Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
দশ জনে খেলেও লিগ শীর্ষে বাগান

সনির লাল কার্ড নিয়ে তীব্র ক্ষোভ

অপরাজিত থাকার রেকর্ড ধরে রাখল মোহনবাগান। হেড টু হেডে উঠে এল আই লিগ পয়েন্ট টেবলের শীর্ষে। তা সত্ত্বেও ডেম্পোর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতা হল না সঞ্জয় সেনের দলের। একেবারে শেষ মুহূর্তে বোয়া-কাতসুমিদের কাছ থেকে জেতার ব্যাটন কেড়ে নিল গোয়ার ক্লাব।

বলবন্তের গোলেও তিন পয়েন্ট এল না।

বলবন্তের গোলেও তিন পয়েন্ট এল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৬
Share: Save:

মোহনবাগান ১ (বলবন্ত)

ডেম্পো ১ (অ্যাঙ্গাস)

অপরাজিত থাকার রেকর্ড ধরে রাখল মোহনবাগান। হেড টু হেডে উঠে এল আই লিগ পয়েন্ট টেবলের শীর্ষে। তা সত্ত্বেও ডেম্পোর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতা হল না সঞ্জয় সেনের দলের। একেবারে শেষ মুহূর্তে বোয়া-কাতসুমিদের কাছ থেকে জেতার ব্যাটন কেড়ে নিল গোয়ার ক্লাব।

টিমের এক নম্বর স্ট্রাইকার সনি নর্ডির লাল কার্ড সঞ্জয়ের সব স্ট্রাটেজিকেই বুধবার এলোমেলো করে দিল। যে কার্ড দেখানো নিয়েই অবশ্য বিতর্ক তৈরি হয়েছে। টিভি দেখে বোঝা যায়নি সনি আদৌ লাল কার্ড দেখার মতো দোষ করেছিলেন কি না! বল নিয়ে গোলের দিকে যাওয়ার সময় নির্মল ছেত্রী বাধা দেন সনিকে। তখন নাকি কনুই দিয়ে নির্মলকে মারেন হাইতি স্ট্রাইকার। ইস্টবেঙ্গলের সদ্য প্রাক্তন কোচ আর্মান্দো কোলাসো মোহনবাগান-ডেম্পো ম্যাচে বিশেষজ্ঞ ভাষ্যকার হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মারগাওয়ের মাঠে। বলছিলেন, “কনুই দিয়ে মারলে রেফারি সরাসরি লাল কার্ড দেখাতেই পারেন। আর সনিকে লালকার্ড দেখানো সঠিক সিদ্ধান্ত।” তবে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে বাগান শিবিরে। ম্যাচের পর ফোনে কোচ সঞ্জয় সেন সরাসরি বলে দিলেন, “গোয়াতে আমরা বরাবর বঞ্চিত হই। সনির লাল কার্ড যদি হয়, তবে আমিরির কেন লাল কার্ড হল না? রেফারির জন্যই দু’পয়েন্ট হাতছাড়া হল আমাদের।”

ম্যাচ শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে ডেম্পোর হারুন আমিরি এবং মোহনবাগানের বলবন্ত সিংহকে হাতাহাতি করতে দেখা যায়। সেখানে রেফারি শুধুমাত্র হারুনকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে ছেড়ে দেন। যা নিয়েও তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

চার দিন আগে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডেম্পোকে একেবারেই ছন্দহীন মনে হয়েছিল। পাঁচ গোল দিয়েছিলেন র্যান্টিরা। এ দিন অবশ্য সনি-বোয়াদের আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন হারুন, আমিরি, নির্মল ছেত্রী, ফ্রান্সিস ফার্নান্ডেজরা। আর্থার পাপাসের বদলে কোচের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ট্রেভর মর্গ্যানের শুভেচ্ছাবাণী হয়তো তাতিয়ে দিয়েছিল পুরো ডেম্পো শিবিরকে। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোন করে মর্গ্যান নাকি ম্যাচের আগে ডেম্পোর ফুটবলারদের ‘বেস্ট অব লাক’ জানিয়েছিলেন। এবং সবথেকে যেটা কাকতালীয় ব্যাপার তা হল, কলকাতায় আই লিগের পরের ফিরতি ম্যাচে মর্গ্যানের সঙ্গেই টক্কর হবে সঞ্জয়ের।

প্রথম পনেরো মিনিটের লড়াইয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল ডেম্পো। ম্যাচের আগে সঞ্জয় যে আশঙ্কা করেছিলেন, তা একেবারেই ঠিক মনে হচ্ছিল। ‘খোঁচা খাওয়া বাঘে’র মতোই যেন কার্লোস হার্নান্ডেজরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সবুজ-মেরুন শিবিরের উপর। কিন্তু ম্যাচ নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে মোহনবাগান। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে আক্রমণে উঠতে থাকেন সনিরা। ত্রিশ মিনিট গড়াতে না গড়াতেই এর ফলও হাতেনাতে পায় সঞ্জয়ের টিম। সনির দুরন্ত পাস ধরে বলবন্ত গোল করে এগিয়ে দেন মোহনবাগানকে। এর পর যেন কিছুটা কোণঠাসা মনে হচ্ছিল ডেম্পোকে। বিরতির ঠিক আগেই সনির লাল কার্ড ম্যাচের বড় টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। যা নিয়ে পরে আক্ষেপের সুর শোনা গেল বাগান কোচের গলাতেও। “সনির লাল কার্ড না হলে তিন পয়েন্ট আমরাই পেতাম। ম্যাচের রাশ তো আমাদের হাতেই ছিল। কিন্তু দশ জন হয়ে যাওয়ার পর আমরা আসল খেলাটাই খেলতে পারলাম না।”

দ্বিতীয়ার্ধে দশ জনের বাগানকে কার্যত বলই ধরতেই দেয়নি ডেম্পো। টোলগের অনুপস্থিতিতে গোয়ার টিমে গোল করার লোক ছিল না। সে জন্যই খেলার ফল ১-১ ড্র হল। তবে বোয়া-বেলোরা কৃতিত্ব পাবেন একজন ফুটবলার কম থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ড্র রেখে কলকাতায় ফিরতে পারছেন বলে।

নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট আগে ডেম্পোর ব্রিটিশ ডিফেন্ডার অ্যাঙ্গাসের গোলে সমতা ফেরায় ডেম্পো। অথচ দ্বিতীয়ার্ধে ডেম্পো যা সুযোগ পেয়েছিল, সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে মোহনবাগানের এক পয়েন্ট নিয়ে ফেরা হত না। মোহনবাগানকে আটকে নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে পারায় খুশি ডেম্পোর স্টপগ্যাপ কোচ মরিসিও আফান্সো। ম্যাচের পর বলে দেন, “আমার ছেলেরা এ দিন দুরন্ত লড়াই করেছে। মোহনবাগানের মতো টিমকে আটকে নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে আবার।”

মাঝে দু’সপ্তাহ আই লিগ বন্ধ থাকছে। বিরতির পর বাগানের প্রথম ম্যাচ আবার ডেম্পোর সঙ্গেই। যুবভারতীতে। ২২ মার্চ লড়াইটা হবে মর্গ্যান বনাম সঞ্জয়ের মধ্যে। তবে এখন থেকেই মোহন কোচ কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতেই যেন বলে রাখলেন, “২২ মার্চ গোয়ার মাঠে খেলা হবে না। সে দিন দেখা যাবে ম্যাচের ফল কী হয়!” কিন্তু ওই ম্যাচে সনি নর্ডিকে পাবে না বাগান। এর পরই ডার্বি। সেখানে কি সনি খেলতে পারবেন? ইস্টবেঙ্গল কর্তারা খোঁজ নিচ্ছেন এখন থেকেই। বাগান কর্তারা জানাচ্ছেন, এটা এক ম্যাচের সাসপেনশন। লাল-হলুদ শিবির অবশ্য তা মানতে রাজি নয়। তাদের দাবি সরাসরি লালকার্ডে দু’ম্যাচের সাসপেনশন। ডার্বির কী মহিমা!

মোহনবাগান: দেবজিৎ, ধনচন্দ্র, বেলো, কিংশুক, প্রীতম, শেহনাজ, কাতসুমি (ডেনসন), বোয়া, শৌভিক, বলবন্ত (বিক্রমজিৎ), সনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mohun bagan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE