Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

দল গড়া থেকে স্ট্র্যাটেজি সবই ডুবিয়ে দিল ব্রাজিলকে

আচ্ছা, ব্রাজিল সাত গোল খেয়েছে? না কি দিয়েছে? ম্যাচটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভোর রাতে নিজেকে চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করছে! সত্যি, ব্যাপারটা ঘটেছে তো? জার্মানির কৃতিত্ব এতটুকু কেড়ে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। হাজার হোক, জার্মান টিম বলে কথা! বিশ্বকাপ ফুটবলের সবচেয়ে ধারাবাহিক দেশ। তিন বারের চ্যাম্পিয়ন। এ বার নিয়ে আট বার ফাইনাল খেলবে।

বিশ্বরেকর্ড করে ক্লোজে। বিধ্বস্ত স্কোলারি। ছবি: উৎপল সরকার, এএফপি

বিশ্বরেকর্ড করে ক্লোজে। বিধ্বস্ত স্কোলারি। ছবি: উৎপল সরকার, এএফপি

সুব্রত পাল
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০৪:০২
Share: Save:

আচ্ছা, ব্রাজিল সাত গোল খেয়েছে? না কি দিয়েছে? ম্যাচটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভোর রাতে নিজেকে চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করছে! সত্যি, ব্যাপারটা ঘটেছে তো?

জার্মানির কৃতিত্ব এতটুকু কেড়ে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। হাজার হোক, জার্মান টিম বলে কথা! বিশ্বকাপ ফুটবলের সবচেয়ে ধারাবাহিক দেশ। তিন বারের চ্যাম্পিয়ন। এ বার নিয়ে আট বার ফাইনাল খেলবে। তবু ব্রাজিল সাত গোলে হারবে! তা-ও নিজের দেশের মাটিতে! বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো বিরাট মঞ্চে!

প্রবল ধাক্কাটা সামলে শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলের মহাবিপর্যয়ের যতটুকু কারণ মাথায় আসছে...

১) স্কোলারির এ দিনের দল গড়াতেই ভুল ছিল। কেন রাইট ব্যাকে দানি আলভেজ নয়? কেন মাইকন? আগের ম্যাচে কলম্বিয়া ম্যাচে উতরে যাওয়া গিয়েছিল বলে? কিন্ত কলম্বিয়া আর জার্মানি এক হল?

২) দানি আলভেজ আমার মতে বিশ্বের সেরা সাইড ব্যাক। বার্সেলোনায় নিয়মিত। টেকনিক্যালি সাউন্ড। ডিফেন্স সংগঠনে অসাধারণ। মাইকনকে যদি খেলাতেই হত, আমার মতে বার্নার্ডের জায়গায় খেলানো যেত। আরে, নেইমারের বদলি বার্নার্ড কতটুকু কী করতে পারে? মাইকন রাইট উইং খেললে ওর আক্রমণাত্মক মনোভাবটা হয়তো কাজে আসত স্কোলারির।

৩) থিয়াগো সিলভার না থাকাটা ডিফেন্স সংগঠনকে একেবারে নড়িয়ে দিয়েছিল। নেইমারের না থাকার চেয়েও এই ম্যাচে থিয়াগো সিলভার অভাবটা ব্রাজিলের আসল ক্ষতি।

৪) মাঝমাঠে ফার্নান্দিনহো আর গুস্তাভো ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসেবে একেবারে ফ্লপ মঙ্গলবার। পউলিনহো-গুস্তাভো জুটি মাঝমাঠে আগের ম্যাচগুলোয় অন্তত ব্রাজিলকে এ দিনের চেয়ে অনেক বেশি আশ্বস্ত রেখেছিল। আমার মনে হয়, শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়ার পর, এমনকী ২-০ হয়ে যেতে দেখার পরেও স্কোলারি মাঝমাঠে তিন জন ডিফেন্সিভ ব্লকার করে দিতে পারতেন। তাতে ডিফেন্সিভ সংগঠনটা একটু ভাল হতে পারত। তার পর প্রতি-আক্রমণে গিয়ে চেষ্টা করতে পারত ম্যাচে ফেরার।

৫) সবচেয়ে বড় কথা, এগারো মিনিটে প্রথম গোল খাওয়ার পরে ব্রাজিলকে দেখে মনে হচ্ছিল, ওরা যেন বারো মিনিটেই গোলটা শোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে! প্রচণ্ড অ্যাটাকিং খেলতে শুরু করে দিল এমন একটা বড় ম্যাচে, যে ম্যাচে ওদের ডিফেন্স নড়বড়ে। তার উপর শুরুতেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশন বলে প্রায় কিছু নেই এ দিন। প্রথম গোলের পর কিন্তু আরও আশি মিনিট ম্যাচ বাকি ছিল। অনেক গুছিয়ে নিয়ে গোল শোধের সময় পাওয়া যেত।

৬) নির্মম জার্মানরা যার পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে। ব্রাজিলের ডিফেন্স খুলে রেখে আক্রমণের সুযোগে প্রায় প্রতিটা প্রতি-আক্রমণে গোল তুলে নিয়েছে। দুই থেকে পাঁচ নম্বর মানে চারটে গোল ব্রাজিল খেয়েছে ছ’মিনিটে। অনেকটা ক্রিকেটে ছ’রানে চার উইকেট পড়ার মতো!

৭) আসলে শেষমেশ স্কোলারি বোধহয় টের পেলেন যে, কাকা, কুটিনহোকে এই দলে দরকার ছিল। লিভারপুলের হয়ে সুয়ারেজ এ বার প্রিমিয়ার লিগে যদি ৩৫ গোল করে থাকে, তা হলে তার অম্তত ১৫টা গোল কুটিনহোর অ্যাসিস্ট থেকে।

৮) উইলিয়ানের মতো চেলসির তরুণ ফরোয়ার্ডকেও এ দিন দরকার ছিল শুরু থেকে। চেলসির হয়ে ও এ বার দুর্দান্ত খেলেছে। দ্বিতীয়ার্ধে স্কোলারি যখন তাকে নামালেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ঠিক পওলিনহোকে নামানোর মতোই!


বেলোর স্টেডিয়াম। বেলোর রাস্তা। মঙ্গলবার বিপর্যয়ের পরে। ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে গোল-বন্যা

১৯৩০ আর্জেন্তিনা-৬ যুক্তরাষ্ট্র-১

উরুগুয়ে-৬ যুগোস্লাভিয়া-১

১৯৩৮ হাঙ্গারি-৫ সুইডেন-১

১৯৫৪ পঃ জার্মানি-৬ অস্ট্রিয়া-১

১৯৫৮ ব্রাজিল-৫ ফ্রান্স-২

১৯৬২ ব্রাজিল-৪ চিলি-২

১৯৭০ ইতালি-৪ পঃ জার্মানি-৩

২০১০ নেদারল্যান্ডস-৩ উরুগুয়ে-২

২০১৪ জার্মানি-৭ ব্রাজিল-১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fifaworldcup subrata pal brazil germany
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE