডে নেমেই কোচ অনিল কুম্বলেকে নিয়ে বিতর্ক। সেটা মিটতে না মিটতেই বিরাট কোহালির চ্যারিটি ডিনারে দেখা গেল বিজয় মাল্য-কে। নতুন ফুলকি তৈরি করতে পারে আর. অশ্বিনকে বসানোর সিদ্ধান্ত। কোহালি যদিও বলে গেলেন, ‘‘অশ্বিনকে বসানোর সিদ্ধান্তটা খুবই কঠিন। ওর মতো বোলারকে বাদ দিয়ে টিম করা সত্যিই খুব অস্বস্তিকর ব্যাপার। কিন্তু আমার কাজ সহজ করে দিয়েছে অশ্বিন নিজে। ও-ই আমাকে বলেছে, টিমের স্বার্থে যে কম্বিনেশন তুমি খেলাবে আমি সেটাকে সাপোর্ট করি। তাই কিছুটা হাল্কা হতে পেরেছি।’’

প্র্যাকটিসে দেখা গেল অশ্বিন সবার শেষে একা একা নেটে ব্যাট করছেন। বোঝাই গেল, খুব নাটকীয় কোনও পরিবর্তন না ঘটলে ওভালেও তাঁর খেলার সম্ভাবনা কম। মহম্মদ শামির হাঁটু দেখা গেল ব্যান্ডেজ করা। তা নিয়েই অবশ্য শামি গতির তুফান তুললেন নেটে। শামিকে নিয়ে কোহালি বললেন, ‘‘ও অনেক দিন পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে খেলে না। তাই কিছুটা সময় দেওয়া হচ্ছে।’’ ওভালে সবুজের আভা দেখেও যদি অধিনায়কের তাঁর কথা মনে না পড়ে তা হলে কিন্তু খুব সুহানা সফর হচ্ছে না শামির জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE