Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘শ্রেণিশত্রু’ ওয়ার্নের রহস্যময় নেট আবির্ভাবে তৈরি হয়ে গেল শুক্রবারের যুদ্ধের আবহ

শেন ওয়ার্ন নিজে টুইট না করা পর্যন্ত মনে হচ্ছে রহস্যটা রহস্যই থাকবে। আর ওয়ার্ন বোধহয় সেটা উপভোগও করছেন। মিরপুর মাঠে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলে কোনও উত্তর না দিয়ে এ দিন বেরিয়ে গিয়েছেন। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে বুধবার সকালে তিনি হাজির হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকা প্র্যাকটিসে। সেখানে এক ঘণ্টার কাছাকাছি সময় ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কথা বলেন।

সেনা ছাউনির চরিত্ররা। দক্ষিণ আফ্রিকা প্র্যাকটিসে হঠাৎ তাহিরের কোচ শেন ওয়ার্ন। জিরিয়ে নিচ্ছেন ডেল স্টেইন। ছবি: এএফপি।

সেনা ছাউনির চরিত্ররা। দক্ষিণ আফ্রিকা প্র্যাকটিসে হঠাৎ তাহিরের কোচ শেন ওয়ার্ন। জিরিয়ে নিচ্ছেন ডেল স্টেইন। ছবি: এএফপি।

গৌতম ভট্টাচার্য
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

শেন ওয়ার্ন নিজে টুইট না করা পর্যন্ত মনে হচ্ছে রহস্যটা রহস্যই থাকবে। আর ওয়ার্ন বোধহয় সেটা উপভোগও করছেন। মিরপুর মাঠে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলে কোনও উত্তর না দিয়ে এ দিন বেরিয়ে গিয়েছেন।

কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে বুধবার সকালে তিনি হাজির হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকা প্র্যাকটিসে। সেখানে এক ঘণ্টার কাছাকাছি সময় ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কথা বলেন। খুচরো প্র্যাকটিস দেন। লেগস্পিনার ইমরান তাহিরকে টিপস দিতে থাকেন। মিরপুর থেকে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে আধ ঘণ্টা দূরের ঢাকায় ইন্ডিয়ান টিম হোটেলে। ভারতীয় শিবিরে আলোচনা শুরু হয়ে যায়, ও তা হলে অমিত মিশ্রকে সামাল দিতে সাউথ আফ্রিকা ওয়ার্নকে ডাকল?

ঐতিহাসিক ভাবে ওয়ার্ন কখনও দক্ষিণ আফ্রিকার বন্ধু নন। বরং তিনি সবচেয়ে ডাকসাইটে প্রোটিয়া শিকারি। ডারেল কালিনানদের লেগ স্পিন খেলতে না পারার কুখ্যাতিটা তাঁদের ‘চোকার’ অপবাদের মতোই সর্বজনবিদিত। লেগ স্পিন না খেলতে পারার অসহ্য এই ভাবমূর্তি যার জন্য তৈরি হয়েছে, ঘোষিত সেই শ্রেণিশত্রু কী করে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল প্রাক্কালে অনামন্ত্রিত হয়ে জরুরি অনুশীলনে ঢুকে পড়তে পারে?

দক্ষিণ আফ্রিকান মিডিয়া ম্যানেজারের দাবি— পারে। তিনি বললেন, “ওয়ার্ন মনে হয় হোটেলের ঘরে একা শুয়ে থেকে বোর হচ্ছিলেন। তাই ঘুরতে ঘুরতে আমাদের প্র্যাকটিসে চলে এসেছিলেন।” হাসিম আমলারও সাংবাদিক সম্মেলনে একই রকম মনোভাব। “নো আইডিয়া, ওয়ার্ন কোথা থেকে এলেন।”

আর একটা অ্যাঙ্গল শোনা গেল। হোস্ট ব্রডকাস্টার পাঠিয়েছিল, যাতে দক্ষিণ আফ্রিকান নেটে ইন্ডিয়া ম্যাচের দু’দিন আগে তিনি বল করছেন দেখিয়ে একটা বাড়তি রোমাঞ্চ টিভি দর্শকদের জন্য তৈরি করা যায়। স্টার স্পোর্টস ক্রিকেট কভারেজ এখন যে ভঙ্গিতে হচ্ছে তা হল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও স্টার প্লাসে চলতে থাকা সুপারহিট সব সোপের মতোই একটা জমজমাটি গল্প। ক্রিকেটের পবিত্রতা নিয়ে স্টারের প্রোডিউসারদের ‘অনুরাগ’ কী পর্যায়ে, সেটা তারা সচিনের বিদায়ী ম্যাচেই দেখিয়েছে। যেখানে শেষ ওভারে সচিন জীবনের শেষ ইনিংস খেলার সময় ক্যামেরা বড় স্ক্রিনে তাঁর মায়ের আতঙ্ক ভরা মুখ আর হুইলচেয়ারে বসা কোচ আচরেকরকে ধরে রেখেছে। সচিন ব্যাট করতে যাওয়ার সময় ক্রিজ অবধি তাঁর সঙ্গে গিয়েছেন এক জন ক্যামেরাম্যান। স্টারের ক্রিকেট কভারেজ একটাই স্কোরবোর্ড দেখতে অভ্যস্ত— টিআরপি।

মিরপুর মাঠেও শুনলাম, ওয়ার্ন এসেছিলেন স্টার স্পোর্টসের গাড়ি করেই। তাদের লোকের সঙ্গে। তার মানে তো পরিষ্কার।

না। বাংলাদেশ স্থিত স্টারের প্রোডাকশন হেড বলছেন, তিনিও কিছু জানেন না। তাঁর জুনিয়র ছেলেটির বক্তব্য, “রাত দুটোর সময় জেনেছি ওয়ার্নের প্র্যাকটিসে যাওয়ার জন্য একটা গাড়ি লাগবে।” এমনও হতে পারে বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড হয়তো তাঁকে ইমরান তাহিরের জন্য ডেকেছিলেন। ভারতের মতো বেপরোয়া ব্যাটিং লাইন আপের জন্য ওয়ার্নের চেয়ে আদর্শ ডাক্তার আর কে আছে? একটুও অবাক হবো না টিম মনোবিদ প্যাডি আপটন এর মধ্যে থাকলে। এই আইডিয়াটা যারই হোক, টিম ইন্ডিয়াকে সামান্য ভাবাল তো নিশ্চয়ই যে, মিরপুর উইকেট বিচারে সেরা স্পেশ্যালিস্টের পরামর্শ নিয়ে রাখল দক্ষিণ আফ্রিকা।

ধোনি কি চিন্তায়? ছবি: দেবাশিস সেন।

ওয়ার্নের দক্ষিণ আফ্রিকা নেটে আগমন যদি দিনের সবচেয়ে আকস্মিক ঘটনা হয়। সবচেয়ে প্রত্যাশিতটাও ক্রিকেট ময়দান থেকেই পাওয়া গেল। ফুটবল খেলতে গিয়ে চোট পাওয়া যুবরাজ সিংহের এ দিন প্র্যাকটিসে যেতেই না পারা। রাতে যুবরাজের এক বন্ধু বলছিলেন, “মিডিয়া ওকে দোষ দেবে যে হাঁটুতে এমনিতেই হাল্কা চোটের ওপর আবার ফুটবল খেলার কী দরকার ছিল। তারা বুঝবে না, যুবি এখন ‘না’ করার জায়গায় নেই। টিম ম্যানেজমেন্ট যা চাইছে, ওকে এখন তা করতেই হবে।” শুনলাম, যুবি সেমিফাইনালে এখনও অনিশ্চিত নন। তবে গোড়ালিতে বেশ অস্বস্তি রয়ে গিয়েছে। সৌরভ বলছিলেন, “একটাই সুবিধে, হাতে প্রায় দেড় দিন আছে।” একই সঙ্গে তিনি অবাক হয়ে যাচ্ছেন খালি পায়ে ফুটবল খেলার কথাটা শুনে। “আরে, মিরপুরের সেকেন্ড মাঠ। ওটা কি লর্ডস নাকি যে পুরু ঘাসের হবে? তা ছাড়া খালি পায়ে কত কিছু হতে পারে। পেরেক ফুঁটে যেতে পারে। পায়ে কাঁটা ফুঁটতে পারে।”

ভারতের গড়পরতা নেট সেশন শেষেও এখন ফুটবল হয়। বুধবার অবশ্য ফুটবলের ‘এফ’-ও পাওয়া যায়নি। মনে হয় না প্র্যাকটিসে আর হোটেল থেকে ফুটবল আনা হয়েছিল বলে। ফাতুল্লাহ মাঠে এ দিন নেট করল টিম ইন্ডিয়া। এটা ঢাকার দক্ষিণে এবং আরও একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠ। ঢাকা থেকে পৌঁছতে হয় নারায়ণগঞ্জ পেরিয়ে। সেই নারায়ণগঞ্জ— যার ঘাট থেকে ছাড়া স্টিমার কত বাংলা উপন্যাস আর চলচ্চিত্রে ফিরে ফিরে এসেছে।

নারায়ণগঞ্জ অদূরে ভারতীয় প্রস্তুতির মধ্যেও একটা স্টিমারের গন্তব্যের দিকে ছেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত। তিন বছর আগে এই দিনটাতেই ওয়াংখেড়েতে ধোনিরা বিশ্বকাপ হাতে তুলেছিলেন। থার্ড অ্যানিভার্সারিতে অন্য ফর্ম্যাটের জন্য নতুন স্বপ্ন হল, ডেল স্টেইনদের শর্ট বল ঠিকমতো খেলতে হবে আর ওদের হার্ড হিটারদের থামাতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মোক্ষম শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে পাশবিক শক্তিতে সব হয়। ব্যোম ভোলানাথ উচ্চারণ করার আগেই বল গিয়ে পড়তে পারে গ্যালারিতে। সইদ আজমলের মতো স্পিনারের যদি এই হাল হয়, মিশ্ররও যে কোনও কিছু হতে পারে!

সকালে পাকিস্তান টিমের সঙ্গে হোটেলে দেখা করতে গিয়ে দেখি, শুনশান। পাখিরা ম্যানেজার জাকির খানকে ফেলে সব ভোরের ফ্লাইটেই উড়ে গিয়েছে। জাকির ম্লান গলায় বললেন, “গন্দি ক্রিকেট। মনটাই খিঁচড়ে রয়েছে।” লাহৌর বিমানবন্দরের বাইরে ভিড়-টিড় হয়নি তো? এক পাক কর্তা জানালেন, ওরা দুবাই হয়ে গিয়েছে। নানা জন নানা ফ্লাইটে দেশে ফিরবে। বোঝা গেল, চতুর টি-টোয়েন্টি স্ট্র্যাটেজি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE