Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

‘মেসির পাশে কেউ ছিল না’

সেই একই দল তো বিশ্বকাপে খেলছে। যাদের না আছে কোনও সঠিক পরিকল্পনা, না আছে সঠিক দিশা। এর পর আর কী-ই বা আশা করা যায়?

নিঃসঙ্গ: মেসি। ছবি: গেটি ইমেজেস

নিঃসঙ্গ: মেসি। ছবি: গেটি ইমেজেস

মারিয়ো কেম্পেস
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

আর্জেন্টিনার খেলায় যা দেখলাম, তা বোধ হয় প্রত্যাশিতই ছিল। শুধুমাত্র বিশ্বকাপের দু’টি ম্যাচ দেখলেই তো হবে না, আমাদের সমস্যা শুরু হয়েছিল যোগ্যতা অর্জন পর্ব থেকেই। তখন থেকেই জঘন্য খেলেছি আমরা। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা যে রাশিয়ায় যেতে পেরেছে, সেটাই তো ছিল অঘটন।

সেই একই দল তো বিশ্বকাপে খেলছে। যাদের না আছে কোনও সঠিক পরিকল্পনা, না আছে সঠিক দিশা। এর পর আর কী-ই বা আশা করা যায়? ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-৩ হারের পরে তাই আর্জেন্টিনা ভক্তদের মনে আশা কমছে, রাগ আর অপমান বাড়ছে। আমি বিশ্বাস করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি যে, আমরা নক-আউট পর্বে যাব।

ভেবেছিলাম, প্রথম ম্যাচটা ড্র করার পরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় দারুণ লড়াকু একটা আর্জেন্টিনা দলকে দ্বিতীয় ম্যাচে দেখতে পাব। বাস্তবে যেটা দেখলাম, তা প্রথম ম্যাচের চেয়েও খারাপ। খুবই হতাশাজনক পারফরম্যান্স।

লিয়োনেল মেসিকে খলনায়ক বাছা মোটেও ঠিক হবে না। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ও সর্বস্ব দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনও সমর্থনই পায়নি দলের থেকে। মেসিকে খুব একা মনে হচ্ছিল। ওরা প্রত্যেকে মাঠের বাইরে খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু মাঠের মধ্যে আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের দেখে মনে হচ্ছিল, কেউ কাউকে চেনে না। সত্যিই খুব লজ্জার ব্যাপার। প্রাক্তন কোচদেরও এর দায় নিতে হবে। মেসিকে সব একা সহ্য করতে হয়। মারাদোনার সঙ্গে তুলনা, রোনাল্ডো সেরা না ও সেরা, বিশ্বকাপ জিতবে কি জিতবে না, সব কিছু। কিন্তু বিশ্বের সেরা ফুটবলারেরও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।

এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পরের রাউন্ডে যাওয়াটা এখন শুধুই ভাগ্যের ব্যাপার। তাই সেটাকে খুব একটা আর ধরছি না। কাতার বিশ্বকাপের সময় মেসির বয়স হবে ৩৫। তাই রাশিয়াই শেষ স্টেশন না-ও হতে পারে। ৩৫ বছর বয়সেও বিশ্বকাপ খেলা যায় এবং জেতাও যায়। কেন নয়? আমি কাতারেও মেসিকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেব না। তবে ওর সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে কেমন দল পাচ্ছে, তার উপর।

এই মুহূর্তে কোনও অজুহাতই অবশ্য কেউ শুনবে না। হতে পারে আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা সুসংগঠিত নয়। হতে পারে গত দু’বছরে আট জন কোচ বদল হয়েছে। এবং, ওরা কেউ কোনও সাফল্যই আনতে পারেনি। এখনকার ফুটবলাররা বেশির ভাগই ইউরোপে খেলছে। রাজার মতো সেখানে থাকে তারা। কোনও সমস্যাই নেই জীবনে। এই বিপর্যয়ের দায় তাই আর্জেন্টিনার ফুটবলার এবং কোচের। অন্য কারও নয়। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে যে আর্জেন্টিনাকে দেখলাম, তাকে দেখে চেনার উপায় ছিল না। এই অবস্থা থাকলে শেষ ম্যাচেও কিছু আশা না করাই ভাল।

আর্জেন্টিনায় এখনও লোকে ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ জয়ী দলকে নিয়ে গর্ব করে। সেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিল দিয়েগো মারাদোনা। তবে মনে রাখা দরকার, দিয়েগোর সঙ্গে অনেক ভাল ফুটবলার ছিল। মেসির সঙ্গে তেমন কেউ নেই। এটাও ঠিক যে, জাতীয় দলের হয়ে খুব কমই খেলে মেসি। আমার কাছে এই আর্জেন্টিনা ড্রেসিংরুমটা খুব গোলমেলে জায়গা লাগছে।

পরের ম্যাচের আগে যে তিন দিন সময় পাওয়া যাচ্ছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে কোচকে এই ব্যাপারটাকে আগে ঠিক করতে হবে। আমার মনে হয়, কোচের উচিত ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলে এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে বার করা। এই ফলাফলটা একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না। তাই ধাক্কাটা বেশি লাগবে। তবু উঠে দাঁড়াতেই হবে দেশের গর্বের কথা ভেবে। আর্জেন্টিনার পক্ষে একটিও ম্যাচ না জিতে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়াটা হবে আমাদের ফুটবল ইতিহাসে সব চেয়ে লজ্জার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE