মহড়া: পর্তুগালের অনুশীলনে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। রবিবার। ছবি: এএফপি।
দু’জনেরই এটা চার নম্বর বিশ্বকাপ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে কার্লোস কুইরোজের সম্পর্ক প্রায় পনেরো বছরের। তরুণ প্রতিশ্রুতিমান হিসেবে যখন তিনি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে সই করলেন তখন কুইরোজ ছিলেন স্যর আলেক্স ফার্গুসনের সহকারী। পরে তিনি রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিলে অল্প কিছু দিনের জন্য সেখানেও কুইরোজকে তিনি কোচের ভূমিকায় পেয়েছেন।
২০১০ বিশ্বকাপে রোনাল্ডোর সঙ্গে কুইরোজের সম্পর্ক খুব খারাপ হয়ে যায়। সে বার দ্বিতীয় রাউন্ডে ছিটকে গিয়েছিল পর্তুগাল। এবং সেই ভরাডুবির পরে তিনি একেবারে সরাসরি ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেন কুইরোজকে।
তার পর আবার দু’জনের দেখা হচ্ছে রাশিয়ায়। এ বার কুইরোজ ইরানের কোচ। সোমবার ইরানের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে রোনাল্ডোর পর্তুগাল। সেই রোনাল্ডো। যাঁর ব্যর্থতার সৌজন্যে ব্রাজিল বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে গিয়েছিল পর্তুগাল। অথচ এ বার তিনি দুরন্ত ফর্মে। এই বিশ্বকাপে যে চারটি গোল পেয়েছে তাঁর দেশ, তার সব ক’টিই করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো।
ইরান ম্যাচের আগে মহাতারকা রোনাল্ডোকে বলতে শোনা গেল, ‘‘সবাই বুঝতেই পারছে আমরা পরের রাউন্ডে প্রায় পৌঁছেই গিয়েছি। কিন্তু গ্রুপ স্তরেই আমাদের খেলায় আরও উন্নতি করতে হবে। কারণ এর পর আর উন্নতির কোনও সুযোগ থাকবে না। তাই ইরানকেও হারাতে হবে।’’
রোনাল্ডো কিন্তু একবারও কুইরোজের নাম করেননি। পর্তুগালের এখনকার কোচ ফের্নান্দো স্যান্টোসও পূর্বসুরির প্রসঙ্গে একদম চুপচাপ। তাঁর যাবতীয় উচ্ছ্বাস রোনাল্ডোকে নিয়েই। ‘‘ক্রিশ্চিয়ানো হল পোর্ট ওয়াইন,’’ মন্তব্য স্যান্টোসের। এই কড়া পানীয় যত পুরনো হয় তত নাকি বেশি উত্তেজক হয়ে ওঠে।
শুধু তো স্যান্টোস নন। বিশ্বের অন্য কোচেরাও রোনাল্ডোকে নিয়ে গদগদ। এমনকি আতলেতিকো দে মাদ্রিদের কোচ দিয়েগো সিমিওনে পর্যন্ত সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁকে যদি লিয়োনেল মেসি আর রোনাল্ডোর মধ্যে এক জনকে বেছে নিতে হয়, তা হলে তিনি ‘পর্তুগিজ বিস্ময়’কেই বেছে নেবেন। আর পর্তুগাল দলে রোনাল্ডোর সতীর্থ পেপের কথা, ‘‘আমাদের দলে পাঁচ বার ব্যালন ডি’ওর জিতেছে এমন এক জন খেলে। আমি নিজেকে তাই সেই দলের সদস্য হিসেবে ধন্য মনে করি।’’
স্পেনের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকের পরে বের্নাদো সিলভার মন্তব্য, ‘‘কে বলবে ওর বয়স বাডছে! লোকের বয়স বাড়লে খেলা খারাপ হয়। আমরা তো দেখছি উল্টে ক্রিশ্চিয়ানো প্রতিদিন উন্নতি করে যাচ্ছে। সত্যিই এটা অবিশ্বাস্য।’’
২০০৬ সালের বিশ্বকাপে পর্তুগাল শেষ বার ইরানের সঙ্গে খেলেছিল। সে বার পর্তুগাল জেতে ২-০ গোলে। রোনাল্ডো পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন। এখন দেখার সোমবার ইরানের বিরুদ্ধেও তিনি গোল পান কি না। পর্তুগাল কিন্তু ইরান ম্যাচে পাচ্ছে না জোয়াও মৌতিনোকে। এটার জন্য অবশ্য রোনাল্ডোরা বিরাট কিছু অসুবিধায় পড়বে বলে মনে করছেন না ফুটবল পণ্ডিতেরা।
কারণ ইরানের বিরুদ্ধে ড্র করলেই শেয ষোলো নিশ্চিত হবে ইউসেবিয়োর দেশের। আর পর্তুগালকে হারাতে পারলে নকআউটে চলে যেতে পারে ইরান। তেমন কিছু হওয়া কি সম্ভব? ইরানের কোচ, রোনাল্ডোর প্রাক্তন গুরু কুইরোজ বলছেন, ‘‘আমি শেষ সাত বছর ইরান দলটাকে নিয়ে পড়ে আছি। আমার মনে হয় সোমবারই এখানে আমার ফুটবল জীবনের সব চেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচটা খেলতে নামছি। জানি পর্তুগালকে হারানো কঠিন। কিন্তু তা বলে স্বপ্ন দেখতে পারব না, তা তো হতে পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy