ভারতীয় ক্রিকেটে হালফিলের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর উপাখ্যান রোববার মুম্বই মহানগরীতে অভিনীত হওয়ার সম্ভাবনা! নামে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি সভা। আসলে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে তাঁর মসনদ থেকে ফেলে দেওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিপ্লব।
কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, শ্রীনি জমানা শেষ হওয়ার কাউন্টডাউন রোববারই শুরু হয়ে যাবে কি না। নাকি শ্রীনি তাঁর শেষ মুহূর্তে নিস্তার পাওয়ার বিখ্যাত ভাগ্য সমেত আবার বেরিয়ে যাবেন? তবে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বময় প্রভু যে যথেষ্ট কম্পিত, তার নমুনা বারবার পাওয়া গিয়েছে শনিবার। যখন ক্রমাগত তিনি ফোন করে গিয়েছেন একাধিক ক্রিকেট কর্তাকে।
সবাইকে মোটামুটি এক কথা বলেছেন: এটা একটা পাগলামি করতে যাচ্ছে বিরোধীরা। ওদের ফাঁদে পা দিও না। ভারতীয় ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে যাবে। সকালে প্রথম ফোন তিনি করেন কার্যনির্বাহী বোর্ড-প্রধান শিবলাল যাদবকে। শিবলাল রোববার সভা পরিচালনার অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন। তাঁকে শ্রীনি হুঁশিয়ার করে দেন শশাঙ্ক মনোহর সম্পর্কে। বলেন, “ওকে কিছুতেই বেশি আক্রমণাত্মক হতে দিও না। সভা তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”
শ্রীনি অবশ্যই জানেন না, বিরোধীরা শিবলালকে কথা দিয়েছেন, শ্রীনি-কাঁটা দূর হলে শিবলালকেই আইসিসিতে পাঠানো হবে। ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত ‘দুর্জনেরা’ বলছেন, এমন প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন বলেই না শ্রীনির বিরুদ্ধে গিয়ে জরুরি সভাটা ডাকলেন শিবলাল।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের জেরে বোর্ডের এমন আপৎকালীন অবস্থাতেও ওয়ার্কিং কমিটির কোনও সভা ডাকা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নে সুর চড়িয়েছিল একাধিক ক্রিকেট সংস্থা। তাদের সমবেত চাপেই রোববারের সভাটা ডাকতে বাধ্য হয়েছেন বোর্ড সচিব। যে সভা এক রকম ভারতীয় বোর্ডের মিনি-নির্বাচন। কারণ, মনোহরের নেতৃত্বে বিরোধীরা যে সব প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছেন, তাতে ভোটাভুটি অনিবার্য। শ্রীনি-রাজে এর আগে কখনও ভোট হয়নি। এখানে সব কিছুই চলে সর্বসম্মতিক্রমে। রোববার একান্তই পরিস্থিতি যদি ভোটে চলে যায়, তা হলে ভোটের সংখ্যা মোট আঠারো। প্রেসিডেন্ট, সচিব আর কোষাধ্যক্ষ বাদ দিয়ে পনেরো জন কার্যকরী কমিটির সদস্য। পাঁচ ভাইস প্রেসিডেন্টও সভায় থাকবেন, কিন্তু তাঁদের কোনও ভোট নেই।
বিরোধীদের ধারণা তাঁরা সহজে জিতবেন। শ্রীনি-পক্ষের বিশ্বাস, রাজত্বের ওপর যত আক্রমণই হোক, তা অক্ষত থাকবে।
শ্রীনি শনিবার সকালে পূর্ব ভারতের বিখ্যাত ক্রিকেটকর্তাকে মাস দুয়েক বাদে ফোন করেছিলেন। একই কথা বলেন, ভারতীয় ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে যাবে ওদের রাস্তায় গেলে। কর্তাটি তখন বলেন, “কোনও চিন্তা করবেন না। কিন্তু আপনার চোখ অপারেশন হয়েছে খবরে দেখলাম। চোখ ভাল আছে তো?” শ্রীনি উত্তর শুনেই বুঝে যান, এই কর্তার হাতে থাকা জোড়া ভোট ও-দিকে যেতে পারে। অতএব রাজত্ব অক্ষত রাখতে আরও জোরদার স্ট্র্যাটেজি দরকার।
তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণের কর্তারা কেউ কেউ আইনি প্যাঁচপয়জারের কথাও ভাবছেন। মনোহরকে কি কোনও ভাবে সভায় ঢোকা থেকে বিরত করা যায়? প্রায় তিন বছর বাদে তিনি বোর্ডের বৈঠকে যোগ দিতে রোববার সকালে মুম্বই উড়ে আসছেন। শোনা গিয়েছিল মধ্যিখানে তিনি বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থাতেও ছিলেন না। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাঁর আইনি এক্তিয়ার আছে কি না সভায় যোগ দেওয়ার।
শ্রীনি বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনীও দিতে রাজি নন। তাঁর ভয়, কাল যদি এক বার প্রস্তাবগুলো সভায় গৃহীত হয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের সামনে চলে যায়— তাঁর দু’কুল যাবে। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির তদন্ত বোর্ড কী ভাবে করবে, আগামী মঙ্গলবারের শুনানিতে সেটাই জানাতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। শ্রীনি এতটাই চিন্তিত যে, এ দিন ফোনে তাঁর অনুগত সদস্যদের বলেছেন, তদন্ত কমিটি যদি করতে হয় আমি দু’টো নাম দিচ্ছি। এদের অবশ্যই রাখবে। শ্রীনি প্রস্তাবিত নাম হল প্রাক্তন সিবিআই কর্তা মাধবন এবং রবি শাস্ত্রী। এর মধ্যে শাস্ত্রীর নামটা বিরোধীদের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব কমিটি গঠন নিয়ে বাগবিতণ্ডা হতে বাধ্য।
বিরোধীরা রোববার বিকেলেই এক লাফে বেড়াল মেরে ফেলতে চান। ত্রিমুখী প্রস্তাব পেশ করবেন তাঁরা। নিজেদের জোরদার করার জন্য তাঁরা শরদ পওয়ারকেও আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নির্বাচনের এই ভরা বাজারে পওয়ার আসবেন এমন নিশ্চয়তা এখনও পাওয়া যায়নি।
জগমোহন ডালমিয়া অবশ্য শনিবার রাতেই পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁর স্লোগান হল, ভারতীয় ক্রিকেট শুদ্ধকরণ করো। অর্থাৎ বকলমে শ্রীনি হটাও। বিরোধী শিবিরের তিনি হলেন কৃষ্ণ। অর্জুন নন। অর্জুন অবশ্যই মনোহর। যাঁর দুঃসাহসী অ্যাডভেঞ্চার ঝেড়ে ফেলার জন্য শ্রীনি যথাসাধ্য করে যাচ্ছেন।
শ্রীনির অপ্রত্যাশিত কোনও আইনি প্যাঁচে আগেই কুপোকাত না হয়ে গেলে বিরোধীরা তিন দফা প্রস্তাব রোববার পেশ করতে চান।
এক, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি থেকে অবিলম্বে শ্রীনির অপসারণ। তিন সদস্যের এই কমিটিতে আরও দু’জন হলেন শিবলাল যাদব এবং রাজীব শুক্ল। বিরোধীরা চাইছেন শ্রীনির বদলে মুম্বইয়ের রবি সবন্ত বা বাংলার চিত্রক মিত্রকে নিযুক্ত করতে। কাজটা মোটেও সহজ হবে না। কারণ শ্রীনির সমর্থকেরা বলবেন, সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে থাকতে বলেছে। কোনও কমিটি থেকে নাম তুলে নিতে মোটেও বলেনি।
দুই, নতুন তদন্ত কমিটি গড়তে বলবেন বিরোধীরা। এখানেও নাম নিয়ে মতবিরোধ হতে বাধ্য। মনোহররা চাইবেন বিচারপতি মুদগল জাতীয় নির্ভীক নাম। শ্রীনি সমর্থকেরা বাধা দেবেন। তাঁরা চাইবেন নিজেদের পছন্দের প্যানেল।
তিন এবং সবচেয়ে ‘রক্তক্ষয়ী’ তিন। বিরোধীরা দাবি তুলবেন আইসিসিতে শ্রীনির প্রতিনিধিত্ব করা চলবে না। যত দিন না আইনি জটিলতা পুরো কাটছে, তত দিন শিবলাল আইসিসিতে যাবেন। এই প্রস্তাব ভোটে পাশ হলে তো শ্রীনির আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়াই বিপন্ন হয়ে যাবে। কোনও মতেই এটা তিনি কার্যকর হোক চাইবেন না।
বিরোধীরা আশাবাদী, রোববার প্রস্তাবগুলোর সব ক’টাই ভোটে পাশ করিয়ে তাঁরা বিশেষ সাধারণ সভায় নিয়ে যাবেন। আর সেখানেও নাকি ভোটে জিতবেন। ভারতীয় ক্রিকেটে পালাবদলের হাওয়া উঠেছে, এমন একটা খবর কিন্তু দেশের ক্রীড়াবাণিজ্য আর টিভি মহলে চালু হয়ে গিয়েছে।
এ বার দেখার, রোববার সেই ঝোড়ো হাওয়াটাকেও শ্রীনি আশ্বস্ত করতে পারেন কি না যে, সব কিছু আগের মতোই আছে। আমিই প্রভু।
অন্য খেলায়: হাইল্যান্ড গোল্ডকাপ সেমিফাইনালে বুলান ক্রিকেট অ্যাকাডেমিকে ৪ উইকেটে হারাল মেনল্যান্ড সম্বরণ অ্যাকাডেমি (নীল)। প্রথমে ব্যাট করে বুলান ১০৫ তোলে। জবাবে মেনল্যান্ড সম্বরণ ১০৮-৬। আর্য পাঁজা ৩ উইকেট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy