ইপিএল সেভেন ফাইনালের বাহাত্তর ঘণ্টা আগে নাইটদের ‘টিম থিম’ খুঁজতে খুব বেশি দূর যেতে হবে না। কলকাতা নাইট রাইডার্সের থিম সংটাই এখন ফাইনালের আগে নাইটদের মন্ত্র। করব, লড়ব, জিতব রে!
যে মন্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেল এ দিন টিম হোটেলে, নাইট সংসারের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের কথায়। টানা আটটা জয়ে আসা অপ্রতিরোধ্য মোমেন্টাম আর টিমের নিজস্ব, নীরব আত্মবিশ্বাস— দুইয়ে মিলে কেকেআর এখন যে এভারেস্টে পৌঁছে গিয়েছে, সেই চুড়ো বোধহয় প্রথম আইপিএল ট্রফি জয়ের সময়ও অধরা ছিল গৌতম গম্ভীরদের। উমেশ যাদব তাই যখন বলে দিচ্ছেন, “ফাইনালে পঞ্জাবকে পেলে বেশি ভাল। তবে যে-ই আসুক, আমরা রেডি। ” শুনে এতটুকু অত্যুক্তি বলে মনে হচ্ছে না।
প্রথম সাতে পাঁচটা হারার পর কী ভাবে এল রূপকথার এই প্রত্যাবর্তন? জিজ্ঞেস করলে নাইট সংসারের কেউ কেউ একটু বিরক্তই হচ্ছেন। ক্যাপ্টেন গম্ভীর কয়েক দিন আগে যেমন বলেছিলেন, তাঁর টিম কখনওই লড়াইয়ের বাইরে চলে যায়নি। প্রথম দিকের কয়েকটা ক্লোজ ম্যাচ হেরেছে, যেখান থেকে যে কোনও টিমই হারতে পারে। ব্যাটিং কোচ ডব্লিউ ভি রামনও মনে করেন, প্রত্যাবর্তন করার মতো জায়গায় তো কোনও দিন নামেইনি তাঁদের টিম। যে টিমটা বরাবর লড়াইয়ের মধ্যে আছে, তার আবার নতুন করে ফিরে আসার দরকারটা কোথায়? উমেশ যাদবের অবশ্য মনে হচ্ছে, প্রথম কয়েকটা ম্যাচে তাঁদের ওপেনিং জুটি ঠিকঠাক ক্লিক না করাটাই ছিল মূল সমস্যা। এ দিন তিনি বললেন, “আমাদের বোলিং কিন্তু প্রথম থেকেই ভাল ছিল। প্রথম দিকে ব্যাটিংটা একটু স্ট্রাগল করছিল। ওপেনিং জুটি সেট করছিল না। ওটা ঠিকঠাক সেট হয়ে যাওয়ার পর কিন্তু আমাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বেশির ভাগ ম্যাচে তো ওপেনিংয়েই একশোর উপর রান উঠে গিয়েছে।” সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “রবি আর গম্ভীরের ওপেনিং জুটি সেট করে যাওয়ায় পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের উপরও চাপ কমে গিয়েছে এখন। তা ছাড়া আমাদের মিডল অর্ডারও এখন ফর্মে। পাঠান, সাকিব, টেন্ডো—সবাই ভাল খেলছে।”
“ট্রফি জেতার বারুদ আমাদের আছে। এ বার টিমটা নতুন ছিল, ঠিক কম্বিনেশন বের করার একটা ব্যাপার ছিল।
যেটা করার সব কৃতিত্ব গৌতম গম্ভীরের। ও মোটেও ডিফেন্সিভ ক্যাপ্টেন নয়, যে ম্যাচ বাঁচানোর জন্য খেলে।
উথাপ্পা, নারিন, সাকিব সবাই দারুণ খেলছে। আর পাঠানকে দেখে তো বোলার আর
ফিল্ডাররা ভয় পেয়ে যাচ্ছে।” —ওয়াসিম আক্রম
হার থেকে জয়ে ফেরার নেপথ্যে আর একটা কারণ তুলে ধরছেন নাইট শিবিরের কেউ কেউ। সেটা হল, নিজ নিজ ক্ষমতার উপর আস্থা না হারানো। মাইক হর্নের দুধর্র্র্ষ সব অ্যাডভেঞ্চারের ভিডিও দেখে অনুপ্রেরণা নেওয়া। যার মধ্যে সাম্প্রতিকতম, মাকালু শৃঙ্গজয়ের ভিডিও। প্লেয়ারদের সাপোর্ট স্টাফের সব সময় মনে করিয়ে দেওয়া, আমরা পাশে আছি। দাওয়াইটা অক্রিকেটীয়, কিন্তু ক্রিকেট মাঠে মোক্ষম ভাবে কার্যকর। যে টোটকার চলমান উদাহরণ ইউসুফ পাঠান। উমেশ যাদবও বলছেন, এই টোটকায় তিনি ফল পেয়েছেন বুধবার। যার জোরে ইডেনের টার্নিং ট্র্যাকে পেসার হয়েও বল করতে পেরেছেন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। “সাপোর্ট স্টাফ আর ক্যাপ্টেনের বিশ্বাস ছিল পেসারদের উপর। ওঁরা জানতেন যে টার্নিং ট্র্যাক হলেও পেসাররা ভাল পারফর্ম করতে পারবে। এক দিক থেকে মর্কেলের পেস আর বাউন্স। অন্য দিক থেকে আমি। প্রথম দুটো উইকেট পড়ে যাওয়ার পরই বুঝে গিয়েছিলাম, এখানে কিছু করা যেতে পারে।”
নাইটদের বোলিং তর্কাতীত ভাবে আইপিএল সেভেনের সেরা বোলিং আক্রমণ। যে আক্রমণকে এত ধারালো করে তোলার প্রধান কারিগর ওয়াসিম আক্রম। বুধবার ম্যাক্সওয়েল-বধের নায়ক উমেশ বলেই দিলেন, ম্যাড ম্যাক্সের উইকেটটা এসেছে আক্রমের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে। তাঁর শেখানো ‘মাইন্ড গেম’ ব্যবহার করে। কী সেই মাইন্ড গেম? “ম্যাক্সওয়েল স্ট্রোক প্লেয়ার, সব বলে মারতে চায়। ওকে একটা-দুটো ডট বল দিলে পরের বলটায় বড় শট মারতে চাইবেই। ওকে বল করার সময় নিজের বৈচিত্রর উপর ফোকাস করছিলাম। নিজেকে নিজে বলছিলাম, প্রত্যেকটা বল যেন এক গতিতে না হয়।” একটু থেমে আবার, “ঠিক করে রেখেছিলাম যে ওকে লুজ বল দেব না। লেগ স্টাম্পের দিকে ও সেরা শটগুলো খেলে, তাই ও দিকে বল করব না। অফস্টাম্পের বাইরে বাইরে বল করে যাবো। চারটে ডট বল করেই ম্যাক্সওয়েলের উইকেটটা পেয়ে গেলাম।” তবে পঞ্জাব ম্যাচে উমেশের সেরা শিকার ম্যাক্সওয়েল নন, বীরেন্দ্র সহবাগ। “ওই উইকেটে বীরু পাজি থেকে গেলে কিন্তু খেলে দিতেন। সহবাগ ফিরে যাওয়ায় টিমের আত্মবিশ্বাস অন্য জায়গায় চলে গেল। ভারতের উইকেটে খেলার ওঁর যা অভিজ্ঞতা, তাতে উনি থেকে গেলে আমাদের সমস্যা হয়ে যেত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy