Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সেই উপেক্ষিতই বাংলা, নির্বাচিত ছয় দলে ছ’জন

দলীপ ট্রফিতে তিনটি দলে প্রায় ৪৫ জন ক্রিকেটারের মধ্যে পাঁচ জন বাংলার। সব মিলিয়ে এ দিন নির্বাচিত ছ’টি দলে বাংলার প্রতিনিধির সংখ্যা ছয়। অথচ, এ রাজ্য থেকে জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীতে প্রতিনিধি রয়েছেন— দেবাঙ্গ গাঁধী।

অস্ত্র: টেস্টের ভাবনাতেও চলে এলেন যুজবেন্দ্র চহাল। ফাইল চিত্র

অস্ত্র: টেস্টের ভাবনাতেও চলে এলেন যুজবেন্দ্র চহাল। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

কুলদীপ যাদবের পরে এ বার যুজবেন্দ্র চহালকেও টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তৈরি করা শুরু হয়ে গেল। সোমবার ভারতীয় ‘এ’ দলে তাঁকে রাখলেন জাতীয় নির্বাচকেরা। অগস্টে ভারতীয় ‘এ’ দল দু’টি চার দিনের ম্যাচ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের সঙ্গে। টেস্টের দরজা খোলার জন্য সেই দুই ম্যাচই পরীক্ষা চহালের।

ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি চাইছে টেস্টে রিস্ট স্পিনারদের আনতে। রিস্ট স্পিনার মানে যাঁরা কব্জির ব্যবহারে স্পিন করেন। পরিবেশ বা পিচের উপর নির্ভর না করেও তাঁরা সফল হতে পারেন। সেই কারণে বেশির ভাগ দেশ এখন রিস্ট স্পিনারের উপর ভরসা রাখছে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে আসন্ন টেস্ট সিরিজে চায়নাম্যান কুলদীপকে দলে রেখেছেন নির্বাচকেরা। কথা হয়েছিল চহালকেও রাখা হবে কি না। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম তিনটি টেস্টে চহালকে রাখা হয়নি। তবে রবীন্দ্র জাডেজাকে নেওয়া হলেও অদূর ভবিষ্যতে বাঁ হাতি জাডেজার জায়গায় চহালকে আনা হতে পারে।

তবে সব চেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, মোট পাঁচটি দল সোমবার বেছে নেওয়া হলেও বাংলার ক্রিকেটারদের প্রতি সেই উপেক্ষারই সুর। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ জন ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির নাম কোনও দলেই নেই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের নাকের ডগায় কলকাতায় বসেই এই সব দল গড়লেন নির্বাচকেরা। তাঁরা যখন বাংলার ক্রিকেটের জন্য উপেক্ষার ইতিহাস ফিরিয়ে আনছেন, সৌরভ এবং তাঁর সতীর্থরা ব্যস্ত ওয়ার্কিং কমিটির সভা করতে। যেখানে এখন রাজনীতিই বেশি হয়, ক্রিকেট কম। সভা থেকে বেরিয়ে কারও মুখে বাংলার প্রতি নির্বাচনী উপেক্ষা নিয়ে একটি শব্দও শোনা যায়নি।

ভারতীয় ‘এ’ বা ‘বি’ দল দূরে থাক, দলীপ ট্রফির তিনটি দলের একটিতেও রাখা হয়নি মনোজ তিওয়ারিকে। বাংলা থেকে চার দিনের ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়েছেন একমাত্র অভিমন্যু ঈশ্বরন। চতুর্দলীয় ওয়ান ডে সিরিজে ‘এ’ দলে বাংলার কেউ নেই। ‘বি’ দলে আছেন শুধু ওপেনার অভিমন্যু। দলীপ ট্রফির যে তিনটি দল হয়েছে, তাতেও বাংলার প্রতিনিধিত্ব না থাকার মতোই। ইন্ডিয়া ব্লু দলে একমাত্র বাংলার ক্রিকেটার অভিষেক রামন। ইন্ডিয়া রেড দলে আছেন বাংলার দু’জন, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় এবং অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ঈশান পোড়েল। ইন্ডিয়া গ্রিন দলে আছেন দু’জন। সুদীপ চট্টোপাধ্যায় এবং অশোক ডিন্ডা।

দলীপ ট্রফিতে তিনটি দলে প্রায় ৪৫ জন ক্রিকেটারের মধ্যে পাঁচ জন বাংলার। সব মিলিয়ে এ দিন নির্বাচিত ছ’টি দলে বাংলার প্রতিনিধির সংখ্যা ছয়। অথচ, এ রাজ্য থেকে জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীতে প্রতিনিধি রয়েছেন— দেবাঙ্গ গাঁধী। তাঁর সামনে নানা অসঙ্গতিই তুলে ধরা যেতে পারে। যেমন, সূর্যকুমার যাদব রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার মনোজ তিওয়ারি বা সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের চেয়ে কম রান করে কী করে সুযোগ পেলেন? সুদীপ রঞ্জিতে করেছেন সাত ম্যাচে ৫১৪। মনোজ সাত ম্যাচে ৪৬১। সূর্যকুমার সাত ম্যাচে ৪৬০। অশোক ডিন্ডা শেষ মরসুমের রঞ্জিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক। আট ম্যাচে নিয়েছিলেন ৩৫ উইকেট। অথচ, রঞ্জিতে পাঁচ ম্যাচে ১৮ উইকেট পাওয়া অঙ্কিত রাজপুতকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতীয় ‘এ’ দলে। আবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের হয়ে ভাল করে আসা শুভমান গিল বা শিভম মাভিদের জায়গা হয়েছে ইন্ডিয়া ‘এ’ বা ‘বি’ দলে। অথচ, বোলিংয়ে দারুণ ভাবেই নজর কাড়া বাংলার ইশান পোড়েলের সেখানে জায়গা হয়নি। তাঁর ভাগ্যে জুটেছে শুধুই দলীপ ট্রফিতে স্থান।

অতীতে নির্বাচক কমিটির বৈঠকে ফাটাফাটি করেছেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মলহোত্ররা। এখনকার নির্বাচক দেবাঙ্গ গাঁধী প্রতিবাদের ধারকাছ দিয়েও হাঁটছেন বলে শোনা যায়নি। দেবাঙ্গকে নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে এখানকার ক্রিকেটারদের মনে। রাজ্য সংস্থার প্রশাসকদের উদাসীনতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অনেকেই ভিতরে ভিতরে ফুঁসছেন বার বার উপেক্ষিত থেকে।

কয়েক দিন আগেও বাংলার ক্রিকেটের সেরা উঠতি মুখ ছিলেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ভারতীয় ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়ে ভাল খেলেওছিলেন। রাহুল দ্রাবিড় পর্যন্ত তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। তার পর হঠাৎ সুদীপ কী করে ব্রাত্য হয়ে গেলেন? এ দিন ঘোষিত ভারতীয় ‘এ’ বা ‘বি’ কোনও দলেই জায়গা হয়নি সুদীপের। এ সবের মধ্যেই নির্বাচকেরা কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে ফেললেন পঞ্জাবের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অভিষেক গুপ্তকে দলীপ ট্রফির দলে রেখে। অভিষেক ডোপ পরীক্ষা ধরা পড়ে নির্বাসিত। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁর নির্বাসন ওঠার কথা। আর দলীপ ট্রফি হবে ১৭ অগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আরও তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, ডোপ করে নির্বাসিত ক্রিকেটারকে তা হলে কোন পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দলে নেওয়া হল? নির্বাসিত বলে তিনি তো স্বীকৃত ক্রিকেটে খেলছেনই না!

নির্বাচকদের নিয়ে মোহিন্দর অমরনাথের সেই বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে যাবে— ‘বাঞ্চ অব জোকার্স’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Yuzvendra Chahal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE