এ দিন বৈঠকের মাঝে আটলেটিকোর দুই প্রতিনিধি গিয়েছিলেন বারাসত স্টেডিয়াম দেখতে। কিন্তু অনুশীলনের জন্য সেখানকার মাঠ দেখে খুশি হলেও দূরত্ব ভাবাচ্ছে তাঁদের। বুধবার সকালে তাই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল মাঠ ফের দেখতে যাবেন তাঁরা। বৈঠকে যুবভারতীতে ফুড কোর্টের জন্য জোরালো সওয়াল করেন তাঁরা। নেপথ্যে যুক্তি, এতে আয় বাড়ানোর আরও একটা রাস্তা খোলে। দর্শকও ফুটবল বিনোদনের সপ্তম স্বর্গে পৌঁছবে রসনা তৃপ্ত হলে।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে বিশাল যুবভারতী চক্ষুস্থির করে দিয়েছিল আটলেটিকো মাদ্রিদের মালিক মিগুয়েল মারিনের। যুবভারতী পুরোদস্তুর জরিপ করে তিনি বলে বসেন, “হোয়াট আ জাইগ্যানটিক স্টেডিয়াম!” তার পরেই ছুড়ে দেন প্রশ্নটা, “এই মাঠেই নাকি মেসি, অলিভার কানরা খেলে গিয়েছে? পা পড়েছে মারাদোনার?” এর পরেই তাঁর মন্তব্য, “এত বিশাল স্টেডিয়ামে এত কীর্তি! আগামী দিনে নতুন অতিথি আসলে তাঁকে কিন্তু বলতে ভুলবেন না, এই মাঠে আটলেটিকো মাদ্রিদের দলও খেলে।”
মিগুয়েল জানতে চান, যুবভারতীর বাকেট চেয়ারের সংখ্যা, ভিভিআইপি এবং প্রেস বক্সের আসন ও কার পার্কিং-এর ব্যাপারে। বলেন, “দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কোনও আপস নয়। এই ব্যাপারে কিন্তু আমরা বেশ কঠোর।” মাঠ ছাড়ার সময়ও প্রশ্ন শেষ হয়নি আটলেটিকো মাদ্রিদ মালিকের। এ বার সাফ জানতে চাইলেন, “২০১৭ তে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য মাঠের কৃত্রিম ঘাস তুলে ফেলা হলে তা কবে নাগাদ হবে? পুলিশ কন্ট্রোল রুম কোথায়? ড্রেসিংরুমটা এক বার দেখান তো?” ড্রেসিংরুম দেখলেন খুঁটিয়ে। বাদ গেল না স্নানঘরের শাওয়ারও। এক সাংবাদিক এরই মাঝে স্পেনের ক্লাবটির মালিককে বললেন ১৯১১ সালে তাঁদের লাল-সাদা জার্সি ব্যবহার করার বছরেই এই শহরের মোহনবাগান শিল্ড জিতে রেকর্ড গড়েছিল। যা শুনে মিগুয়েলের ছোট্ট প্রতিক্রিয়া, “গ্রেট!”
দুপুরের পর ইন্টারভিউ দিতে বাইপাসের ধারের অভিজাত হোটেলে গিয়েছিলেন হোসে রামিরেজ ব্যারেটো এবং স্পোটির্ং ক্লুব দ্য গোয়ার কোচ অস্কার ব্রুজো। তবে দু’জনেই বেরিয়ে বলে যান, “ইন্টারভিউ কম, গল্প বেশি হল।” স্পেনের ভিগোতে বেড়ে ওঠা অস্কার বললেন, “আমি স্পোর্টিং-এর কোচ আছি, থাকব। আটলেটিকো কর্তারা জানতে চেয়েছিলেন ভারতীয় ফুটবল এবং ফুটবলারদের সম্পর্কে। আমি তা জানিয়েছি।” আর রাতে লুসিয়ানোকে নিয়ে নৈশভোজে বেরোনোর আগে ব্যারেটোর রসিকতা, “এত প্রস্তুতি নিয়ে গেলাম কিন্তু কনফার্মড হলাম কোথায়? ওরা তো আমার কাছ থেকে কলকাতার ফুটবলে বারো বছরের অভিজ্ঞতা জানতে চাইছিলেন।”
সবুজ তোতাও মুগ্ধ সাক্ষাৎকার পর্বে সৌরভের উৎসাহদান দেখে। বললেন, “প্রথমে খুব টেনশন হচ্ছিল। কিন্তু সৌরভই বলল, ব্যারেটো, টেনশন নয়। মন খুলে গল্প করো। ব্রাজিলীয় হয়েও পর্তুগিজের বদলে ওদের সঙ্গে স্প্যানিশেই গল্প করেছি। মনে তো হল ওরা খুশি।”
মিগুয়েল থেকে ব্যারেটো বৈঠকে যাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ সেই সৌরভ কী বললেন? বিকেলে বাড়ি ফেরার আগে সৌরভ বলে গেলেন, “দু’পক্ষই বৈঠকে অনেক প্রস্তাব দিয়েছে। আজ কিছু কথা হল। বাকি কথা বুধবার হবে। সেখানে ফেডারেশন এবং আইএমজি-আর-এর প্রতিনিধিরাও থাকবেন।” বুধবারের এই বৈঠকের পরেই ঘোষণা করা হবে কলকাতার দলের নাম এবং উদ্বোধন হবে জার্সির। ভিতরের খবর, দলের তিনটি নাম বাছা হয়েছে। কিন্তু জার্সি? সেটা কি আটলেটিকোর মতোই লাল-সাদা হবে? শোনা যাচ্ছে, আটলেটিকোর লাল-সাদা জার্সির মতোই লালচে হতে চলেছে কলকাতার দলের জার্সি।
যে জটিলতা কাটেনি
• যুবভারতী ও সরকারি পরিকাঠামো কতটা ব্যবহার করা যাবে?
• দাভিদ ভিয়া, গাবিদের মতো প্রথম সারির তারকারা কলকাতার দলে খেলতে পারবেন কি?
• অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য জুন মাসে যুবভারতী সংস্কারের কাজ শুরু হলে সেপ্টেম্বরে কোন স্টেডিয়ামে খেলা হবে?