সৌরভের সঙ্গে ক্রিকেট আড্ডায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ডা. কুণাল সরকার ও দীপ দাশগুপ্ত। ছবি: উত্পল সরকার
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ক্রিকেটারদের গায়ে ট্যাটু কম, ব্যাটে রান দেখতে চান। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে দেখতে চান টিম ইন্ডিয়ার যোদ্ধাদের মধ্যে সেই কমিটমেন্ট, যা ওয়ান্ডারার্সে পাকিস্তান বধের পর দেখিয়েছিলেন কোনও এক সচিন তেন্ডুলকর।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় খুব অবাক হবেন, যদি মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম ২৯ মার্চ মেলবোর্নে কাপ ফাইনালটা খেলতে না নামে। বাকি বিশ্ব যতই ভারতের বিরুদ্ধে বলুক, সৌরভ-দর্শন বরাবরই স্বতন্ত্র। ভারতের সর্বকালের অন্যতম দুঁদে অধিনায়কের মনে হয়, দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়াই সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে। আর সেখানে তো ভারতীয়দের চাপ নেওয়ার ক্ষমতাটা সহজাত। জীবনের প্রতি সিঁড়িতে যে পরীক্ষায় উতরোতে হয়।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের স্কচের বোতলটা আজও মনে আছে। যেটা দোসরা এপ্রিল ২০১১ খুলেছিলেন। ভারতের ম্যাচ দেখতে বসলে তুকতাকের অভ্যেস তাঁর বহু দিনের। পরম মনে করেন, ওয়াংখেড়েতে ভারতের বিশ্বজয়ের রাতে টিমের লাক খুলে দিয়েছিল তাঁর স্কচের বোতল!
ক্রিকেটের রাজসূয় যজ্ঞের বাকি দিন দশেক। শীতের শহরে তার আঁচ তো পড়বেই। আড্ডা-আলোচনা-তর্কের এখন একটাই বস্তু, একটাই বিষয় কাপটা থাকবে তো? যার একটা দেখা গেল বিশ্বকাপের উপর গৌতম ভট্টাচার্যের বই ‘কাপমহলা’র উন্মোচনে। বোরিয়া মজুমদারের সঞ্চালনায় যেখানে কাপ-তর্কে ঢুকে পড়ল সমাজের নানা শ্রেণি। কেউ বাইশ গজের, কেউ বিখ্যাত ডাক্তার, কেউ টেনিস কিংবদন্তি, কেউ টলিউড সুপারস্টার। সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপাল বসু, ডঃ কুণাল সরকার, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, সস্ত্রীক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পাওলি দাম, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়— কে নেই!
এবং অতি অবশ্যই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বিশ্বকাপ-আড্ডা তাঁকে বাদ দিয়ে সম্ভব? ২০১৫ বিশ্বকাপে ধোনিদের সম্ভাবনা নিয়ে সৌরভ বললেন। বললেন, কী ভাবে প্রেমে বিধ্বস্ত এক জুনিয়রকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে হাসিয়েছিলেন। বললেন, একটা বিশ্বকাপ জিততে দরকার টুর্নামেন্ট জুড়ে ভাল খেলা, ফিটনেস আর চাপ সামলানো। বললেন, “ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মানুষ চাইলেই সব পেয়ে যায়। কোথাও গিয়ে দাঁড়াতে হয় না। আর এখানে? আমি ছ’বছর ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন ছিলাম। বাংলা ক্যাপ্টেন কত দিন ছিলাম, মনেও নেই। এখন সিএবি সচিব। এত বছরে এক বারও ইডেনে নিজের পছন্দের পিচটা পেলাম না!”
সৌরভ বিশ্বকাপ নিয়ে বলছেন মানে অবধারিত আসবে ২০০৩ আর এত দিন ধরে জো’বার্গের সেই কাপ-ফাইনাল ঘিরে জমানো নস্ট্যালজিয়া। আবির চট্টোপাধ্যায়ের স্বগতোক্তি, “আগে কত ক্রিকেট দেখতাম। সেই দিনগুলো যদি ফিরে আসত!” দীপ দাশগুপ্ত এখনও বিস্মিত হয়ে যান, ’০৩ বিশ্বকাপে রাহুল দ্রাবিড়কে দিয়ে সৌরভের কিপিং করানোর কথা ভাবলে। “কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কখনও দেখিনি দাদিকে এক পা পিছিয়ে যেতে।” যিশু সেনগুপ্ত আবার জানতে চাইলেন, সৌরভ সত্যিই নিজের পছন্দের টিম নামানোর জন্য নির্বাচনী বৈঠকে চাপ দিতেন কি না? ‘দাদাগিরি’ স্বীকার করে সৌরভের উত্তর, “হ্যাঁ, কিন্তু হারলে নির্বাচকরা শুনতে চাইতেন না।”
কিন্তু সে তো বারো বছর আগের কথা। এ বারেরটায় কী হবে? প্রথম যুদ্ধটাই তো পাকিস্তানের সঙ্গে। কয়েক দিন পরেই আবার এবি ডে’ভিলিয়ার্স। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘গাঙ্গুলি’ বিশ্বাস করেন, অ্যাডিলেডের মাঠ ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের কাছে বেশি সমস্যার হবে। বিশ্বাস করেন, ধোনির টিমের সেই একই ক্ষমতা আছে যা তাঁর ’০৩-এর টিমের ছিল। বিশ্বাস করেন, এবিকে ফেরাতেও লাগে ওই একটাই বল। যত বড় ব্যাটসম্যান, তত বেশি চাপ। যেটা সামলানোই কাপের আসল যুদ্ধ। যা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি খুব ভাল পারেন।
এমএসডি নাকি চাপ না থাকলে এক, চাপে পড়লে আর এক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy