Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Cricket

‘হাত নাড়ানো যাবে না তিন সপ্তাহ, জোরে বোলিং খেলার চেয়েও এটা কঠিন’

ম্যাঞ্চেস্টারে অস্ত্রোপচারের পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরে ফিরলেন ঋদ্ধিমান সাহা। তিন সপ্তাহ ঘরেই চলবে ব্যায়াম। কবে ফিরবেন মাঠে, জানেন না। তাড়াহুড়ো করতেও চাইছেন না।

ইংল্যান্ডে অস্ত্রোপচারের পর এ বার ঘরে ফেরার পালা। কলকাতা বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার সকালে ঋদ্ধিমান সাহা। নিজস্ব চিত্র।

ইংল্যান্ডে অস্ত্রোপচারের পর এ বার ঘরে ফেরার পালা। কলকাতা বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার সকালে ঋদ্ধিমান সাহা। নিজস্ব চিত্র।

সৌরাংশু দেবনাথ
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ১৩:১০
Share: Save:

ট্রলি ব্যাগ ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে আসছেন তিনি। একা। ছবিটা যেন অসম্ভব প্রতীকী।

গালে না কামানো দাড়ি। ধূসর রঙের টি-শার্ট। কালো ট্রাউজার। বাঁ কাঁধের উপর দিয়ে ঝোলানো স্ট্র্যাপ। কালো রঙের একটা ব্যান্ডেজের মতো ডান কনুইয়ের একটু ওপর থেকে জড়িয়ে রয়েছে হাতের আঙুল পর্যন্ত। মুঠোর আঙুলগুলোয় জড়িয়ে রয়েছে একটা ক্রিকেট বল। বাঁ হাতে ঠেলছেন বেগুনি রঙের ট্রলি ব্যাগ। সব কিছু ঠিক আছে। তবু, কিছুই ঠিক নেই। ঋদ্ধিমান সাহা যেন বড্ড একাকী। দেখে মনে হচ্ছে, বং- উইকেটকিপার যেন নিজের কেরিয়ারকেই ঠেলে এগোচ্ছেন সামনে।

কালো ব্যান্ডেজ, কালো ট্রাউজার্স, না কাটা দাড়ি— সবেই কেমন বিষণ্ণতার আভাস। অথচ, সব ঠিক থাকলে আজ বৃহস্পতিবার তাঁর শরীরে সাদা পোশাক থাকার কথা ছিল। লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্ট আজই শুরু হচ্ছে যে! ম্যাঞ্চেস্টারে যে দিন তাঁর কাঁধে অস্ত্রোপচার হয়েছিল, সেই সকালে এজবাস্টনে বিরাট কোহালি দলবল নিয়ে নেমে পড়েছিলেন প্রথম টেস্টে। দলের পয়লা উইকেটরক্ষক ইংল্যান্ডে থেকেও তখন অপারেশন টেবিলে, ব্যাট-বলের দুনিয়া থেকে অনেক দূরের ছুরি-কাঁচির মহল্লায়।

এবং ঋদ্ধির জগত আপাতত এটাই। এই ব্যান্ডেজই সঙ্গী হচ্ছে কম করে তিন সপ্তাহ। নাড়াতে পারবেন না হাত। কোনও অবস্থাতেই হাতের ‘পজিশন’ বদলানো যাবে না। কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে বললেন, “খুব কঠিন কাজ। এ ভাবেই রাখতে হবে হাত। মাঠে নেমে পেস বোলিং খেলার চেয়েও এটা মুশকিলের। কিন্তু, কিছু করারও নেই। অন্য যে কেউ এই অবস্থার সঙ্গেই মানিয়ে নিত। আমাকেও অ্যাডজাস্ট করতে হবে। দলে ফিরতে হলে অন্য কোনও রাস্তাও তো নেই!”

এই তিন সপ্তাহ অবশ্য বাড়িতে বসে বিশ্রাম কোনও ভাবেই নয়। অস্ত্রোপচারের আগেও চলছিল কিছু ব্যায়াম। পরেও করতে হবে তা। দেখিয়ে দেওযা হয়েছে তাঁকে। কোনও নির্দিষ্ট সময়ে নয়, কোনও নির্দিষ্ট মেয়াদ ধরেও তা নয়। যখনই মনে হবে তা করতে পারেন। এর পর যেতে হবে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখানে ফিজিয়ো পরীক্ষা করে দেখবেন। ফিডব্যাক দেবেন। সব ঠিক থাকলে শুরু হবে পরের ধাপ। মাঠে নামার প্রস্তুতি নেওয়া। আপাতত তাই মাঠে ফেরার কথা ভাবতেই চাইছেন না। চোখ রাখছেন সামনে। তাঁর কথায়, “সবাই এক ভাবে সেরে ওঠে না। এটা এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম হয়। আমি যদি তাড়াহুড়ো করি, তবে এই চোট আবার ফিরে আসতে পারে। সাধারণত এই চোট এক বার সেরে উঠলে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে ফিরে আসে না। দেখতে হবে কেমন ভাবে সেরে উঠছি, কতটা সেরে উঠছি। সময়ের আগে ফেরার চেষ্টা করলেই সমস্যা।”

আরও পড়ুন: ইতিহাসের লর্ডসে আজ থেকে কোহালিদের স্বপ্ন রক্ষার লড়াই

আরও পড়ুন: ‘লর্ডসে কিন্তু বল ঘোরে, তাই খেলুক কুলদীপও’

নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে ভারত। প্রথম টেস্ট আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে। বছরের গোড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল টেস্ট সিরিজের মাঝপথে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট খেলতেই পারেননি। ইংল্যান্ড সফরও ফসকে গেল। বছরের শেষে কি টেস্ট কেরিয়ারে সূর্যোদয় ঘটবে? নাকি তা এমনই মেঘলা থেকে যাবে? অনিশ্চয়তার সরণিতে থাকবে কেরিয়ার? উত্তর নেই ময়দানের পাপালির কাছে। শুধু বললেন, “অস্ট্রেলিয়া সফরের তো অনেক দেরি আছে। হাতে সময় রয়েছে। দেখা যাক।”

ম্যাঞ্চেস্টারে অস্ত্রোপচারের পর ঋদ্ধি। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।

কিন্তু প্রচণ্ড ফিট হয়েও বার বার কেন চোটের চোখরাঙানিতে টেস্ট কেরিয়ারের সিগন্যাল লাল দেখাচ্ছে? গ্রিন সিগন্যাল কেন মিলছে না? ঋদ্ধি বললেন, “খেলার মাঝখানে চোট লাগলে কারওরই কিছু করার থাকে না। চোট নিয়ে খেলা উচিত নয়। তাতে দল বিপদে পড়ে যেতে পারে। আমি তাই আগে জানিয়ে দেওয়াই উচিত বলে মনে করেছি। দল যাতে সিরিজের মাঝ পথে চাপে না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রেখেছি।”

অস্ত্রোপচারের পর এজবাস্টন টেস্ট চলাকালীন এক বার গিয়ে দেখা করে এসেছেন টিম ইন্ডিয়ার সতীর্থদের সঙ্গে। অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী আগে বেরিয়ে যাওয়ায় তাঁদের দু’জনের সঙ্গে কথা হয়নি। বাকিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। লর্ডস টেস্টে ভারত জিততে মরিয়া থাকবে, মনে হচ্ছে তাঁর। বললেন, “হারলেও লড়াই করেছে ভারত। এই টেস্টেও তা করবে। জিততে ঝাঁপাবে।”

তবে এত কিছুর মধ্যেও তিনি সম্পূর্ণ আবেগহীন। স্ত্রী রোমির সঙ্গে উঠে পড়লেন গাড়িতে। বসলেন ডানদিকে। হাত রাখতে সুবিধা হবে বলে। একেবারে নির্বিকার মুখে, নিরাসক্ত ভঙ্গিতে। না হয়ে উপায়ই বা কী! জেমস অ্যান্ডারসনদের সামলানোর চেয়েও যে কঠিন চ্যালেঞ্জ তাঁর সামনে। তিন মাস নড়ানো যাবে না হাত। না হলে টেস্ট কেরিয়ারটাই হয়তো তাঁর ব্যান্ডেজবন্দি হাতের মতো হয়ে যাবে!

আরও পড়ুন: সেই পয়া মাঠে এ বারেও ভাল বোলিং করতে চান ইশান্ত ​

আরও পড়ুন: রুটদের মহড়ায় চায়নাম্যান, অর্জুন​

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Cricketer Indian Cricket Wriddhiman Saha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE