কিংবদন্তি: বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জিদান। (ডান দিকে) প্লাতিনি। ফাইল চিত্র
মিশেল প্লাতিনিকে সামনে থেকে দেখিনি। কিন্তু জিনেদিন জিদানের হাতে বিশ্বকাপ উঠছে সেটা মাঠে বসে দেখেছি। ফ্রান্সের স্টেডিয়ামে বসেই। খেতাবের কাছে পৌঁছে যাওয়া ব্রাজিলকে ফাইনালে হেলায় হারিয়ে জিদানের জোড়া গোলের পর মাঠে সেই ‘জিজু……জিজু’ আওয়াজটা যেন এখনও শুনতে পাই। সত্যিই তো, ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপটা তো জিজুর জন্যই পেয়েছিল ওর দেশ। যা করতে পারেননি প্লাতিনি।
বিরাশিতে সেমিফাইনালে সর্বকালের অন্যতম সেরা ম্যাচ খেলে জার্মানির কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল ফ্রান্স। ম্যাচ ৩-৩ শেষ হওয়ার পরে টাইব্রেকারে জার্মানি জিতেছিল ৫-৪ এ। ফ্রান্সের শেষ পেনাল্টি কিক বারের উপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখেছিলাম টিভিতে। ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে দেশে ফিরেছিলেন প্লাতিনি। ক্লাব ফুটবলের সেরা স্ট্রাইকার হয়েও লিয়োনেল মেসির মতো অধরা থেকে গিয়েছে বিশ্বকাপ। মেসির অবশ্য এখনও সুযোগ আছে। নেই প্লাতিনির।
ফ্রান্সের ফুটবলের সোনার সময়ের কথা তুললে প্লাতিনি ও জিদানের কথা আসবেই। ক্রীড়া দফতরের সৌজন্যে সে বার গিয়েছিলাম ফ্রান্সে বিশ্বকাপ দেখতে। সেখানে ফাইনালসহ চারটি ম্যাচের টিকিট পেয়েছিলাম। যাওয়ার আগে ভাবিনি ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হবে। গিয়ে শুনলাম, ওদের কোচ এইমে জাকুয়েটকে সবাই পাগল বলছিল। জিদানের দলের রক্ষণ অনুশীলন ম্যাচে চার, পাঁচ গোল খাচ্ছিল। ফ্রান্সের অতি বড় ফুটবলপ্রেমীও ভাবেননি জিদান এভাবে একাই দুরমুশ করবেন ব্রাজিলকে। সবাই ওঁকে বুড়ো বলে গালাগালি দিচ্ছিল। ফাইনালের দিন ম্যাচের আগে অদ্ভুত দৃশ্য দেখেছিলাম। দেখলাম ফ্রান্স অনুশীলন করল। কিন্তু ব্রাজিল নামল না। তারা সরাসরি মাঠে নেমেছিল। যা পাড়ার ফুটবলেও হয় না। পরে শুনেছিলাম রোনাল্ডো অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বলেই সবাই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। তবে এটা ঘটনা যে, জার্মানির কাছে ৭-১ হার ছাড়া ব্রাজিলকে এ ভাবে কখনও পর্যুদস্ত হতে দেখিনি। জিদান একাই জোড়া গোল করেছিলেন। এম্যানুয়েল পেতি করেছিল ৩-০। সে দিনই দেখেছিলাম জিজু-জাদু।
জিদান আর প্লাতিনির মধ্যে ফারাক হল, জিজু আদ্যন্ত প্লে মেকার বা পিছন থেকে খেলা তৈরি করার ফুটবলার। আর প্লাতিনি ছিলেন বিপক্ষের বক্সে ভয়ঙ্করতম স্ট্রাইকার। অবিশ্বাস্য সব গোল করেছেন তিনি। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য দারুণ সফল হয়েছেন প্লাতিনি। ফ্রি-কিক থেকে গোল করায় ওস্তাদ ছিলেন তিনি। জিদান যা ছিলেন না। ওঁকে আমি ঘুর্ণায়মান স্ট্রাইকারই বলব। জিজুকে ধরা ছিল কোচেদের কাছে কঠিন কাজ। লোক লাগিয়ে জিজুকে রোখা সম্ভব হত না। জায়গা বদল করায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। দু’পায়ে দারুণ টাচ ছিল। তবুও প্রচুর গোল করার জন্য এবং সৌন্দর্যের ফুটবল খেলার জন্য প্লাতিনিকেই আমি ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা বলব। এখনও পর্যন্ত যে টুকু দেখেছি তাতে এ বার বিশ্বকাপে ফ্রান্স দারুণ কিছু করবে বলে মনে করি না। প্লাতিনি বা জিদানের মতো কোনও ফুটবলার এ বারের দলটার নেই যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy