Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাগানের বিরুদ্ধে এ বার তোপ দাগলেন সুভাষ

ক্লাব নির্বাচনের মুখে ডামাডোল যেন থামছেই না মোহনবাগানে। একের পর এক বিতর্কে জেরবার সবুজ-মেরুন শিবির! নেপথ্যে ফুটবলার-কোচদের সেই বকেয়া বেতন। মঙ্গলবার বিকেলে মোহনবাগান তাঁবুতে এসে এই ব্যাপারটি নিয়েই সরব হয়েছিলেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য-প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়রা।

আক্রমণাত্মক। সাংবাদিক বৈঠকে সুভাষ। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র

আক্রমণাত্মক। সাংবাদিক বৈঠকে সুভাষ। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

ক্লাব নির্বাচনের মুখে ডামাডোল যেন থামছেই না মোহনবাগানে। একের পর এক বিতর্কে জেরবার সবুজ-মেরুন শিবির! নেপথ্যে ফুটবলার-কোচদের সেই বকেয়া বেতন।

মঙ্গলবার বিকেলে মোহনবাগান তাঁবুতে এসে এই ব্যাপারটি নিয়েই সরব হয়েছিলেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য-প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়রা। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে বুধবার বিকেলে বকেয়া বেতনের সঙ্গে আর্থিক দুর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগ তুলে বোমা ফাটালেন সুব্রত-প্রসূনদের খেলোয়াড় জীবনের সতীর্থ সুভাষ ভৌমিক। মাস দেড়েক আগেও যিনি ছিলেন মোহনবাগানেরই টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। শুধু প্রাক্তনরাই নন। এ দিন বাগানের আর্থিক ডামাডোল নিয়ে বিষোদগার করেন টিমের মার্কি ফুটবলার পিয়ের বোয়াও।

কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক তাঁবুতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কাগজপত্র-সহ অভিযোগ এনেই ক্ষান্ত হননি সুভাষ। আদালতে যাওয়ার হুঙ্কারও ছেড়েছেন। বাগানের প্রাক্তন টিডির বক্তব্য, “মোহনবাগান থেকে এখনও পাঁচ লক্ষ ঊনআশি হাজার টাকা পাই। ক্লাব তা মেটায়নি। আইনজীবির চিঠি বা আমার ব্যক্তিগত ফোন দু’য়ের কোনওটারই জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি কর্তারা।”

মোহনবাগানের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে অন্যতম সফল এই ভারতীয় কোচ বলেন, “আমার বকেয়া পাঁচ লক্ষ ঊনআশি হাজার টাকা। আর ক্লাব বলছে, তিন লক্ষ সাতাশি হাজার টাকা পাব। বকেয়া বাকি টাকা গেল কোথায়?” এখানেই না থেমে সুভাষের আরও প্রশ্ন, “সেই তিন লক্ষ সাতাশি হাজার টাকাও ডিসেম্বরে মিটিয়ে দেবে বলেছিল। সেটাও তো হয়নি।” সঙ্গে আরও অভিযোগ, “টিডির পদ থেকে যখন আমাকে সরানো হল, তখন বকেয়া মেটানো হবে না কেন?”

বুধবার বিকেলে সুভাষ যখন এই অভিযোগ আনছেন, তখন ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্র তাঁর রাজারহাটের বাড়িতে। পরে সুভাষের বক্তব্য শোনার পর আসিয়ান জয়ী কোচের সব অভিযোগেরই উত্তর দিয়েছেন তিনি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, “ওঁর বকেয়া কত তা হিসেবরক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছি। ক্লাবে আর্থিক সমস্যা চলছে। তবে ওঁর বকেয়া দ্রুতই মিটিয়ে দেব। আর উনি যদি তাতে আর্থিক অস্বচ্ছতার গন্ধ পান, তা হলে লিখিত আবেদন করুন। আমরা হিসেব দেখিয়ে দেব।”

এখানেই শেষ নয়, মোহনবাগানের সিদ্ধান্তের জন্যই তাঁর কোচিং জীবন সঙ্কটের মুখে, বলেন সুভাষ ভৌমিক। আবেগমথিত গলায় এক সময় বলে ফেলেন, “অনেক স্বপ্ন নিয়ে এ বারের মোহনবাগান টিমটা বানিয়েছিলাম দেবাশিস (দত্ত) ও সৃঞ্জয় (বসু)-এর সঙ্গে আলোচনা করে। মাঝখানে একটা ‘দুঃখজনক ঘটনা’ ঘটে গেল। তার পর যাঁরা ক্লাবের প্রশাসন দেখতে শুরু করলেন তাঁরাই ঝামেলা পাকিয়েছেন।”

সেই দুঃখজনক ঘটনা কী এবং কে সেই প্রশাসক জানতে চাইলে সুভাষ বলেন, “সমঝদারো কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হ্যায়।” তবে সবাই জানে, এক্ষেত্রে সুভাষ মোহনবাগান সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসুর গ্রেফতারি এবং সচিব অঞ্জন মিত্র-র দীর্ঘ অসুস্থতার পর ফের ক্লাব প্রশাসন পরিচালনার ব্যাপারটিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন।

যার প্রতিক্রিয়ায় বাগান সচিবের বক্তব্য, “ফেডারেশন জানিয়ে দিয়েছিল, ‘এ’ লাইসেন্স না থাকলে কোচিং করানো যাবে না। তাই সুভাষ ভৌমিককে সরিয়ে সঞ্জয় সেনকে কোচ করা হয়। সভাপতি টুটু বসু এবং অর্থসচিব দেবাশিস দত্তর সঙ্গে আলোচনা করেই। এটা সৃঞ্জয়ও জানে। কোনও কোচের কাছ থেকেই এ ভাবে কৌশলে ক্লাবের মধ্যে ভাঙন ধরানোর প্রচেষ্টা কাম্য নয়।”

সতীর্থ সুভাষের এই বিস্ফোরক সাংবাদিক সম্মেলনের পরপর সুব্রত ও প্রসূনদের প্রতিবাদ বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে। সুব্রত বলছেন, “ভৌমিকের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। দিনের পর দিন এই আর্থিক অস্বচ্ছতাই জারি রয়েছে মোহনবাগানে।” আর প্রসূন বলছেন, “ভোম্বলদা (সুভাষ ভৌমিক)-র সঙ্গে তো ক্লাবের আর্থিক চুক্তি হয়েছিল। তা যদি ভাঙা হয় তা হলে বকেয়া মেটানো হবে না কেন? সমস্যা থাকলে চিঠি দিয়ে জানাতে পারত। বৃহস্পতিবারই ক্লাবে গিয়ে এটা বিশদে জানতে হবে।”

শুধু প্রাক্তন সুভাষের ধাক্কাই নয়। অঞ্জন মিত্রদের সবুজ-মেরুন পালতোলা নৌকায় এ দিন ধাক্কা দিয়েছেন পিয়ের বোয়াও। সূত্রের খবর, বুধবার সকালে যুবভারতীতে অনুশীলনের একদম শেষ লগ্নে সব ফুটবলারদের সামনেই কোচ সঞ্জয় সেনের কাছে বকেয়া বেতন নিয়ে প্রশ্ন করে বসেন তিনি। মাঠে তখন হাজির ছিলেন ফুটবল সচিব উত্তম সাহা। কোচ এ ব্যাপারে কোনও সদুত্তর দেওয়ার আগেই সনি নর্ডি নাকি বোয়াকে বলেন, “আজ চুপ কর। বৃহস্পতিবার ১৫ জানুয়ারি অবধি দেখ।” পরে যুবভারতী ছাড়ার আগে বোয়া বলে যান, “মোহনবাগান নিয়ে অনেক কিছুই বলার আছে। কিন্তু কিছু বলতে চাই না। চুক্তি শেষ হলে বাড়ি ফিরতে চাই।” যা শুনে সচিবের প্রতিশ্রুতি, “আর্থিক সমস্যায় রয়েছে ক্লাব। তবে ফুটবলারদের বকেয়া দ্রুত মেটানোর চেষ্টাও করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mohun bagan subhas bhowmick
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE