Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আনন্দবাজার এক্সক্লুসিভ

পাকিস্তানকে হারিয়েছি তো কী, এখনই কীসের শ্যাম্পেন

সোমবার সন্ধেয় ডাউনটাউন মেলবোর্নে বসে বললেন রবি শাস্ত্রী। কয়েক ঘণ্টা আগে ক্লান্ত ভারতীয় দল ক্রিকেটের প্রাচীনতম শহরে এসে পৌঁছেছে। টিম ডিরেক্টর কিন্তু হোটেল পৌঁছনো মাত্র ডুবে গিয়েছেন আয়ারল্যান্ড ম্যাচ দেখা এবং রোববারের স্ট্র্যাটেজি-ভাবনায়। তারই মধ্যে সময় দিলেন এবিপি-কে...।সোমবার সন্ধেয় ডাউনটাউন মেলবোর্নে বসে বললেন রবি শাস্ত্রী। কয়েক ঘণ্টা আগে ক্লান্ত ভারতীয় দল ক্রিকেটের প্রাচীনতম শহরে এসে পৌঁছেছে। টিম ডিরেক্টর কিন্তু হোটেল পৌঁছনো মাত্র ডুবে গিয়েছেন আয়ারল্যান্ড ম্যাচ দেখা এবং রোববারের স্ট্র্যাটেজি-ভাবনায়। তারই মধ্যে সময় দিলেন এবিপি-কে...।

গৌতম ভট্টাচার্য
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৮
Share: Save:

প্রশ্ন: আপনি রামিজ রাজা হলে কাল প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনের সময় বিরাট কোহলিকে কী জিজ্ঞেস করতেন?

শাস্ত্রী: এক মিনিট একটু ভাবি...হ্যাঁ, জিজ্ঞেস করতাম তোমার অ্যাডিলেডের সঙ্গে প্রেম তো থামছে না। ব্যাপারটা কী? আর বলতাম, এই মাঠে চারটে সেঞ্চুরির পরে তোমায় একটা উপাধি দিতে চাই মেয়র অব অ্যাডিলেড। নেবে তো?

প্র: ড্রেসিংরুমে শোনা যায় আপনার সঙ্গে কোহলির বিশেষ বোঝাপড়া রয়েছে। বিরাটের সাফল্যের রহস্যটা কী দেখছেন?

শাস্ত্রী: প্রচণ্ড খাটে। দুর্ধর্ষ ওয়ার্ক এথিক। এমনিতেই ট্যালেন্টেড। তার ওপর খাটনি। আর অদম্য জেদ যে, আমায় শুধু জিতলে হবে না, ডমিনেট করতে হবে। নইলে মজা নেই। এই তিনটে জিনিস মিলে বিরাট কোহলি! এই জন্যই ও বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান।

প্র: তিন জনকে নিয়ে আপনি ইংল্যান্ড সফর থেকে পড়ে আছেন। কোহলি, রায়না আর ধবন। তিন জনই কাল পারফর্ম করেছেন।

শাস্ত্রী: কী বলছিলাম! ধবন আমি জানতাম বড় রানে আসবেই। বেচারা একটা ছোট ভুল করছিল আর দুর্ভাগ্যে বারবার তাতেই আউট হয়ে যাচ্ছিল। ইংল্যান্ডের সঙ্গে যে দিন ও ৪০ করল সে দিনই জানি, বিশ্বকাপে ভাল খেলবে। আর রায়না তো বরাবরই এই সব সিচুয়েশনে খুব পোড়খাওয়া। কী দারুণ ইনিংসটাই না খেলল।

প্র: মিয়াঁদাদের কলাম পড়লেন নাকি নেটে?

শাস্ত্রী: না তো! জাভেদ কী লিখেছে?

প্র: পাকিস্তান টিমকে খুব গালাগাল দিয়ে মিয়াঁদাদ কলামে বলা আছে, প্রচুর ভুল হয়েছে দল নির্বাচন থেকে শুরু করে ব্যাটিং অর্ডার বাছা সর্বত্র। আফ্রিদিকে ওপেন করতে পাঠানো উচিত ছিল। আপনিও কি ইউনিসকে ওপেনে নামতে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছিলেন?

শাস্ত্রী: আমি তখন ভাবিইনি। আমার নিজের টিম নিয়ে চিন্তা ছিল।

প্র: কী বলছেন ৩০০ করেও চিন্তা?

শাস্ত্রী: অফকোর্স। তিনশো তো ওয়েস্ট ইন্ডিজও আজ করেছিল। হেরে গেল কেন? আমাদের জেতার জন্য ভাল বল করতে হয়েছে। ব্যাপারটা মোটেও এত সহজ ছিল না যে, তিনশো করলাম আর ড্যাংড্যাং করে জিতে গেলাম।

প্র: ধোনিকে কাল অনেক দিন বাদে প্রেস কনফারেন্সে খুব ঝকঝকে দেখাল।

শাস্ত্রী: হ্যাঁ, এমএস কাল খুব ভাল ক্যাপ্টেন্সি করেছে। ঠিক জায়গায় বারবার ক্যাচের জন্য লোক আনা। চাপের মুখে ঠিকঠাক ফিল্ডিং বদলে যাওয়া। আর ড্রেসিংরুমটা ও ঠান্ডা রাখতে পারে এই রকম হাইপ্রেশার ম্যাচে যেটা দরকার হয়।

প্র: ম্যাচের পর কোনও পার্টিটার্টি হল না?

শাস্ত্রী: না। হোটেল ফিরতে ফিরতেই এত দেরি হয়ে গেছিল। তার পর আর সুযোগ ছিল না। দুপুরে তাড়াহুড়ো করে ফ্লাইট ধরতে এলাম। সময়ই হয়নি।

প্র: সে তো আজ রাতেও হতে পারে! পাকিস্তানকে হারানো বলে কথা! একটা শ্যাম্পেনের বোতল-টোটল খোলা হবে না?

শাস্ত্রী: সবে একটা ম্যাচ জিতেছি দু’পয়েন্ট হল। এখন শ্যাম্পেন কীসের? ওয়ার্ল্ড কাপ এখনও বহু দূর। আরে ভাই, আমরা তো আর কাপ জিতিনি। পাকিস্তানকে হারিয়েছি।

প্র: আয়ারল্যান্ডের জেতা তো গ্রুপটা আরও খুলে দিল। পাঁচটা টিমের যে কোনও চারটে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারে!

শাস্ত্রী: ইয়েস খুলে গেল। আরও লড়াই বাড়বে। সে জন্যই বলছি একটা ম্যাচ জিতে নাচানাচির কী আছে!

প্র: টানা অস্ট্রেলিয়ায় চাপের মুখে হারতে হারতে টিমটা এত বড় ম্যাচে আলোয় ফিরল কী করে? আমাদের তো মনে হচ্ছিল মেন্টালি বুঝি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

শাস্ত্রী: আমার মনে হয় মাঝখানে ৮-১০ দিনের গ্যাপটা খুব সাহায্য করেছে। সবাই নিজেকে নিয়ে শান্ত মনে ভাবার সুযোগ পেয়েছে। লম্বা অস্ট্রেলিয়া ট্যুর আসলে খুব টাফ হয়ে যায়। মনের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। আর আপনারা যেটা খারাপ ফল বা হতাশজনক বলছেন, আমি তো কিছু দেখিনি।

প্র: কেন?

শাস্ত্রী: কারণ সিরিজে ০-২ পিছিয়ে পড়ার পর যে ভাবে লড়াই করে ওরা বাকি দু’টো টেস্ট ড্র করেছে, সেটা দারুণ। এখানে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। যে দু’টো আমরা হেরেছি তার একটা অ্যাডিলেডে তো আমরা জিততে পারতাম। তা হলে জঘন্য কোথায়? আমায় দেখান তো!

প্র: কেন ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজ একটা ম্যাচও আমরা জিতিনি!

শাস্ত্রী: ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজটা ফালতু ছিল। জাস্ট সময় নষ্ট। আসল হল ওয়ার্ল্ড কাপ। ওয়ার্ল্ড কাপে আপনি কী করলেন, তা দিয়েই আপনাকে মাপা হবে।

প্র: এই যে টানা ছয় বার ভারতের কাছে পাকিস্তান বিশ্বকাপে হারল, ব্যাখ্যাটা কী?

শাস্ত্রী: ব্যাখ্যাটা খুব সহজ আমাদের ছেলেদের নার্ভের জোর বেশি। এই ম্যাচটা যে যত ঠান্ডা থাকতে পারবে, সে তত ভাল খেলবে। আমরা সেটা বারবার করতে পেরেছি।

প্র: এই টিমে আদ্ধেক ছেলেই আগে বিশ্বকাপ খেলেনি। তারা পাকিস্তানের মতো জাঁদরেল প্রতিদ্বন্দ্বী দেখে যে ঘাবড়ায়নি এটা কী করে সম্ভব হল?

শাস্ত্রী: ওদের সে ভাবে তৈরি হতে বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, নিজের বিশ্বাস থেকে কখনও সরে না যেতে। এই সব ম্যাচে সেলফ বিলিফটাই আসল।

প্র: কিন্তু একটা সময় তো মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কার পর এমন উল্টো পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে গেছিল যে, পাকিস্তান ম্যাচ থাকলেই ভারত হারবে!

শাস্ত্রী: আবার তার ঠিক আগে যদি দেখেন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব ক্রিকেট আর শারজা মিলে তিন বার আমরা ওদের হারিয়েছি। আমরা একটা পিরিয়ডে ওদের কাছে হারছিলাম ঠিকই সেটা শারজাতে পরপর। তখন পাকিস্তানের টিমটাও দারুণ ছিল।

প্র: এ বার সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। কী মনে হচ্ছে?

শাস্ত্রী: ওরা খুব ভাল টিম। অনেক অলরাউন্ডার আছে। কিন্তু আমরা জেতার জন্য ঝাঁপাব। এখন বিশ্বে তিনটে ভাল ওয়ান ডে টিম আছে। অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা আর ইন্ডিয়া। এদের মধ্যে খেলা হলে যে কোনও রেজাল্ট যে কোনও দিন হতে পারে।

প্র: ভারত হারাতে পারে বলছেন অস্ট্রেলিয়ার মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে?

শাস্ত্রী: কেন নয়? যে দিন আমার টিমের সবাই ফর্মে খেলবে, পৃথিবীর কোনও দেশ সমস্যা নয়।

প্র: এগুলো এখন পাকিস্তানকে হারিয়ে বলছেন। পাকিস্তান ম্যাচের আগে আপনাদেরও গলা শুকিয়ে গেছিল।

শাস্ত্রী: মার্ক নিকোলাসের নম্বরটা দিচ্ছি। ওকে একটু জিজ্ঞেস করুন তো কাল প্রি-ম্যাচ শো-এ রবি কি তোমায় বলছিল যে আমরা ফর্মে খেললে অস্ট্রেলিয়াও সমস্যা নয়? নইলে যারা শো-টা দেখেছে তাদের কাছে জানতে চান না আমি ম্যাচের আগেই কথাটা বলেছিলাম কি না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE