Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
আট গেল বাকি থাকল এক

কয়েক ঘণ্টার সফরে ফাইনাল যাওয়া দেখে নিলেন শাহরুখ

প্রায় বারো ঘণ্টা নাইটদের সঙ্গে কাটিয়ে, ইডেনে থেকে টিমকে ফাইনালে তুলে বুধবার মাঝরাতেই চার্টার্ড ফ্লাইটে মুম্বই ফিরে গেলেন শাহরুখ খান। কেকেআর মহাকর্তা বেঙ্কি মাইসোর, যিনি আবার রেড চিলিজের সিইও এ দিন বলছিলেন, “টিমের জয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত শাহরুখ। কিন্তু কোনও উপায় নেই। বুধবার গভীর রাতে চার্টার্ড ফ্লাইটেই ফিরে যেতে হচ্ছে শাহরুখকে। কাল খুব গুরুত্বপূর্ণ শ্যুট আছে।” আর কেকেআরের শহরে ঝটিকা সফর সেরে ফেরার আগে শহরের ক্রিকেটপ্রেমীদের কী বলে গেলেন কিং খান? বলে গেলেন, “এই ক’দিন আমি ইডেনে ছিলাম না তো কী, আপনারাই দায়িত্ব নিয়ে আমার টিমকে জিতিয়েছেন। থ্যাঙ্ক ইউ!”

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত ও রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

প্রায় বারো ঘণ্টা নাইটদের সঙ্গে কাটিয়ে, ইডেনে থেকে টিমকে ফাইনালে তুলে বুধবার মাঝরাতেই চার্টার্ড ফ্লাইটে মুম্বই ফিরে গেলেন শাহরুখ খান। কেকেআর মহাকর্তা বেঙ্কি মাইসোর, যিনি আবার রেড চিলিজের সিইও এ দিন বলছিলেন, “টিমের জয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত শাহরুখ। কিন্তু কোনও উপায় নেই। বুধবার গভীর রাতে চার্টার্ড ফ্লাইটেই ফিরে যেতে হচ্ছে শাহরুখকে। কাল খুব গুরুত্বপূর্ণ শ্যুট আছে।”

আর কেকেআরের শহরে ঝটিকা সফর সেরে ফেরার আগে শহরের ক্রিকেটপ্রেমীদের কী বলে গেলেন কিং খান? বলে গেলেন, “এই ক’দিন আমি ইডেনে ছিলাম না তো কী, আপনারাই দায়িত্ব নিয়ে আমার টিমকে জিতিয়েছেন। থ্যাঙ্ক ইউ!”

কিং খানের জিগবাজি। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

টানা হারে টিমের প্রতি ক্রমশ তিক্ত হয়ে পড়া শাহরুখ নাইটদের ভাগ্য যত পাল্টেছে, টিম নিয়ে আবার তত প্রগল্ভ হয়েছেন। যার পরিণতি বুধবারের ইডেন। এত দিন শ্যুটিংয়ের ফাঁকে মাঠে আসার সময় বের করতে পারেননি কিং খান। এ দিন মাঠ ছাড়ার সময় বললেন, “আমারও তো একটা পেশা আছে। সেই কাজে মুম্বইয়ে আটকে ছিলাম। টিমের জন্য চিয়ার করতে আসতে পারিনি।” তবে ইডেনে কেকেআরের তিন-তিনটে ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর তিনি এলেন, দেখলেন, ডিগবাজি খেলেন, আবার জিতলেনও। আর দেখিয়ে দিলেন, টিমের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা, টিমের সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ এতটুকু কমেনি। দেখিয়ে দিলেন, শহরের এই ভূখণ্ডটুকু এখনও তাঁরই সাম্রাজ্য।

কিন্তু টানা শ্যুটিং শিডিউল থেকে সময় বের করে রবিবার বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন তো শাহরুখ? তিনিই তো টিমের স্বঘোষিত চিয়ারলিডার-ইন-চিফ। চেন্নাইয়ে দু’বছর আগে তাঁর সেই উন্মাদনা এ বার দেখার সুযোগ পাবে না বেঙ্গালুরু? নাইট মালিক কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারলেন না। ইডেন থেকে বেরনোর সময় বলে গেলেন, “এখনও ঠিক জানি না, ফাইনালে মাঠে থাকতে পারব কি না। সে জন্য আমাকে শিডিউলে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। তবে অবশ্যই চেষ্টা করব রবিবার চিন্নাস্বামীতে গিয়ে দলের জন্য গলা ফাটানোর। দেখা যাক, পারি কি না।”

চিন্নাস্বামী তাঁকে পাবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য বিন্দুমাত্র চিন্তায় নেই ইডেন। শহরে আইপিএল শো-র ক্লাইম্যাক্সটা যে তার মনের মতো হয়েছে, কলকাতার ক্রিকেট-নেশাড়ুর কাছে সেটাই যথেষ্ট প্রাপ্তি। নাইটদের ফাইনাল-যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ তো আছেই। সঙ্গে শাহরুখ শো।

বিকেল পাঁচটার একটু আগে ইডেনে ঢোকা থেকে সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ মাঠ ছাড়া মাঝের পুরোটা সময় যেন তিনি আর তাঁর টিম একই সূত্রে গাঁথা। কর্পোরেট বক্সের ব্যালকনিতে চেনা চেহারার আবির্ভাবের মুহূর্তটা অবশ্য নাইট-ভক্তরা ভুলে যেতে চাইবেন। ঠিক ওই সময়ই তো পরপর রবিন উথাপ্পা আর মণীশ পাণ্ডের ডাগআউটে ফেরা। গ্যালারিতে তখন ‘শাহরুখ অপয়া’ জাতীয় ফিসফাস। আর টেনশনে কিং খানের একটা হাত কোমরে, অন্যটা অধৈর্য ভাবে বারবার চিরুনির মতো মাথায়। ছেলে প্রথম বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে ঢুকলে তার বাবার যা অবস্থা হতে পারে, শাহরুখের দশাও তখন ঠিক তাই। পঞ্জাব ইনিংসের প্রথম পাঁচটা ওভার দেখলেন নাইট-ডাগআউটের পাশে, বেঙ্কি মাইসোরের সঙ্গে ঠায় দাঁড়িয়ে। এ দিন এতটাই টেনশনে ছিলেন শাহরুখ যে, বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আর প্রকাশ্যে আসেননি।

এলেন যখন, রবিবার আইপিএল ফাইনালের টিকিট ততক্ষণে রিজার্ভ করে ফেলেছে কেকেআর। ক্লাবহাউস আর বি ব্লকের মাঝখান দিয়ে দৌড়ে মাঠে ঢোকা। ঢুকেই গ্যালারির দিকে দেদার ফ্লাইং কিস বিলোনো। নাইট কর্তাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক। প্রীতি জিন্টাকে জড়িয়ে একেবারে কোলে তুলে নেওয়া। নাইটরা তখন মাঠে ভিকট্রি ল্যাপে ব্যস্ত। নাইট মালিকও উল্টো দিক দিয়ে ইডেন প্রদক্ষিণ শুরু করলেন। ‘বাবা’ আর ‘ছেলে’দের সাক্ষাৎ মাঝমাঠে হল তো কী, তার উষ্ণতা ইডেনে উপস্থিত কারওরই বোধহয় অধরা থাকল না। রবিন উথাপ্পা দিয়ে শুরু। একে একে নাইটরা প্রত্যেকে এসআরকের বুকে।

আসল চমকটা অবশ্য তখনও বাকি ছিল। সেটা এল খানিকক্ষণ পরে, ক্লাবহাউসের ঠিক সামনেটায় যখন টিভি ক্যামেরাম্যানদের দাঁড় করিয়ে তাদের সামনে ডিগবাজি খেলেন কিং খান! আইপিএল ফাইভ জেতার পর কার্টহুইল করেছিলেন শাহরুখ। এটাও হয়তো সে রকম কিছুরই ট্রেলার।

চমক এখানেই শেষ নয়। এ দিন মাঠকর্মীদের বকশিস দেওয়ার তদারকি করার সময় শাহরুখ শোনেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু শাহরুখ গিয়ে পৌঁছনোর আগে বেরিয়ে যান মমতা। অগত্যা? সোজা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাড়ি!

শুধু কেকেআর নয়, শহরের সব কিছুর সঙ্গেই বোধহয় নাড়ির যোগ তৈরি হয়ে গিয়েছে শাহরুখের। তাই রাত পৌনে ন’টা নাগাদ ইডেন ছাড়ার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন, ট্রফি জিতলে দু’বছর আগের মতো আবার ইডেন মাতাতে আসবেন তিনি আর তাঁর নাইটরা। বললেন, “আশা করি, আগের বারের মতো এ বারও চ্যাম্পিয়ন হয়ে কলকাতায় আসব সেলিব্রেট করতে। এ বার হয়তো আরও বড় করে সেলিব্রেশন হবে, দেখে নেবেন।”

আসুন। বিশ্বকাপ ফুটবলের আগে প্রাণভরে একটা শাহরুখ শো হলে ক্ষতি কী?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE