মনোজ তিওয়ারির যখন কাঁধে চোট লাগল, তখন সিএবি-তে আমার কাছে পরামর্শ নেওয়ার জন্য এসেছিল। আমি বলেছিলাম, লন্ডনে সচিন যেখানে ‘আর্থোস্কোপি রিপেয়ার’ করে এসেছে সেখানে চলে যাও, মাঠে ফিরতে কোনও সমস্যা হবে না। টাকা একটু বেশিই খরচ হবে হয়তো, তবে সমস্যা মুক্ত হবেই।
শুনেছি মনোজ পরে যোগাযোগ করেছিল সচিনের সঙ্গে। সচিনই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল অস্ত্রোপচারের। মনোজের তো তার পরে ফিরে এসে খেলতে কোনও অসুবিধা হয়নি। ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের চুক্তি থাকে বলে অস্ত্রোপচারের খরচও বোর্ডেরই বহন করা উচিত। তাই খরচ নিয়েও বেশি ভাবার কারণ নেই।
মনোজের সাইনোবিয়ান মেমব্রেন হয়েছিল। ঝাঁপিয়ে বল ধরতে গেলে কাঁধে এই ধরনের চোট হয়। কাঁধের একটা জায়গা ফুলে ওঠে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দু’তিনটে ছোট গর্ত করে চোট পাওয়া অংশ ‘রিপেয়ার’ করা যায়। কিন্তু তার আগে প্রাক-রিহ্যাব করা জরুরি। আমরা এ সব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরে তিন থেকে চার মাসের রিহ্যাবের পরে কাজে ফিরতে বলি।
ঋদ্ধিমান সাহার মাঠে ফেরা নিয়ে কোনও সংশয় থাকার কথা নয়। আমার অন্তত নেই। ঋদ্ধির চোটটা ‘ল্যাব্রাম টিয়ার’। মনোজের চোট আরও গুরুতর ছিল। কাঁধে যে কার্টিলেজ থাকে, তাতে চোট লেগেছে। আমি দূরে বসে ঋদ্ধির চোটের মাত্রাটা বুঝতে পারব না। কিন্তু যতদূর মনে হচ্ছে, ‘আর্থোস্কোপিক রিপেয়ার’ করলেই চলবে। ইংল্যান্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা একদম সঠিক। ভারতে এখনও কাঁধের এই চিকিৎসা সে ভাবে শুরুই করা যায়নি।
ভারতে খেলোয়াড়দের শল্য চিকিৎসক হিসেবে অনন্ত জোশীর নামই বেশি শোনা যায়। কিন্তু উনি মূলত হাঁটুরই অস্ত্রোপচারটা ভাল করেন। ডক্টর জোশীর সঙ্গে কাঁধের চোটের চিকিৎসা নিয়ে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। উনিও কাঁধের বড় চোট এখানে অস্ত্রোপচার করার কথা খুব একটা বলেন না।
ফুটবলের গোলকিপার আর ক্রিকেটের উইকেটকিপারের কাজটা অনেকটা একই রকম। দু’দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ধরতে হয় বা বাঁচাতে হয়। শরীর ছুড়ে বল ধরতে গিয়েই সমস্যাটা হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। এই চোটটা কিন্তু এ ভাবেই হতে পারে। তবে এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ আছে বলে মনে করি না। অস্ত্রোপচার করার আগে ওর ‘এফএমআরআই’ করে নেওয়া উচিত। এখন আরও আধুনিক একটা চিকিৎসা বিশ্বে এসে গিয়েছে। তা হল ‘এফএমআরআই’ অর্থাৎ ‘ফাংশানাল এমআরআই’। এই প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হাড়ের চিড়ও ধরে ফেলা যায়। ঋদ্ধির ক্ষেত্রেও সেটার ব্যবস্থা হবে বলে আশা করছি। অস্ত্রোপচারের পরেও মাঠে ফেরার জন্য দু’তিনটে সিঁড়ি অবশ্য ঋদ্ধিকে পেরোতে হবে। প্রথমে প্রাক-রিহ্যাব করতে হবে কিছু দিন। তার পরে অস্ত্রোপচার হবে। পরে আবার অন্তত দু’তিন মাসের রিহ্যাব।
মাঠের সঙ্গে জড়িয়ে আছি বহুদিন। ক্রিকেটার, ফুটবলারদের চোট দেখার এবং সুস্থ করে তোলার অভিজ্ঞতা আছে। অনেকেই কিন্তু কাঁধের চোট থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে এসেছে। তারা আবার খেলার মাঠে স্বমহিমায় রাজ করেছে। ফুটবলারদের ক্ষেত্রে কাঁধের চোট কমই হয়। বড় জোর পড়ে গিয়ে হাতের সঙ্গে কাঁধের জোড়া লাগা জায়গার হাড় সরে যায়। তখন অস্ত্রোপচার করে তা জোড়া লাগাতে হয়। প্লাস্টার করতে হয়। ঋদ্ধির চোটের ধরন সেটা নয়। যদি মন দিয়ে রিহ্যাব করে, তা হলে অস্ত্রোপচারের পরে দু’মাসেও ফিরে আসতে পারে।
(লেখক কলকাতার ক্রীড়া মহলে পরিচিত শল্য চিকিৎসক। ইস্টবেঙ্গল, আইএফএ ও সিএবি-র সঙ্গেও যুক্ত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy