Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কাতার ম্যাচের আবেগ নেই, বলে দিলেন গুরপ্রীত

বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচ খেলতে ইগর স্তিমাচরা রবিবার দুপুরে শহরে পৌছনোর পরে বিমানবন্দরে যে উন্মাদনা ও উচ্ছ্বাসের ঢেউ আছড়ে পড়ল, সাম্প্রতিক কালে কোনও ভারতীয় ফুটবল দলকে নিয়ে তা দেখা যায়নি।

গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু।—ছবি পিটিআই।

গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু।—ছবি পিটিআই।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

কাতার ম্যাচে ‘অতিমানব’ হয়ে দেশকে পয়েন্ট এনে দেওয়া গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু বলে দিলেন, ‘‘বাংলাদেশ হৃদয় দিয়ে খেলে। তাই ওদের খাটো করে দেখার কোনও কারণ নেই। ওদের হারানো কঠিন। আমাদের কম ভুল করতে হবে। এবং জেতার চেষ্টা করতে হবে। এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’’

বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচ খেলতে ইগর স্তিমাচরা রবিবার দুপুরে শহরে পৌছনোর পরে বিমানবন্দরে যে উন্মাদনা ও উচ্ছ্বাসের ঢেউ আছড়ে পড়ল, সাম্প্রতিক কালে কোনও ভারতীয় ফুটবল দলকে নিয়ে তা দেখা যায়নি। আট বছর পরে যুবভারতীতে খেলতে আসা সুনীল ছেত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন হাজারখানেক মানুষ। ‘ব্লু টাইগার্সদের’ অভিবাদন জানাতে জাতীয় পতাকা ও নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির ছিলেন তাঁরা। ছিল স্লোগানও। দু’দফায় আসা ফুটবলারদের দমদম বিমানবন্দর থেকে বের করে নিয়ে যেতে হয়ে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। যা দেখে কোচ স্তিমাচও অবাক। বলে ফেললেন, ‘‘এই ম্যাচটা জেতার জন্য কলকাতা যে ভাবে সাড়া এবং সমর্থন করছে, তাতে আমার ছেলেরা মাঠে নামার জন্য উত্তেজিত ও উদগ্রীব।’’

লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যায় যুবভারতী সংলগ্ন অনুশীলনের মাঠে সুনীল ছেত্রী, উদান্ত সিংহ, শুভাশিস বসুদের দেখতেও এসেছিলেন প্রচুর সমর্থক। তাঁদের অনেকের গায়েই ছিল ভারতীয় দলের জার্সি। স্টেডিয়ামের কাউন্টারে টিকিট নেই। সব শেষ। পঁয়ষট্টি হাজার দর্শক মঙ্গলবার মাঠ ভরিয়ে দেবেন। কিন্তু যে ম্যাচের জন্য এই উত্তেজনা, তা নিয়ে কাতার ম্যাচের নায়ক গুরপ্রীত এ দিন অনুশীলনে নামার আগে বলে দিলেন, ‘‘কাতার ম্যাচটা আমরা জিততে চেয়েছিলাম। তবে ওই রকম দলের সঙ্গে ড্র করার পরে দলের ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছে। সুনীল ছেত্রী না থাকা সত্ত্বেও জুনিয়র ফুটবলার বিশেষ করে নিখিল পূজারি, মান্দার রাও দেশাইয়রা নিজেদের প্রমাণ করেছে।’’ কাতারের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ২৩ টি গোলমুখী বল রুখেছিলেন গুরপ্রীত। তাঁর বিস্বস্ত হাতেই ২০২০ বিশ্বকাপ আয়োজক কাতারের বিরুদ্ধে পয়েন্ট পেয়েছিল স্তিমাচের ভারত।

তা সত্ত্বেও সেই ম্যাচকে স্বপ্নের ম্যাচ বলতে নারাজ ভারতীয় দলের এক নম্বর গোলরক্ষক। বলছিলেন, ‘‘এটা আমার স্বপ্নের ম্যাচ নয়। সেরাও নয়। এর আগেও কঠিন ম্যাচ খেলেছি। কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচ খেলেছি মাত্র। সামনের দিকে এগোতে চাই।’’ কলকাতায় খেলে গিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল জার্সি পরে। তবে তাঁর স্মৃতিতে চির-উজ্জ্বল, জীবনের প্রথম ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ। যা ড্র হয়েছিল। পঞ্জাবের ছেলে বলছিলেন, ‘‘ওই দিনের পরিবেশটা দারুণ উপভোগ করেছিলাম। সেটা মঙ্গলবার ফের দেখতে পাব, এটা ভেবেই দারুণ লাগছে।’’

ফুরফুরে: কলকাতায় পৌঁছেই অনুশীলনে সুনীল ছেত্রী। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

২০১০ থেকে জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার গুরপ্রীত। নয় বছরে চার জন কোচের কোচিংয়ে খেলেছেন। বব হাউটন, উইম কোভারম্যান্স, স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন এবং ইগর স্তিমাচ। সুনীল ছেত্রী ছাড়া এই ভারতীয় দলের কারও এই অভিজ্ঞতা নেই। কী পরিবর্তন হয়েছে দলের? প্রশ্ন শুনে স্তিমাচের দলের শেষ ডিফেন্স বলে দিলেন, ‘‘আমি যখন প্রথম জাতীয় দলে ডাক পাই, তখন দলে তারকা ভর্তি। এখন সব তরুণ ফুটবলার। ফুটবলও অনেক বদলে গিয়েছে। টেকনিক্যালি ফুটবলাররা অনেক উন্নতি করেছে। মাঠের বাইরেও প্রত্যেক ফুটবলার নিজেদের নিয়ে ভাবে, উন্নত করার চেষ্টা করে। এই পরিবর্তনটা আমার চোখে পড়েছে।’’ ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমের রসায়নের যে গত কয়েক বছরে বদলে গিয়েছে, সেটাও বলে দিয়েছেন গুরপ্রীত। ‘‘কিরঘিজ়স্তান, মায়ানমার, কম্বোডিয়ার মাঠে গিয়ে ওদের হারিয়েছি আমরা। দু’বার তাইল্যান্ডকে হারিয়েছি। আমরা নিজেরাই বিশ্বাস করতাম না, বাইরের মাঠে গিয়ে জিততে পারি। আমরাও পারি সেই আত্মবিশ্বাসটা দলের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে।’’ বারবার গোলকিপার কোচ বদল হওয়ায় তাঁর মধ্যে কোনও প্রভাব পড়েছে কি না, এই বিতর্কিত প্রশ্ন জাতীয় দলের সবচেয়ে উচ্চতার ফুটবলার সামলেছেন খুব সতর্ক ভাবে। বলেছেন, ‘‘আমি চোখের সামনে অনেক পরিবর্তন দেখেছি। সমস্যা হয়নি। আগে যখন র‌্যামোসের কাছে কোচিং নিতাম তখন দেখতাম কত আধুনিক। আর এখন যাঁর কাছে কোচিং নিচ্ছি সেই টমিস্লাভের কাছেও কোচিং নেওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।’’ সন্দেশ ঝিঙ্ঘান এ দিন দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেও চোটের জন্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলতে পারছেন না। সন্দেশকে দলের ‘লৌহমানব’ বলেছেন স্টিভন। কী ভাবে এই ক্ষতি পোষাবে স্তিমাচের দল? গুরপ্রীত বলছেন, ‘‘সন্দেশের না থাকাটা ক্ষতি। আমাদের কোচ নতুন ফুটবলারদের বেশি করে সুযোগ দেন। কোচের এই ভাবনাটা কাজে লাগবে মঙ্গলবার।’’

গুরপ্রীত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়ে ভারতীয় দলে টিম বাস। মাঠে নেমে পড়েন স্তিমাচ। পুরো দল নিয়ে। অনুশীলন শুরু হয়। দেখা যায় সুনীল ছেত্রীর নেতৃত্বেই চলছে সবকিছু। পাসিং থেকে বল চোর খেলা, সবেতেই পয়েন্ট গুনছেন কলকাতার জামাই। সন্দেশ নেই তো কী, সুনীল তো ফিরেছেন দলে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাটে নামার আগে যুবভারতীর মতোই তাই সম্ভবত উজ্জ্বল ক্রোয়েশিয়ার কোচের মুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE