Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Sport News

‘জার্মান বাঙ্কার ভেঙে দিল মেক্সিকান ঢেউ, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হার’

শনিবার রাতে লিওনেল মেসির পেনাল্টি মিস করার পরে যেমন আর্জেন্টিনা অধিনায়কের ব্যর্থতার চেয়ে আইসল্যান্ডের গোলকিপার হ্যালডরসনকে বেশি কৃতিত্ব দিতে চাই। তেমনই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারকে অঘটন না বলে কৃতিত্ব দিতে চাই মেক্সিকানদের।

উচ্ছ্বাস: জার্মানির বিরুদ্ধে মেক্সিকোর প্রথম গোলের পরে হারভিং লোসানো এবং জেসুস গালার্দো। রবিবার লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। ছবি: গেটি ইমেজেস।

উচ্ছ্বাস: জার্মানির বিরুদ্ধে মেক্সিকোর প্রথম গোলের পরে হারভিং লোসানো এবং জেসুস গালার্দো। রবিবার লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। ছবি: গেটি ইমেজেস।

শিশির ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০৩:৫৫
Share: Save:

পরপর দু’বার বিশ্বকাপ জেতার গৌরব আছে শুধু দু’টো দলের। ব্রাজিল এবং ইতালির।

তারপর আর সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি। গত বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে এ বারও তো ধরা হচ্ছিল খেতাব জেতার অন্যতম দাবিদার। তারাই প্রথম ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়ল।

তবে এতে আমি অবাক হইনি। কারণ চার বছরে বিশ্ব ফুটবলের অনেক ছবিই বদলে যায়। খেতাব জেতার পরের বছর বিশ্বকাপে ফের নেমে সফল হয়নি ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনও। ২০১০-এর দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন। কিন্তু ২০১৪-য় ব্রাজিলে নেমে কিছুই করতে পারেনি স্প্যানিশরা। গ্রুপের প্রথম ম্যাচেই হেরেছিল তাঁরা, অত্যন্ত বিশ্রী ভাবে। নেদারল্যান্ডসের কাছে ১-৫ গোলে। শনিবার মস্কোর লুজানিকি স্টেডিয়ামে সেই ফলের পুনরাবৃত্তি হতেই পারত। মেক্সিকো যা খেলল, তাতে তাতে জুয়ান কার্লোস ওসারিওর ছেলেদের ১-০ নয়, অনেক বেশি গোলে জেতার কথা। জার্মানির হারকে তাই অঘটন বলে মানতে রাজি নই। বরং বলব, যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে মেক্সিকো।

শনিবার রাতে লিওনেল মেসির পেনাল্টি মিস করার পরে যেমন আর্জেন্টিনা অধিনায়কের ব্যর্থতার চেয়ে আইসল্যান্ডের গোলকিপার হ্যালডরসনকে বেশি কৃতিত্ব দিতে চাই। তেমনই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারকে অঘটন না বলে কৃতিত্ব দিতে চাই মেক্সিকানদের। অঙ্ক কষা ফুটবল, গতি আর শারীরিক সক্ষমতা দিয়ে যে ভাবে হেমান্ডেজ, লোসানো, ভেলারা জার্মানিকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করল তাকে সেলাম জানাতেই হবে। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরকে হারাচ্ছে পনেরো—এটা বড় ব্যাপার। মাথায় রাখতে বলছি এই মেক্সিকোকেই গত বছর কনফেডারেশন কাপে চার গোল দিয়েছিলেন থোমাস মুলাররা।

গোলটা করার পর লোসানোকে দেখলাম হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছেন মাঠে। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ। ‘পেরেছি’ ভঙ্গি নিয়ে আকাশের দিকে তোলার চেষ্টা করছেন হাত। আর মহার্ঘ জিনিস তুলে নেওয়ার ভঙ্গি যেমন হয়, তেমন ভাবে তাঁর দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন দলেরই এক ডিফেন্ডার—গ্যালার্ডো। গ্যালারিতে তখন শুরু হয়ে গিয়েছে বিখ্যাত ‘মেক্সিকান ওয়েভ’।

গোল সব সময়ই যে কোনও ম্যাচের সবথেকে মহার্ঘ জিনিস। এবং সেই গোল যদি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কোনও দলের বিরুদ্ধে হয়, তা হলে তো কথাই নেই। সেটাই তো পাল্টা আক্রমণে উঠে করে গেলেন লোসানো। গোলের আগে এক সঙ্গে পাঁচ-ছটা পাস খেলল মেক্সিকো। জার্মানির শক্তিশালী রক্ষণকে বোকা বানিয়ে দিয়ে গেল সেই অসাধারণ মুভ।

প্রথমার্ধের পঁয়ত্রিশ মিনিটে বল যখন লো-র দলের গোলে ঢুকছে তখন রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা জার্মান কোচের মুখটা পাংশু। পাশে রাখা বোতল তুলে নিয়ে জল খেলেন। জোসুয়া খিমিচ, জোহোম বোয়াটেং, ম্যাটস হুমেলসদের হাল দেখেই সম্ভবত খেতাব জেতা কোচের গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। হওয়ারই কথা। এত স্লথ রক্ষণ! এত অসংগঠিত। গতিময় মেক্সিকোকে রুখবে কী করে? সব জায়গাতেই মেরে বেরিয়ে যাচ্ছিল মেক্সিকো।

গত বিশ্বকাপে যে দলটা ছিল তারুণ্যে ভরপুর, অপ্রতিরোধ্য, চার বছর পরের সেই দলকে দেখে অবাক হচ্ছিলাম। কী অবস্থা হয়েছে শৃঙ্খলায় মোড়া জার্মান দলটার! ওদের সেই বিখ্যাত জাত্যাভিমান কোথায় গেল? নিজেদের খেলাটাই খেলতে পারছিলেন না মুলার বা খেদিরারা। এক দশকের উপর জার্মানির কোচ আছেন লো। তিনি আড়াআড়ি পাস বা পাল্টা আক্রমণের খেলা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছেন মুলার, মেসুত ওজিলদের। দলে আনতে চেয়েছেন শিল্পের ছোঁয়া। যা খেলে স্পেন। কিন্তু তিকিতাকা খেলার জন্য যে স্কিল দরকার সেটাই তো নেই এই দলটার। শেষ দুটো বিশ্বকাপে যে মুলার দশ গোল করেছিলেন এখন সেই ফুটবলারেরই বা কী অবস্থা।

হিসাব মতো ১-০ নয়, প্রথমার্ধে মেক্সিকোর ৩-০ এগিয়ে যাওয়ার কথা। পর পর আক্রমণের ঝড় তুলে তারা দাঁড়াতেই দিল না চ্যাম্পিয়নদের। বলা যায়, জার্মানি যে অঙ্ক মেনে আগে খেলত, সেই পাল্টা আক্রমণের খেলাতেই বাজিমাত করে গেল মেক্সিকো। গত বিশ্বকাপে সেট পিসে সর্বাধিক পাঁচটা গোল করেছিল জার্মানি। এ দিন টনি খোস একটা ফ্রি-কিক শুধু গোলে ঢোকার অবস্থা তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু মেক্সিকোর গোলকিপার ওচে আসাধারণ দক্ষতায় তা বাঁচালেন। দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফেরার মরিয়া চেষ্টা করেছিল জার্মানি। কিন্তু জেদি, হারব না মনোভাবের মেক্সিকোর রক্ষণ পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকে সব রুখে দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE