হতাশ: শুরুতেই ধাক্কা। ১-১ ড্রয়ের পরে নেমার। ছবি: রয়টার্স
ব্রা-সি-ল, ব্রা-সি-ল বলে রস্তভ মেট্রো স্টেশনের বাইরে ড্রামের তালে তালে নাচছিলেন পাঁচ ব্রাজিলীয় সুন্দরী। ঘড়ির কাঁটায় স্থানীয় সময় তখন দুপুর দু’টো। পরনে সেই জনপ্রিয় হলুদ জার্সি। পিঠে লেখা নেমার। জার্সির নম্বরও দশ। জার্সিতে জ্বলজ্বল করছে ইংরেজিতে লেখা কথাটা। যা বাংলা করলে দাঁড়াচ্ছে—‘তিতে তুমিই সেরা। তুমি গুয়ার্দিওলার চেয়েও বড় কোচ।’
সকাল সাতটার সময় মস্কোর হোটেল থেকে বেরিয়ে স্থানীয় সময় দুপুর দু’টোয় রস্তভ-এ নেমেছিলাম। হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা পেরিয়ে এসেছিলাম সাম্বা ফুটবলের আকর্ষণেই। পর্তুগিজ ভাষায় যাকে ব্রাজিলীয়রা বলে ‘জোগো বোনিতো’। অর্থাৎ সুন্দর ফুটবল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারলাম কোথায়? যে উচ্ছ্বাস নিয়ে ব্রাজিল সমর্থকরা মাঠ ভরিয়েছিলেন, সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ ১-১ শেষ হওয়ায় মুখ গম্ভীর করেই বাড়ি ফিরলেন তাঁরা।
মস্কো থেকে টিউব রেলে ওঠার পরেই বুঝেছিলাম, রজার ফেডেরারের দেশের সমর্থকদের সংখ্যায় হারিয়ে দেবেন ব্রাজিলীয়রা। লাল জার্সির সুইসদেরও চোখে পড়ছিল। তবে সংখ্যায় অত নয়। সারা দুনিয়াতেই যেটা প্রত্যাশিত, এখানেও তেমনই ব্রাজিলীয়রা অনেক সংখ্যায় বেশি।
কিন্তু রস্তভ স্টেশনে নেমে মনে হচ্ছিল, রবিবার গোটা শহর থেকেই যেন রুশদের সরিয়ে দিয়েছে ব্রাজিলীয়রা। স্টেশন থেকে বেরিয়ে যেদিকেই তাকাই দেখি হলুদ আর হলুদ। হঠাৎ দেখলে মনে হবে ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমায় দেখানো সর্ষে খেতটাই পুরো তুলে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এই শহরে। বাজনার তালে তালে ব্রাজিল সমর্থকরা কোমর দোলাচ্ছিলেন। সঙ্গে পর্তুগিজ ভাষায় নানা স্লোগান। কেবল বোধগম্য দু’টি শব্দ কানে আসছিল—নেমার ও হেক্সা। ষষ্ঠ বিশ্বকাপ চাই, বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ওঁরা।
স্থানীয় সময় রাত ন’টায় ছিল ম্যাচ। বিকেল চারটে থেকেই দেখা গেল সেই হলুদ স্রোত স্টেডিয়ামমুখী। চার বছর আগে ব্রাজিলে গিয়েও নেমারদের প্রথম ম্যাচ দেখেছিলাম। কিন্তু সে দিন ব্রাজিলের ট্যাক্সিচালক থেকে মেট্রোর মোটরম্যান সবার পরনেই দেখেছিলাম সেই হলুদ জার্সি। তফাৎ হল এ দিন রস্তভে হলুদের মাঝে ছিল সুইস সমর্থকদেরও লাল জার্সির ভিড়।
উল্লাস: গোলের পরে সুইৎজারল্যান্ডের জুবের। ছবি: গেটি ইমেজেস
ঘড়ির কাঁটায় রাত আটটা বাজতেই ঢুকে পড়েছিলাম স্টেডিয়ামে। জায়ান্ট স্ক্রিনে তখন দেখাচ্ছে জার্মানি বনাম মেক্সিকো ম্যাচ। গত বার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ১-৭ হারানো চ্যাম্পিয়ন দেশ হারছে। গ্যালারিতে পাশে বসা দু’একজন ব্রাজিল সমর্থককে জার্মানি, সাত গোল বলতেই চারপাশের দু’একজন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কী সব যেন বললেন। ভাবটা এ রকম যেন— এ আবার কোথা থেকে এল রে! তার পরে নিজেরাই সামনের আসন থেকে ডেকে আনলেন রিকার্দো বলে এক জনকে। ভদ্রলোক ইংরেজি জানেন। আমার কথা শুনেই তাচ্ছিল্য ভরে অট্টহাসি করতে শুরু করে দিলেন। দেশোয়ালি বন্ধুদের আমার কথা পর্তুগিজে বলতে তারাও হাসতে শুরু করে দিলেন। এ বার রিকার্দো স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, ‘‘ওই দেখ জার্মানি।’’ বলেই হাসতে শুরু করে দিলেন। আর জার্মানরা শেষ পর্যন্ত হারতেই ব্রাজিল সমর্থকেরা এমন শব্দব্রহ্ম সৃষ্টি করলেন, যা শুনলে মনে হবে ব্রাজিল বিশ্বকাপটাই জিতে গিয়েছে।
তবে ব্রাজিলের সেই হাসি-আনন্দ শেষ পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। নিজেদের ম্যাচ ড্র হতে তাঁদেরও মাঠ ছাড়তে দেখা গেল হতাশ মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy