বিগ বি প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট মন দিলেন ম্যাচে। তার ফাঁকেই পাশে বসা ‘পিকু’-র পরিচালক সুজিত সরকারের সঙ্গে অল্পস্বল্প আলোচনা। যুবভারতীর আলো নিভে যাওয়া বুঝতে পারেন সুজিত আর অভিষেকের সঙ্গে কথা বলে।
আনন্দবাজারের সামনে পড়ে গেলেন হসপিটালিটি বক্স থেকে ফেরার সময়। গজানন সারোগিকে মনে পড়ছে? শুনেই প্রশ্নকর্তার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালেন অমিতাভ। মুখে খেলে গেল হাইভোল্টেজ হাসি। বললেন, “আরে ওটা তো দারুণ অনুভূতি? অনেকটা আজকের মতো। আপনি জানেন!”
কে এই গজানন আর কী সেই অনুভূতি? পিছিয়ে যেতে হবে ষাটের দশকে। যে দিন ট্রেনে চেপে এই শহরেই জীবিকা অন্বেষণে এসেছিলেন তরুণ অমিতাভ। সে দিন হাওড়া স্টেশনে তাঁকে আনতে গিয়েছিলেন হরিবংশরাই বচ্চনের বন্ধু গজানন সারোগি। কট্টর মোহনবাগান সমর্থক। সে দিন আবার লিগে মোহনবাগানের ম্যাচ। অমিতাভের ট্রেন দেরিতে হাওড়ায় ঢুকেছিল বলে গজানন বন্ধুপুত্রকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার আগে সোজা ব্যাগপত্তর নিয়েই ঢুকে পড়েছিলেন মোহনবাগান মাঠে। কলকাতায় পা রেখেই অমিতাভের প্রথম পরিচয় ময়দানের ফুটবলের সঙ্গেই।
এ দিন কেমন দেখলেন শহরের এক নম্বর ফুটবল স্টেডিয়াম? জবাবে বিগ বি, “দারুণ অনুভূতি। নস্ট্যালজিক।” শোনা যায়, আপনি মোহনবাগান ফ্যান। আজ কার সমর্থক? এ বার আর কথা নয়। দেখিয়ে দিলেন গায়ের কালো জ্যাকেটে চেন্নাইয়ান এফসি-র প্রতীক। তার পরেই সটান হাঁটা নিজের সোফার দিকে।
যুবভারতীতে তাঁর ‘ট্র্যাডিশনাল ফেভারিট’ দলের সবুজ-মেরুন জার্সি বদলে বসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। পুরোদস্তুর চেন্নাইয়ান সমর্থক হয়ে। হরমনজ্যোত্ সিংহ খাবরা, এলানোদের হয়ে পুরো নব্বই মিনিট গলা ফাটিয়ে গেলেন পুত্র অভিষেকের সঙ্গে।
গ্যালারিতে মাইকেল হোল্ডিং, ইয়ান বিশপ, শোয়েব আখতাররা। পরমব্রত, রিয়া সেন, সদ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও। এআইএফএফ সচিব কুশল দাস, ভাইচুং, কোলাসোরা। তবে ‘হুজ হু’-দের ছাপিয়ে যাবতীয় আকর্ষণ ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিলেন একজনই। এক ও অদ্বিতীয় অমিতাভ বচ্চন।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় গিয়ে জড়িয়ে ধরতেই তাঁর পিঠে স্নেহের পাল্টা চাপড় শাহেনশার। সৌরভ জায়া ডোনার কাছে গিয়ে স্বভাবসিদ্ধ রসিকতা মেশানো প্রশ্ন, “অ্যাই, তোমার স্বামীর কাছে তোমার নাচের স্কুলের কথা শুনেছি। কবে আমাকে সেখানে নেমন্তন্ন করবে বল তো?”
ডোনা: খুব শিগগির। আমার স্কুলের সেলিব্রেশনে স্পেশ্যাল গেস্ট হয়ে আসতে পারবেন তো?”
অমিতাভ: আসতেই হবে।
বিগ-বি-র পাশের গ্যালারিতে বসেই আটলেটিকোর পতাকা হাতে উন্মাদের মতো চিত্কার করছিলেন পানিহাটির রামচন্দ্র পাল। খেলা দেখতে দেখতেই সে দিকে চোখ ফেরালেন অমিতাভ-অভিষেক। ছেলেকে হেসে কিছু একটা বললেন। তার পর এগিয়ে গেলেন সে দিকে। ডাকলেন ওই সমর্থককে। দুই গ্যালারির মাঝের ব্যারিকেডের উপর দিয়ে হাত মেলানোর ফাঁকেও রসিকতা, “উফ্, কী চিত্কারটাই না করছ! একটু আমাদের হয়েও চেঁচাবে?”
আর বলবন্ত হাত দিয়ে বল জালে ঢোকাতেই মস্ত লাফ! যা দেখে আর্মান্দো কোলাসো বললেন, “সেই বম্বে টু গোয়া রিলিজের সময় যা ছিল তাই আছে!” আর আটলেটিকো দে কলকাতা-ক অন্যতম মালিক হর্ষ নেওটিয়া বলছেন, “অমিতজির ফ্যান ছিলাম। আছি। থাকব।”
ততক্ষণে বাবুল সুপ্রিয় এসে বসেছেন পাশের সোফায়। কিন্তু অমিতাভের সোফায় জায়গা থাকলেও বসলেন না। কেন? মাঠ ছাড়ার আগে গায়ক-মন্ত্রী বলে গেলেন, “তিরানব্বই থেকে অমিতজির সঙ্গে শো করছি। উনি যে সোফায় বসেন সেটা একান্ত ওঁরই। লেজেন্ড আর বাবুল একই সোফায় হতেই পারে না। হবেও না।”