Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
সংযমে অবাক ছোটবেলার কোচ

মাঠে তৃপ্তি পেতে বিরাটের জীবন থেকে উধাও গরম রুটিও

প্যাকেজড ফ্রুট জুস? না। তাজা ফলের রস? হ্যাঁ। বাটার চিকেন? না। সপ্তাহে পাঁচ দিন কঠিন ওয়ার্ক আউট করার পাশাপাশি ভারতীয় অধিনায়ক তাঁর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে এতটাই সচেতন, তা নাকি নিজে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।

ক্রিকেটকে ক্রমশ অ্যাক্রোব্যাটিক করে তুলছেন বিরাট কোহালি।

ক্রিকেটকে ক্রমশ অ্যাক্রোব্যাটিক করে তুলছেন বিরাট কোহালি।

রাজীব ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৭
Share: Save:

প্যাকেজড ফ্রুট জুস? না।

তাজা ফলের রস? হ্যাঁ।

বাটার চিকেন? না।

বয়েলড চিকেন? হ্যাঁ।

তন্দুরি রুটি বা চাপাটি? না।

এই প্রশ্নগুলো নিয়ে বিরাট কোহালির কাছে একটা চেকলিস্ট পাঠানো হলে তার উত্তরগুলো কী হতে পারে, তা উপরে দেওয়া হল।

এগুলোই যে তাঁর অসামান্য ফিটনেসের রহস্য।

সপ্তাহে পাঁচ দিন কঠিন ওয়ার্ক আউট করার পাশাপাশি ভারতীয় অধিনায়ক তাঁর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে এতটাই সচেতন, তা নাকি নিজে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।

যাঁরা কাছ থেকে দেখেন এই বিরাট সংযম, তাঁদেরই কথা এটা। দশ বছর আগেও যাঁরা বিরাটকে নিয়মিত দেখেছেন, তাঁরা আরও বিস্মিত ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেনের এই অতিসংযমী জীবনে।

এমনই একজন তাঁর ছোটবেলার কোচ রাজকুমার শর্মা। রবিবার যিনি তাঁর অ্যাকাডেমিতে এনে বিরাটকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরে বুঝতে পারলেন, ভারতীয় ক্যাপ্টেন তাজা ফলের রস ছাড়া কিছু খান না। ‘‘বিরাটকে আপনি প্যাকেজড ফ্রুট জুস অফার করুন। ও অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তা ফিরিয়ে দেবে’’, দিল্লি থেকে ফোনে বলছিলেন রাজকুমার। তিনি বলে চলেন, ‘‘ওকে তাজা ফলের রস দিতে হবে। আর একটা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের মিনারেল ওয়াটার। এ ছাড়া ও কিছুই খাবে না।’’

আঠাশের তরুণ ভারতীয় ক্যাপ্টেন সর্বদাই সচেতন তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে। রাজকুমার তাঁর ছাত্রকে নিয়ে বলছেন, ‘‘আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই ওর খাওয়াদাওয়ার কথা শুনে। এই বয়সের একটা ছেলে বছরের একটা দিনও নিজের ডায়েটের নড়চড় করে না, এটা ভাবতেই অবাক লাগে। আমরাও ভাই এই বয়সটা পেরিয়ে এসেছি। এই বয়সের কত ছেলে দেখেছি। বিরাটের মতো এত সংযম দেখা তো দূরের কথা ভাবতেও পারি না। ক্রিকেট না ছাড়া পর্যন্ত এই কঠোর সংযম চলবে ওর।’’

কেমন সেই কঠোর ডায়েট? কোচের কাছেই জানা গেল। বললেন, ‘‘দশ বছর আগেও যে ছেলেটা বাটার চিকেন আর মাটন রোল খেতে ভালবাসত, তাঁর জীবন থেকে যে এগুলো জাস্ট উধাও হয়ে গিয়েছে, এটা ভাবলেই অবাক হয়ে যাই। আবার পরক্ষণেই এও মনে হয় যে, এই অসাধারণ গুণ ওর মধ্যে আছে বলেই তো ও এত সফল, বিশ্বসেরা। ক্রিকেট-প্রতিভা তো ওর মধ্যে ছোট থেকেই আছে। কিন্তু ফিটনেস ধরে রাখার এই সাঙ্ঘাতিক প্রবণতাটা গত কয়েক বছরেই বেড়েছে। এটা আগে ছিল না।’’

রবিবার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে পরে বিরাটের সঙ্গে কথা বলে রাজকুমারের ধারণা হয়েছে, তাঁকে ফিটনেস ফ্যানাটিক বললেও কম বলা হয়, ‘‘ভাবতে পারবেন না কি ত্যাগ আর সংযম ছেলেটার। পঞ্জাবিদের সবচেয়ে পছন্দের রুটি, তাও খায় না ও। পাছে শরীরে কার্বোহাইড্রেট বেড়ে যায়, সেই জন্য। কফি খায় চিনি ছাড়া, ভাবতে পারেন? বেশির ভাগই শুধু সেদ্ধ সব্জি আর চিকেন। এক ফোঁটাও মশলা থাকে না তাতে।’’

কিন্তু কেন এমন ফিটনেস-পাগল ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন? শুধুই কি নিজেকে মাঠে ফিট রাখার জন্য?

না, আরও একটা কারণ আছে। নিজের খেলার গতি বাড়ানোর জন্য। আউট হওয়ার সম্ভাবনা কমানোর জন্যও।

কী ভাবে?

রাজকুমার শর্মার মুখ থেকেই শোনা, ‘‘ও স্ট্যামিনা বাড়াতে চায় যাতে ব্যাট করতে নেমে প্রচুর খুচরো রান নিতে পারে দ্বিগুন গতিতে। প্রতিটা এক রানকে ও দু’রান বানাতে চায়। এটা করলে ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার প্রয়োজন কমে। ফলে আউট হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।’’ ক্রিকেটের কোন অতলে গিয়ে ভাবছেন ভারত অধিনায়ক, সেটাই ভেবে দেখুন।

ভবিষ্যতের ক্রিকেটাররা শুনছেন? ক্রিকেটকে ক্রমশ অ্যাক্রোব্যাটিক করে তুলছেন বিরাট কোহালি। সীমাটা ক্রমশ উপরে, আরও উপরে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। যে সীমায় পৌঁছতে গেলে অমানুষিক সংযমী হতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Virat Kohli Diet Chart Fitness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE