Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কোথাও মিষ্টি, কোথাও ঘুড়ি, কলকাতা মেসি-নেমারময়

আর্জেন্তিনা সমর্থকের ভুলটা ভেঙে দিলেন দোকানের কর্মীরাই। বলে দিলেন, ‘‘এই মেসি-রোনাল্ডো-নেমার ক্ষীরের। আর কাপটা নলেন গুড়ের। বিশ্বকাপের বাজারে নতুন চমক।’’

উন্মাদনা: কলকাতায় খুদে সমর্থকদের মাতামাতি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উন্মাদনা: কলকাতায় খুদে সমর্থকদের মাতামাতি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৮ ০৪:৪৩
Share: Save:

মেসি আর রোনাল্ডোকে নিয়ে এসেছি। বিশ্বকাপ তৈরিই আছে। বৃহস্পতিবার সকালে আসবে নেমার।

বুধবারের বিকেল। ঘড়ির কাঁটায় চারটে। ভবানীপুরের বিখ্যাত মিষ্টির দোকানের কর্তা সুদীপ মল্লিকের এই কথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মিষ্টি কিনতে আসা খদ্দের।

আর্জেন্তিনা সমর্থকের ভুলটা ভেঙে দিলেন দোকানের কর্মীরাই। বলে দিলেন, ‘‘এই মেসি-রোনাল্ডো-নেমার ক্ষীরের। আর কাপটা নলেন গুড়ের। বিশ্বকাপের বাজারে নতুন চমক।’’ বর্ষা কলকাতায় ঢুকে পড়েছে ইতিমধ্যেই। তবে এখনও শুরু হয়নি বর্ষার মরসুমে ভাইরাল-জ্বরের দৌরাত্ম্য। কিন্তু তার আগেই বিশ্বকাপ জ্বর কলকাতাকে কাবু করে ফেলেছে। শুধু বিশ্বকাপ মিষ্টিই নয়। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে তৈরি হচ্ছে বিশ্বকাপ ঘুড়িও। পেটকাটি-চাঁদিয়াল-মোমবাতি-বগ্গার পরিবর্তে ব্রাজিল, ফ্রান্স, পর্তুগাল কিংবা আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকা। কোনও কোনও ঘুড়িতে আবার জ্বলজ্বল করছেন মেসি-নেমার-রোনাল্ডোও। সঙ্গে চলছে ময়দান মার্কেট ও শপিং মলে প্রিয় দলের জার্সি কেনার হিড়িক। তবে টিভি বিক্রির বাজার এ বার তেমন জোরালো নয়।

ডানলপ থেকে ডায়মন্ড পার্ক কিংবা ব্যাঁটরা থেকে বিধাননগর সর্বত্রই প্রবল এই বিশ্বকাপ জ্বর। যার প্রভাবে শহরের কোথাও মিনি বুয়েনস আইরেস, কোথাও বা এক টুকরো সাও পাওলো বা রিয়ো। কোথাও কোথাও আবার জার্মান সমর্থকরা পাড়া সাজিয়েছেন লাল-হলুদ-কালো পতাকায়। নিউআলিপুর, গাঙ্গুলিবাগান, বাগবাজারে উড়ছে আর্জেন্তিনার পতাকা, সরশুনায় চোখে পড়ল জার্মানি। আর বালিগঞ্জ, বিধাননগর, কসবা, চেতলা, সিঁথি চত্বরে দাপট ব্রাজিল সমর্থকদের। সব জেনে খুশি কলকাতায় নিযুক্ত রুশ কনসাল আলেক্সিন ইদামকিন। কলকাতাকে পাশে চেয়ে বলছেন, ‘‘কলকাতা ফুটবলের শহর। জানতাম এই আবেগ-বিস্ফোরণ দেখব। বৃহস্পতিবার রাতে লুঝনিকি স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে রাশিয়া। সেই ম্যাচে কলকাতার সমর্থন চাই।’’

চব্বিশ ঘণ্টা পরে কলকাতা দস্তয়েভস্কি, লেনিনের দেশের পাশে থাকবে কি না, তা সময় বলবে। আপাতত কলকাতা তিন ভাগ। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও জার্মানির সমর্থকে। সরশুনার বাসিন্দা বিমল রায় পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। ন’জনের পরিবার নিয়ে থাকেন বার্লিনে। বুধবার দুপুরে সেখান থেকেই ভিডিয়ো কলে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘গত বিশ্বকাপে এই সময়ে কলকাতায় ছিলাম। বাড়িটাকে জার্মানির পতাকা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলাম। এ বার জার্মানিতে রয়েছি। তবে কলকাতার বাড়িতে জার্মান পতাকা উড়ছে। কাপ আমাদেরই থাকবে।’’

শুনে হাসেন বেহালা চৌরাস্তার আদ্যন্ত ব্রাজিল সমর্থক রতন হালদার। যিনি নিজের শোওয়ার ঘরটাই সাজিয়ে ফেলেছেন নেমার, ফির্মিনোদের পোস্টার ও ফেস্টুন দিয়ে। বাড়ির মেঝে আবার বানিয়েছেন ফুটবল মাঠের মতো করে। নকল বিশ্বকাপ হাতে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে সৌমিলিকে পাশে নিয়ে বলে দেন, ‘‘রাশিয়া যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য নেই তো কী হয়েছে। নিজের ঘরটাকেই স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেলেছি। এখানে বসেই দেখব ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়। জার্মানি, আর্জেন্টিনা সব উড়ে যাবে নেমারের সামনে।’’ রতনের মতোই ব্রাজিল-অন্ত প্রাণ গোপালনগর কল্যাণ সঙ্ঘের রোহিত এবং শাকিল। বিকেল চারটের সময় সেখানে গিয়ে দেখা গেল দু’জনে মিলে আলিপুর ট্রেজারি বিল্ডিংয়ের পাশের দেওয়াল রাঙিয়ে তুলছেন ব্রাজিলের জাতীয় পতাকায়। যে দেওয়াল চিত্রের একপাশে নেমার আর এক পাশে মার্সেলোর ছবি আঁকা। রোহিত বলেন, ‘‘বিশ্বকাপ মানেই তো ব্রাজিল। আমাদের তো আর হাত দিয়ে গোল করতে হয় না।’’

একই পাড়ার মিঠুন শর্মারা আবার মেসি ভক্ত। একটু দূরেই তৈরি করেছেন ‘মিনি আর্জেন্টিনা’। মেসি, মারাদোনা, বুরুচাগা, মারিয়ো কেম্পেসদের ছবি দিয়ে গেট বানিয়েছেন। মিঠুন বলেন, ‘‘একটা কৃত্রিম মাঠ তৈরি করছি। সেখানে পর্দা টাঙিয়ে গোটা পাড়ার আর্জেন্টিনা সমর্থকরা খেলা দেখব। কাপ নেবে মেসি। আর ব্রাজিল সমর্থকরা বসে আবার সেভেন আপ খাবে।’’ একই ছবি গাঙ্গুলিবাগান রবীন্দ্রপল্লীতে। সেখানে আর্জেন্টিনা ফ্যান ক্লাব তৈরি করে ফেলেছে মঞ্চ। যে মঞ্চের মাথায় বিশ্বকাপ। তার সামনে মেসি। পিছনে রোনাল্ডো, নেমাররা। ক্লাবের প্রধান উত্তম সাহা বলছেন, ‘‘ও সব ‘ব্রাজিল-ব্রাজিল’ চিৎকার থেমে যাবে ১৫ জুলাই। মস্কো থেকে সে দিন কাপটা নিয়ে আর্জেন্তিনা ফিরবে মেসি।’’

মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ভুলে আগামী এক মাস কলকাতা শুধুই মেসি-নেমারদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE