Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
FIFA World Cup 2018

কেন দুরন্ত লড়েও জিততে পারল না ক্রোয়েশিয়া

হার-না-মানা লড়াইয়ের পরও বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাজয় স্বীকার করতে হল ক্রোয়েশিয়াকে। তবে হারলেও মন জিতে নিলেন মদরিচরা।

ফাইনালে হারের পর সৌজন্য বিনিময়। ছবি: এএফপি।

ফাইনালে হারের পর সৌজন্য বিনিময়। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ১৪:০৫
Share: Save:

কোনও কোনও হার অগৌরবের নয়। কোনও কোনও পরাজয় লজ্জার নয়। রবিবার রাতে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার পরাজয়ও ঠিক তাই। কাপ হাতে না উঠলেও মানুষের মন জিতেছেন লুকা মদরিচরা। হেরেও তাই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেলেন না ক্রোটরা।

কিন্তু কেন হারতে হল রাকিতিচ, মাঞ্জুকিচদের? প্রথমার্ধের গোড়া থেকেই বিপক্ষ রক্ষণে ক্রমাগত আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তবে গোলের মুখ খোলা যায়নি। আর ফ্রান্স যখনই সুযোগ পেয়েছে, তার বেশির ভাগই কাজে লাগিয়েছে। এখানেই বড় তফাত হয়ে গিয়েছে।

ভাগ্যের খেলাও রয়েছে। ফুটবলমহলে মজা করে বলাবলি হচ্ছে যে ফ্রান্স করেছে দুই গোল আর ক্রোয়েশিয়া চার। প্রথমার্ধে ফ্রান্সের দুই গোলেই রয়েছে ভাগ্য। প্রথমে মাঞ্জুকিচের আত্মঘাতী গোল ও তারপরে বক্সের মধ্যে পেরিসিচের হ্যান্ডবল। যার সুবাদে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। এবং গোল করেন গ্রিজম্যান। খানিকটা রসিকতার সুরে তাই ক্রোয়েশিয়ার গোলকে বলা হচেছ চার!

ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট। রবিবার রাত মস্কোয়। ছবি: রয়টার্স।

মজা বাদ দিলে যা পড়ে থাকছে, তা হল, ভাগ্যদেবীর বিজয়মালা এদিন ক্রোয়েশিয়ার জন্য ছিল না। সেজন্যই বিশ্বকাপ ফাইনালে নজিরবিহীন ভাবে আত্মঘাতী গোলের শিকার হতে হয়েছে। বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবলের ব্যাপারও তাই। পেরিসিচ ইচ্ছাকৃত ভাবে বল হাত লাগাননি। রেফারি শুরুতে পেনাল্টিও দেননি। ফরাসি ফুটবলাররা হাত দেখিয়ে হ্যান্ডবল দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন রেফারিকে। খেলা থামিয়ে রেফারি তখন ‘ভিএআর’ পদ্ধতির সাহায্য নেন। এবং এই প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দেওয়া হল পেনাল্টি। ফুটবলমহলে অনেকেই এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। বলা হচ্ছে, পেরিসিচ বলে হাত দেননি। বল এসে হাতে লেগেছে। যা দুর্ঘটনাবশত হয়েছে। জিততে গেলে যে ‘চান্স ফ্যাক্টর’ প্রয়োজন হয়, তা এদিন ছিল না ক্রোয়েশিয়ার।

দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সের দুই গোলের নেপথ্যে অবশ্য ভাগ্য ছিল না। ছিল পোগবা, এমবাপের দুরন্ত স্কিলের ঝলক। তবে দায় এড়িয়ে যেতে পারে না ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণও। তৃতীয় গোলের ক্ষেত্রে ডানদিক থেকে এমবাপের ক্রস পান গ্রিজম্যান। তিনি একেবারেই অরক্ষিত ছিলেন। গ্রিজম্যানের থেকে বল পান পোগবা। মদরিচ তাঁকে দ্বিতীয় বার শট নেওয়া থেকে আটকাতে পারেননি। পোগবা শট নেওয়ার আগে মদরিচ বুঝতেই পারেননি বল ঠিক কোথায়। এমবাপেও গোলের সময় অনেকটা ফাঁকা জায়গা পেয়েছিলেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ ছিলেন না। দুর্বল রক্ষণের মাসুল দিতে হয়েছে ক্রোটদের। ফরাসি রক্ষণ কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ঘনঘন আক্রমণেও বড় ভুল করেনি।

হতাশ ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকরা। ছবি: এএফপি।

ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশঁর ট্যাকটিকাল সিদ্ধান্তও বড় ভূমিকা নিয়েছে ফাইনালে। মাঝমাঠে একবারেই প্রত্যাশিত ছন্দে ছিলেন না এন’গোলো কঁতে। পেরিসিচ, মাঞ্জুকিচরা বারবার টপকে যাচ্ছিলেন তাঁকে। এটা লক্ষ্য করে দ্বিতীয়ার্ধে তাড়াতাড়ি তাঁকে তুলে নেন দেশঁ। নামান স্টিভেন এন’জোঞ্জিকে। তাঁর রক্ষণাত্মক গুণাবলির জন্য পোগবা ও এমবাপে নিজেদের সৃষ্টিশীল ফুটবল মেলে ধরার সুযোগ পান। দু’জনের গোল আসে ৫৮ মিনিটে স্টিভেন নামার পরই।

মদরিচ-রাকিতিচরা লড়েছেন, হার-না-মানা অদম্য মানসিকতা দেখিয়েছেন, কিন্তু বিপক্ষ গোলে খুব একটা শট মারতে পারেননি। নেওয়া শটের মধ্যে আটটাই গিয়েছে বাইরে। তেকাঠিতে ছিল মোটে তিন শট। অথচ, বলের দখলে ক্রোয়েশিয়া (৬১ শতাংশ) এগিয়ে ফ্রান্সের (৩৯ শতাংশ) থেকে। নিখুঁত পাসের ক্ষেত্রেও ফ্রান্সের (৭৫ শতাংশ) চেয়ে এগিয়ে ক্রোয়েশিয়া (৮৩ শতাংশ)। কিন্তু, বল দখলে রাখাই তো শেষ কথা নয়। তা কাজে লাগানোই আসল। ফ্রান্স এখানেই বাজিমাত করে গেল।

আরও পড়ুন: ড্যাব ডান্স থেকে ক্রোট প্রেসিডেন্টকে চুম্বন, ফাইনালে হিট মাকরঁ

আরও পড়ুন: ফ্রান্সের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার আট প্রধান কারণ

আরও পড়ুন: গোল্ডেন বুট থেকে গোল্ডেন বল, দেখে নিন বিশ্বকাপে সেরাদের তালিকা​

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE