মরুশহরে আইসিসি-র জন্য ফুলের সঙ্গে রয়ে গেল কাঁটাও।
এগজিকিউটিভ বোর্ডের প্রথম দিনের বৈঠক শেষে প্রেস বিবৃতি দিয়ে আইসিসি “সর্বসম্মত সমর্থনের’’ কথা বলেছিল। আর তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সেই বক্তব্যের বিরোধিতা করে পাল্টা বিবৃতি দিল পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড। প্রেস বিবৃতি একবার জারি করার পর তার বিরোধিতা করা হচ্ছে, এ রকম ঘটনা প্রায় দেখাই যায় না। কারণ, মিটিংয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ধরনের বিবৃতি জারি করা হয়। কিন্তু আইসিসি-তে বিরোধ এখন এতটাই তীক্ষ্ন, যে সে রকম অভাবনীয় ঘটনাও ঘটছে।
আইসিসি-র কথার বিরোধিতা করে বলা হচ্ছে, এই সভায় কোনও বিষয়ে সর্বসম্মত হওয়ার অবকাশই যেখানে ছিল না, সেখানে বিবৃতিতে এই দু’টি শব্দ উল্লেখ করার মানে কী? বুধবার আইসিসি সভার শেষে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি পাল্টা প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়। যার মোদ্দা বক্তব্য হল, “প্রস্তাবগুলি নিয়ে পিসিবি-র গভর্নিং বডিতে আলোচনা হবে। তার পরই পাক বোর্ড এই সব প্রস্তাব নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবে আইসিসি-র পরবর্তী সভায়।”
আইসিসি যে ভাবে সরকারি বক্তব্য রেখেছে, তাতে অনেকেরই মনে হয়েছে, দুবাইয়ে সব বোর্ডই পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে। এ বার সিঙ্গাপুরে তার উপর সিলমোহর পড়া শুধু বাকি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডও এ দিন বলে দিয়েছে, “সবার সমর্থন আছে না নেই, তা তো বোঝা যাবে আইসিসি-র পরবর্তী সভায়, বিভিন্ন দেশের বোর্ডে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর। তা হলে ‘সর্বসম্মত’ কথাটা কী করে বলছে আইসিসি?”
পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের মনোভাব এটা বূুঝিয়ে দিচ্ছে যে মরুশহরে আপাতত যুদ্ধ বিরতিই হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা স্পষ্ট জানিয়েই দিয়েছে, “নিজেদের বোর্ডে আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত সমর্থন করা বা না করা নিয়ে কোনও মন্তব্যই করবে না সিএসএ।” আইসিসি যতই ক্রিকেট দুনিয়াকে ঐক্যবদ্ধ দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই কিন্তু ফাটল দেখা দিচ্ছে। ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার নীতি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান যেমন প্রতিবাদ করেছে, তেমনই কিছু দেশ বিশ্ব ক্রিকেট প্রশাসনের নয়া নীতিতে নিজেদের উন্নতি দেখতে পাচ্ছে। যেমন নিউজিল্যান্ড। আইসিসি-র সভায় তাদের প্রতিনিধি মার্ক স্নেডেন বলেন, “এই প্রস্তাবগুলো কার্যকর হলে নিউজিল্যান্ডের লাভই হবে।” বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের ক্ষমতা দখলের চেষ্টার মধ্যেও কোনও অন্যায় দেখছেন না তিনি। বরং বেশ খুশি। বলেন, “এতদিন ক্রিকেট বিশ্বের প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে ভারতের না থাকাটাই বরং সমস্যা ছিল। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া যৌথ উদ্যোগে এ বার ভারতকে টেনে আনার চেষ্টা করছে।” সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী আট বছরে তাদের বোর্ডের আয় ৫২ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৭০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার, এমনই হিসাব স্নেডেনের। ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও নিয়মিত ক্রিকেট মাঠে দেখা হবে তাদের বলে লাইভস্পোর্ট রেডিওর কাছে দাবি তাঁর। একই রকম হিসাব ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও। বিশ্ব ক্রিকেট প্রশাসনে পরিবর্তনের জোয়ার এলে তাদেরও আয় একশো শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের। তারা সমর্থনও করছে নয়া প্রস্তাবগুলিকে। বার্ষিক টেস্ট ক্রিকেট তহবিলের প্রস্তাবে বেশি খুশি ক্যারিবিয়ান বোর্ড। এর ফলে ভবিষ্যতে নিজেদের দেশে টেস্ট সিরিজ আয়োজন করা অনেক সহজ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন ক্রিস গেইলদের দেশের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy