এসসিজি নয়, বিরাট কোহলির মাথায় আপাতত অন্য আদ্যক্ষর ঘুরছে পিকে!
সিডনিতে সিরিজের শেষ টেস্ট শুরু মঙ্গলবার, ৬ জানুয়ারি। অস্ট্রেলিয়া এ দিন পুরোদমে ট্রেনিং শুরু করে দিলেও এখনও পর্যন্ত মাঠমুখো হয়নি টিম ইন্ডিয়া। ভারত অধিনায়ক বরং শুক্রবার রাতটা কাটালেন তাঁর বান্ধবী অনুষ্কা শর্মার নতুন সিনেমা দেখে। যার পর টুইট করে জানালেনও, পিকে তাঁর দারুণ লেগেছে। সিডনির রাস্তায় অনুষ্কা-বিরাটের একসঙ্গে ছবিও দেখা গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বিরাটের ভারতের চিন্তায় সিডনি টেস্টের জায়গা আপাতত কতটা, বলা কঠিন। তবে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহলের চিন্তার অনেকটা জুড়েই টিম ইন্ডিয়া। অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম যেমন খবর করেছে, ইশান্ত শর্মা নাকি ভারতের টেস্ট সহ-অধিনায়ক হতে চলেছেন। যদিও ভারতীয় টিম বা বোর্ড এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। ইয়ান চ্যাপেল যেমন বলছেন, সিডনিতে পাঁচ জন বোলার নিয়ে নামা উচিত বিরাটের। অন্য দিকে টম মুডি অফস্টাম্প নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন শিখর ধবনকে। মাইকেল ক্লার্ক আবার লিখছেন, ভারত অধিনায়কের মতো কঠিন চাকরি আন্তর্জাতিক খেলায় আর একটাও নেই। তাঁর একদা প্রতিপক্ষ মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে ভরিয়ে দিচ্ছেন প্রশংসায়। জিওফ লসনের মনে হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ‘রাক্ষস’গুলোকে যদি বশে আনতে পারেন বিরাট, সিডনিতে যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারেন, তা হলে জনপ্রিয়তার শিখর হবে তাঁরই।
বিরাটের ব্যাটিং প্রতিভায় যতটা মুগ্ধ লসন, ততটাই অবাক মাঠে তাঁর ‘যুদ্ধং দেহি’ মানসিকতা দেখে। ব্যাট করার সময় যে সমানে বোলার বা আশপাশের ফিল্ডারদের সঙ্গে উত্তপ্ত ‘আলোচনা’ চালাতে থাকেন বিরাট, তাতে বিশেষ প্রভাবিতও। মেলবোর্ন টেস্টে মিচেল জনসনের তাঁর দিকে বল ছোড়ার ঘটনা তুলে ধরে লসন এ দিন বলেছেন, “জনসন যে কোহলির কাছে ক্ষমা চাইল, দেখে তো মনে হল সেটা আন্তরিক। তখন কোহলি ঠিক স্টাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে। তখন যদি ও ক্রিজের মধ্যে না থাকত, তা হলে ফিল্ড অবস্ট্রাক্ট করার জন্য ওকে আউট দিয়ে দেওয়া হত।” সঙ্গে সংযোজন, “কোহলি অবশ্য অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়াতে প্রকাশ্যে ঘটনাটার নিজস্ব একটা ব্যাখ্যা দিল। আসলে কিছু কিছু প্লেয়ার আছে যারা উত্তেজনা ছাড়া ভাল খেলতে পারে না।”
তবে বিরাটকে আগাম সতর্ক করে দিচ্ছেন লসন। বলছেন, “বিরাটের এই সব কাণ্ড ক্রমশ বোকা-বোকা হয়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ এত উত্তপ্ত প্রতিক্রিয়া দিলে ও ভঙ্গুর হতে থাকবে। দেড়শো কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসা পরের বলটা কী ভাবে সামলাবে, তা না ভেবে ও ভাবতে শুরু করবে, পরের স্লেজিংটা কী ভাবে সামলাবে? মেলবোর্নে ওর মেজাজের জন্য টেস্ট হেরে যেতে পারত ভারত। প্লেয়ারদের দুর্ব্যবহার তাদের খেলার উপর প্রভাব ফেলুক, কোচেরাও সেটা চান না।”
সিডনির ডার্লিং হারবারের রাস্তায় বিরাট-অনুষ্কা। ছবি: টুইটার
কোহলির মতো চরিত্র নিয়ে টিম মিটিংয়ে কী ধরনের আলোচনা হতে পারে, তার উদাহরণ দিয়েছেন লসন। বলেছেন, “টিম মিটিংয়ে বিপক্ষ প্লেয়ারদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একদল, যাদের স্লেজ করা হবে। একদল, যাদের সতর্কে স্লেজ করা হবে। আর একদল, যাদের একদমই স্লেজ করা যাবে না। অ্যালান বর্ডার শেষ বিভাগে পড়ত। কোহলি পড়ে প্রথমটায়। আগে তো ব্যাটসম্যানদের স্লেজ করা হলে জবাবে তাঁরা স্কোরবোর্ডটা দেখিয়ে দিতেন। ওটার চেয়ে কার্যকর আর কী হতে পারে? স্লেজিংয়ের জবাবে ব্যাটসম্যানের মুখ খোলা মানেই সে যুদ্ধে হেরে গিয়েছে। আর মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় স্লেজ করাটা খুব প্রভাবশালী নয়। হরভজন সিংহ আর অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস সেটা ভাল জানবে!”
লসন যখন কোহলি নিয়ে মগ্ন, ক্লার্ক তখন ডুবে কোহলির পূর্বসূরির চিন্তায়। তিনি ভেবেই পাচ্ছেন না, দিনের পর দিন একশো তিরিশ কোটি ভারতবাসীর প্রত্যাশা আর প্যাশন সামলে ক্রিকেটটা খেলেন কী ভাবে ধোনিরা। “তিনটে ফর্ম্যাটে খেলে আর উইকেটকিপিং করে ধোনি কী ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যেত, আমার ভাবনার বাইরে। টেস্ট টিমে ও যে শূন্যতাটা রেখে গেল, সেটা ভরাট করা কঠিন,” বলে ক্লার্ক আরও যোগ করেছেন, “এ ক’বছরে এমএসের সঙ্গে অনেক গল্প হয়েছে। বেশিটাই মোটরবাইক নিয়ে। আমি বাইক ভালবাসি, কিন্তু ধোনির মতো বাইকের ভক্ত নই। রবিবার একটা বারবিকিউ পার্টিতে ওর সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমার হার্লে-ডেভিডসন বাইকটা নিয়ে যাব। যাতে ধোনি ওটায় একটু ঘুরে নিতে পারে।”
ঘুরতেই পারেন ধোনি। ওয়ান ডে সিরিজ শুরু হতে এখনও সপ্তাহদুয়েক বাকি। তার আগে তো তাঁর জীবনে আপাতত অখণ্ড অবসর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy