Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ইস্টবেঙ্গলের বারান্দায় আবার রোদ্দুর

আর্মান্দো কোলাসোর সেই বিখ্যাত কপাল কি আই লিগের শেষ দিকে এসে আবার সোনা ফলাতে শুরু করল? না হলে কেন এমন হবে? বলজিৎ সিংহ সাইনি---শেষ গোল করেছিলেন সেই মার্কোস ফালোপার জমানায়। তারপর গ্যালারিতে বসে পায়ে প্রায় মরচে ধরে গিয়েছিল। রবিবার মাঠে নামার আট মিনিটের মধ্যেই ফের গোল এল তাঁর পা থেকে। পাঁচ মাস পর। লালরিন্দিকাগত বছর নভেম্বরে ডার্বিতে শেষ গোল। তারপর আবার।

মশাল জ্বালিয়ে চেস্ট বাম্প। রবিবার যুবভারতীতে গোলের পরে লালরিন্দিকা। ছবি: উৎপল সরকার ।

মশাল জ্বালিয়ে চেস্ট বাম্প। রবিবার যুবভারতীতে গোলের পরে লালরিন্দিকা। ছবি: উৎপল সরকার ।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল-২ (বলজিৎ, লালরিন্দিকা)

স্পোর্টিং ক্লুব-১ (বিভান)

আর্মান্দো কোলাসোর সেই বিখ্যাত কপাল কি আই লিগের শেষ দিকে এসে আবার সোনা ফলাতে শুরু করল?

না হলে কেন এমন হবে?

বলজিৎ সিংহ সাইনি---শেষ গোল করেছিলেন সেই মার্কোস ফালোপার জমানায়। তারপর গ্যালারিতে বসে পায়ে প্রায় মরচে ধরে গিয়েছিল। রবিবার মাঠে নামার আট মিনিটের মধ্যেই ফের গোল এল তাঁর পা থেকে। পাঁচ মাস পর।

লালরিন্দিকাগত বছর নভেম্বরে ডার্বিতে শেষ গোল। তারপর আবার। এ দিন মিজোরাম মিডিও-র পা থেকে বেরোল সেই বিখ্যাত ট্রেড মার্ক শটের দূরন্ত গোল। চোটের জন্য নামতেই চাইছিলেন না। কোচ তাকে জোর করেই নামিয়েছিলেন।

অভ্র মন্ডলএতদিন চাপা পড়েছিলেন দুই কিপার গুরপ্রীত সিংহ আর অভিজিৎ মণ্ডলের পারফরম্যান্সের নীচে। ছিলেন ব্রাত্য। এ দিন আই লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই আগুনে মেজাজে। তিন-তিনটি দুর্দান্ত সেভ। যা নিশ্চিত ভাবেই ইস্টবেঙ্গলকে ডুবিয়ে দিতে পারত।

সাড়ে তেইশ মাস পর স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়াকে হারাল ইস্টবেঙ্গল। দুই ব্রাত্য এবং অনেকদিন ফর্মে না থাকা এক ফুটবলারের সৌজন্যে। খেতাবের দৌড়ে এক ধাক্কায় লিগ টেবিলের চার নম্বরে উঠে আসা ইস্টবেঙ্গলে বারান্দায় আবার রোদ্দুর। আর্মান্দোর টিমের জন্য এটা ‘সবুজ সঙ্কেত’ কি না, সেটা অবশ্য জানা হল না। কারণ ড্রেসিংরুমে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন লাল-হলুদ কোচ। সাংবাদিক সম্মেলনেও আসেননি তিনি। জরিমানা থেকে বাঁচতে ম্যাচ কমিশনারের কাছে আর্মান্দোর ডাক্তারি সার্টিফিকেট জমা দিতে হল ক্লাব কর্তাদের।

বুকে পেস মেকার বসানো। বাইক দুর্ঘটনার পর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই চারিদিক থেকে তীব্র চাপ আর সমালোচনার ঝড় বইছিল তাঁকে উদ্দেশ্য করে। এসব সমলানোর জন্য অস্কার ব্রুজোর টিমকেই মনে হল নিশানা করেছিলেন আর্মান্দো। পাঁচ-পাঁচটা আই লিগ। দেশের সব ট্রফি জেতার অন্যনা গৌরব। কোনও কিছুই অধরা নয়। তা সত্ত্বেও কোচেদের টেকনিক্যাল এরিয়ার বাইরে গিয়ে লাল-হলুদ কোচ যে ভাবে হাত-পা ছুড়ছিলেন, রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তেড়ে যাচ্ছিলেন, দেখে মনে হল, স্পোর্টিং ক্লুব নয়, ম্যাচে ‘স্প্যানিশ বুল’ হয়ে উঠেছিলেন আর্মান্দোই।

ফেড কাপের ফাইনালে রানার্স হওয়ার পর পর লেখচিত্র নামতে শুরু করেছে স্পোর্টিংয়ের। গোয়ার ক্লাবটি তাই এখন একেবারেই ধারাবাহিক নয়। অবনমনের লড়াইতে থাকা মোহনবাগান, মহমেডানও তাদের তিন গোল দিয়েছে। ফলে ইস্টবেঙ্গল জিতবে প্রত্যাশিত ছিলই। ম্যাচটা চিডি-ডিকারা জিতলেন বটে কিন্তু সেই জয়ে ‘সুগন্ধী’ কম। রামধনুর বর্ণচ্ছটা নয়, নব্বই মিনিট জুড়ে ছিল মিস পাসের ছড়াছড়ি। একসঙ্গে চার-পাঁচটা পাস খেলা, তাও চোখেই পড়ল না।

দু’কোটির দুই বিদেশি উগা-মোগা চোটের জন্য খেলেননি। মাঠে যে দুই বিদেশি খেললেন সেই চিডি আর সুয়োকাও তো চূড়ান্ত ব্যর্থ। ফিটনেসের হাল এতটাই খারাপ যে, চিডির একটা হাফ টার্ন করতে লেগে যাচ্ছে অন্তত দশ সেকেন্ড! বল কন্ট্রোলে রাখতেও হিমশিম খাচ্ছেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার! আর সুয়োকা? আগের ম্যাচে দু’গোল করা জাপানি বোমা এ দিন ধানিপটকাও হতে পারেননি। অগত্যা সেই স্বদেশীয় নির্ভরতাবিরতির মুহূর্তে ডিকার পাস থেকে বলজিতের গোল। পরে ডিকার দূরপাল্লার গোলার মতো বাঁকানো শট এবং গোল। কিন্তু ২-০ এগিয়ে যাওয়ার পরও তো শেষ দশ মিনিট স্পোর্টিং-ই কাঁপুনি ধরিয়ে দিল অর্ণব-রাজুদের অঞ্চলে। গোয়ার ক্লাব ২-১ ও করে দিল শেষ মূহূর্তে। নিজের রক্ষণের কাঁপতে থাকা দেখে চিডিকে বসিয়ে স্টপার গুরবিন্দরকে নামাতে বাধ্য হলেন লাল-হলুদ কোচ।

স্পোর্টিং-এর স্প্যানিশ কোচ শনিবার বলেছিলেন, তাঁরা ‘স্প্যানিশ বুল’ বা ক্ষ্যাপা ষাঁড় হতে চান। বাস্তবে দেখা গেল, বৈমা-কালুদের টিম ‘মেনি বেড়াল’-ও নয়। গোয়ার টিম মানেই পাসের ফুলঝুরি আর গতি। মাটিতে বল রেখে মসৃণ ফুটবল। কোথায় সে সব? অস্কারের টিম কোনও পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছে বলে মনে হল না। কেমন যেন জড়ামড়ির ফুটবল। ফলে হল কি ম্যাচটা কখনওই চোখকে সুখ দিল না।

আপনার টিমের এত মিস পাস কেন? টিমের মধ্যে সংঘবদ্ধতার কেন এত অভাব? আর্মান্দোর জায়গায় সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসা সহকারী রঞ্জন চৌধুরী বললেন, “তিন পয়েন্ট পেয়েছি এটাই শেষ কথা। আমরা জিতেছি। এই জয়টা এখন টিমের জন্য দরকার ছিল।” রঞ্জনের কথা ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ খেতাব জেতার জন্য আই লিগের যে সাপ-লুডোর অঙ্ক রয়েছে, তাতে এখনও খেতাব জেতার সুযোগ আছে ইস্টবেঙ্গলের। এবং সে জন্য তাদের মোহনবাগানের দিকে অবশ্য তাকিয়ে থাকতে হবে।

সেটা কেমন? ইস্টবেঙ্গল তাদের বাকি পাঁচ ম্যাচ জিতল আর লিগ শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরু তাদের বাকি তিন ম্যাচ জিতলতা হলে কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন সুনীল ছেত্রীরাই। ইস্টবেঙ্গলরে খেতাব পেতে গেলে সেক্ষেত্রে বেঙ্গালুরুকে পয়েন্ট নষ্ট করতেই হবে।

এবং সেই মজাটা জেনেই সম্ভবত এ দিন ভি ভি আই পি বক্সে এসে বসেছিলেন করিম বেঞ্চারিফা। সামনের রবিবারই যুবভারতীতে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে খেলা ওডাফা-কাতসুমিদের। করিমের টিম বেঙ্গালুরুর পয়েন্ট কাড়তে পারলেই ইস্টবেঙ্গলের বারান্দায় রোদ্দুর আরও জোরাল হবে। খেলা শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি ঠোটে ঝুলিয়ে নেমে গেলেন করিম। দেখে মনে হল, উপভোগই করছেন বাগানের উপর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর নির্ভরতার ব্যাপারটা।

ইস্টবেঙ্গল: অভ্র, নওবা, রাজু, অর্ণব, রবার্ট, ডিকা, খাবরা, লোবো (বলজিৎ) (লেন), আব্রাঞ্জেজ, চিডি (গুরবিন্দর), সুয়োকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

east bengal i league armando ratan chakrabarty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE