Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ব্যাটিং তাণ্ডবের বিশ্বকাপে বোলারদের দিন

অশ্বিন নিয়ে স্বস্তির মধ্যেও ভয় হচ্ছে স্টার্ককে দেখে

গত সপ্তাহের ব্যাটিং ঝড়ের পর শনিবারটা বোলারদের দিন হয়ে থাকল। পরপর তিনশো প্লাস স্কোরের ধারা ভেঙে দেওয়া আজকের দিনটা সত্যিই অন্য রকম। ভারত-আরব আমিরশামি ম্যাচের রেজাল্ট কী হতে পারে, দু’দিনের ক্রিকেট ভক্তও বলে দিতে পারবে। তবে এই ম্যাচটা নিয়ে আগ্রহ ছিল অন্য জায়গায়। কয়েকটা জিনিস দেখে নিতে চেয়েছিলাম। এক নম্বর, টিমটার বোলিং। যেটা নিয়ে বিশ্বকাপের আগে সবচেয়ে বেশি চিন্তা ছিল। আর দুই, মাসদুয়েক পরে ভুবনেশ্বর কুমারের প্রত্যাবর্তন।

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

গত সপ্তাহের ব্যাটিং ঝড়ের পর শনিবারটা বোলারদের দিন হয়ে থাকল। পরপর তিনশো প্লাস স্কোরের ধারা ভেঙে দেওয়া আজকের দিনটা সত্যিই অন্য রকম।

ভারত-আরব আমিরশামি ম্যাচের রেজাল্ট কী হতে পারে, দু’দিনের ক্রিকেট ভক্তও বলে দিতে পারবে। তবে এই ম্যাচটা নিয়ে আগ্রহ ছিল অন্য জায়গায়। কয়েকটা জিনিস দেখে নিতে চেয়েছিলাম। এক নম্বর, টিমটার বোলিং। যেটা নিয়ে বিশ্বকাপের আগে সবচেয়ে বেশি চিন্তা ছিল। আর দুই, মাসদুয়েক পরে ভুবনেশ্বর কুমারের প্রত্যাবর্তন।

ভুবিকে দেখে তো মনে হল বেশ ভাল ছন্দেই আছে। কিন্তু মুশকিল হল, ওকে প্রথম এগারোয় রাখার জায়গাই পাচ্ছি না। ভেবে দেখুন, কাকে বাদ দিয়ে ভুবিকে টিমে রাখা হবে? শামি এখন টিমের প্রধান স্ট্রাইক বোলার। উমেশ একটু আলাদা ঘরানার পেসার, তাই ওকেও বাদ দেওয়া যাবে না। একমাত্র অপশন হল মোহিত শর্মা। কিন্তু আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়ার ফ্ল্যাট ব্যাটিং উইকেটে মোহিতই টিমের বেশি কাজে আসবে। কারণ ওর হাতে বৈচিত্র বেশি। তাই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এখন ভুবিকে টিমে না নেওয়াই বরং ভাল।

ভারতীয় বোলিং নিয়ে আজকের পর চিন্তা সত্যিই অনেক কমে গেল। মানছি আমিরশাহির ব্যাটিং লাইনআপ ওদের কোনও চ্যালেঞ্জ দিতে পারেনি। কিন্তু কিলার ইনস্টিঙ্কট বলেও একটা ব্যাপার আছে। যেটা এ দিন ভারতের বোলিংয়ে বেশ ভাল ভাবে চোখে পড়ল। ওরা এক বারের জন্যও ঢিলে দেয়নি। প্রথম থেকে শেষ পেশাদারিত্ব দেখিয়ে ম্যাচটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করে দিয়েছে। এ রকম ম্যাচেও ওদের তীক্ষ্নতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠা উচিত নয়। বিশেষ করে জাডেজা আর অশ্বিনের বোলিং। দেখুন, কে ক’টা উইকেট পেল তার চেয়েও আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে সে বলটা কোথায় করল। বলের উপর কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারল। সেই বিচারে বলব, অশ্বিন দুর্দান্ত বল করেছে। ওর অফস্পিনে আরও বৈচিত্র দেখলাম। বলের ঘূর্ণি, সিম পজিশন একেবারে নিখুঁত।

কাউকে কাউকে বলতে শুনলাম, বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ভারতকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জিততে হয়নি। বড় টার্গেট তাড়া করতে হয়নি। তিনটে জয়ই এসেছে খুব সহজে। তাই দলটার রগড়ানি এখনও সে ভাবে হয়নি। হ্যাঁ, হয়নি সেটা ঠিকই। কিন্তু এতে কারও কিছুই করার নেই। তা হলে তো আজ আরবকে বড় স্কোর করতে দেওয়ার জন্য ধোনিকেই বল করতে হত! এ সব নিয়ে না ভেবে ভারতের পেশাদার পারফরম্যান্সটা উপভোগ করাই বরং বেশি ভাল।

শুধু একটা জিনিস খচখচ করছে। আগেও কয়েক বার লিখেছি, ধোনি এই ম্যাচগুলোয় ওপরের দিকে ব্যাট করলে ভাল হত। প্রায় মাসতিনেক সে ভাবে ওয়ান ডে-তে ব্যাটিং পায়নি ও। কেন জানি না ওকে দেখে মনে হচ্ছে, এই ধোনি সেরা ফর্মে থাকা ধোনি নয়। ওকে কয়েকটা বড় শট খেলতে দেখলে তাই অনেকটা আশ্বত লাগত। নেটে ব্যাট করছি ভেবে আজ অন্তত ধোনি তিনে নামতে পারত। আর কিছু না, অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ম্যাচ প্র্যাকটিসটা অন্তত পেত। না হলে জাডেজাকেও তিনে নামিয়ে দেখে নিতে পারত।

ধোনিকে নিয়ে একটু খচখচানি থাকলেও আজ বিশ্বকাপের আর এক ক্যাপ্টেনকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ব্যাটটা যে রকম আগ্রাসী, প্রো-অ্যাক্টিভ, ওর নেতৃত্বও ঠিক সে রকম। যে ভাবে এক-একটা বোলিং চেঞ্জ করে গেল, সেটা থেকে বাকি ক্যাপ্টেনরা শিখতে পারে। পাওয়ার প্লে-তে ডেভ ওয়ার্নারের জন্য ও নিয়ে এল ড্যানিয়েল ভেত্তোরিকে। ক্রিকেটের একটা বেসিক ব্যাপার হল, বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বাঁ-হাতি বোলার না দেওয়া। ম্যাকালাম উল্টোটাই করল। সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলারকে নিয়ে এল উইকেট তুলতে। কারণ ও জানত, তিরিশ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ১২০-১ মানে সাড়ে তিনশোর উপর রান ওঠা অস্বাভাবিক নয়। আবার পাওয়ার প্লে শেষ হতেই আনল টিম সাউদিকে। যে পুরনো বলে সুইংটা করাতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার চার-পাঁচটা উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও কিন্তু ম্যাকালাম অনিয়মিত বোলার আনেনি। স্ট্রাইক বোলারকে দিয়ে বল করিয়ে চাপটা রেখে গিয়েছে। সত্যি, ক্যাপ্টেন্সির মাস্টারক্লাস!

ট্রেন্ট বোল্ট দুর্দান্ত বল করল, কিন্তু আমার কাছে সত্যিকারের ভয় ধরিয়ে দেওয়া বোলার মিচেল স্টার্ক। ওর যে দুটো বলে নিউজিল্যান্ডের শেষ দুটো উইকেট পড়ল, ওগুলো আনপ্লেয়বল। ভুলে যাবেন না, গত ছ’মাস ধরেই ও এ রকম গনগনে ফর্মে আছে। তাও ভাল যে, অন্তত সেমিফাইনাল পর্যন্ত ওর সামনে পড়ছে না ধোনিরা। উফ, কী ম্যাচই না হল! বিশ্বকাপের সূচি হাতে পাওয়ার পর থেকে এই ম্যাচটার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম। কাপ ফেভারিট দুই দেশ ফেভারিটের মতোই খেলল। এবি ডে’ভিলিয়ার্স বা ক্রিস গেইলের রান-তাণ্ডব ছিল না। তাতে উত্তেজনা একটুও কম পড়েছে? বিশ্বকাপ ম্যাচ তো এ রকমই টানটান থ্রিলার হবে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আমিরশাহি ১০২ (শাইমান ৩৫, অশ্বিন ৪-২৫), ভারত ১০৪-১ (রোহিত ৫৭*)।

অস্ট্রেলিয়া ১৫১ (হাডিন ৪৩, বোল্ট ৫-২৭), নিউজিল্যান্ড ১৫২-৯ (ম্যাকালাম ৫০, স্টার্ক ৬-২৮)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE