উদ্দীপনা: দার্জিলিং ম্যালে ওয়ার্ল্ড কাপ কার্নিভাল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর শেষ হতেই ‘ওয়ার্ল্ড কাপ কার্নিভাল’-এ মেতেছে দার্জিলিং পাহাড়। ম্যাল চৌরাস্তা থেকে ডম্বর চক, সর্বত্রই বিশ্বকাপ ফুটবলের অংশগ্রহণকারী দেশের পতাকার ছড়াছড়ি। অত্যুৎসাহী সমর্থকেরা অনেকে প্রিয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে নাচগানও করছেন। কে কোন দলের সমর্থক তা খোলসা না করলেও ফুটবল নিয়ে মেতে উঠেছেন বিনয় তামাং থেকে শুরু করে মন ঘিসিং, সংযোগ তামাং থেকে ইন্দ্রনারায়ণ প্রধান কিংবা শান্তা চেত্রী, বিন্নি শর্মারাও। সব মিলিয়ে দার্জিলিং এখন ফুটবল জ্বরে কাঁপছে।
শনিবার ম্যাল চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে দক্ষিণ ভারতের ইঞ্জিনিয়র নটরাজন জয়কৃষ্ণানের মতো পর্যটক বললেন, ‘‘গত বছর জুনে দার্জিলিঙের নাম শুনলেই আগুনের ছবি ভাসত চোখের সামনে। গুগল ক্লিক করলেই দেখতাম পুলিশের টহল, তল্লাশি, বনধের সুনসান চেহারা। এ বার মনে হচ্ছে দার্জিলিঙেই বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচ হবে বোধ হয়!’’
যা শুনে ম্যালের অদূরের ঐতিহ্যমন্ডিত রেস্তরাঁর মালিক অজয় এডওয়ার্ড হাসলেন। তিনি বললেন, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতা মাথায় রাখতে হয়। কিন্তু, অতীতকে ভুলে যেতে হয়। আমরা তা ভুলে যেতে চাই। এখন শুধুই সামনের দিকে তাকানোর পালা। ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ে পাহাড়ের চেহারাই বদলে যায়।’’
বস্তুত, ফুটবল, গানবাজনা এটা পাহাড়ের দৈনন্দিন জীবনের বড় অঙ্গ। পাহাড়ি এলাকায় অঢেল মাঠ নেই। তা বলে খেলার মাঠের অভাব হয় না। পাতলেবাসে বিমল গুরুংয়ের বাড়ির পাশেই খেলা হয়। দার্জিলিঙে ম্যালের নীচে চা বাগানের কোলেও প্রাকটিস চলে। স্কুলের মাঠ তো রয়েইছে। কালিম্পঙে তুলনায় মাঠ একটু বেশিই। বরং, কার্শিয়াঙে মাঠের সংখ্যা কম। ফুটবল টিমও কম। তবে সুকনায় ফুটবল খুবই জনপ্রিয়। সেখানে ফি বছর সুকনা গোল্ড কাপ টুর্নামেন্ট হয়। জিটিএ-এর মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের এক মুখপাত্র জানান, সে কথা মাথায় রেখেই বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়ে কার্নিভালের মেজাজ আনতে জিটিএ সবরকম সাহায্য করছে।
বিনয় তামাং ফুটবল ভাসবালেন। বিমল গুরুং, মন ঘিসিং, সংযোগ তামাং সকলেই প্রিয় দলের খেলার দিন তা উপভোগ করেন। কিন্তু, প্রিয় দলের নামটা বললে অসুবিধে কোথায়! গোর্কা জনমুক্তি মোর্চার এক নেতা জানান, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় অর্ধেকই ব্রাজিলের সমর্থক। বাকিরা আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেনের। ইংল্যান্ডের সমর্থকও রয়েছে। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারমেই কেউ আগ বাড়িয়ে নিজের প্রিয় দলের নাম ঘোষণা করতে চাইছেন না বলে দল সূত্রের খবর। তবে প্রিয় দল ফাইনাল খেললে তা চাপা থাকবে না।
জিটিএ-এর কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান বিনয় তামাং বলেন, ‘‘পর্যটন মরসুম চলছে। ভিড়ে উপচে পড়া দার্জিলিং মেতে উঠেছে ওয়ার্ল্ড কাপ কার্নিভালে। প্রয়োজনে ফুটবলপ্রেমীরা বড় পর্জায় ম্যালেই খেলার দেখানোর ব্যবস্থা করবে। এখানে ফুটবলই উপভোগ করাই প্রধান ব্যাপার। কে কোন দলের সমর্থক তা নিয়ে লড়ালড়ি করে কী হবে! খেলায় হারজিত থাকেই। শেষ অবধি সকলকেই মিলেমিশে থাকতে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy