ফের শুরু প্রস্তুতি। ইরানের বিরুদ্ধে নামার আগে বেলো হরাইজন্তের মিনেইরো স্টেডিয়ামে মেসি। ছবি: এএফপি
ক্লাবে সতীর্থ। বিশ্বকাপে বিপক্ষ। তাই আট বছরের অভিশাপ কাটার পর যেখানেই যাচ্ছেন তাঁর নামের সঙ্গে নেইমারের নামটাও জুড়ে দিচ্ছেন সমর্থকরা। ‘ব্রাজিলের বোমা’র পর বসনিয়া ম্যাচে গোল করে তিনিও ফর্মে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে! কিন্তু ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধে ব্রাজিলের মহাতারকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আসেননি বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি লিও মেসি।
বসনিয়াকে হারানোর পরের দিন আর্জেন্তিনার প্র্যাকটিস শেষে এলএম টেন বলে দেন, “নেইমারের সঙ্গে লড়তে আসিনি বিশ্বকাপে। ও আমার সতীর্থ। আমার বন্ধু। মানুষ হিসেবেও দারুণ। আমাদের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক। জানি ব্রাজিল আর আর্জেন্তিনার মধ্যে লড়াইটা মাঠে বা মাঠের বাইরে কতটা। কিন্তু আমাদের মধ্যে ব্যাপারটা ও রকম নয়।”
মারাকানায় মেসির গোলের উৎসবে উচ্ছ্বাস যতটা ছিল, তার থেকেও বেশি ছিল স্বস্তি। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় গোলের জন্য আট বছর ৬২৩ মিনিট অপেক্ষা করতে হল যে ফুটবলের রাজপুত্রকে। যদিও মেসি বলছেন, “বিশ্বকাপে অনেক দিন গোল পাইনি বলে নয়, গোলটা দলকে চিন্তামুক্ত করেছিল বলেই উচ্ছ্বাসটা বেশি ছিল।” তবে আর্জেন্তিনা অধিনায়ককে আরও বেশি স্বস্তি দিয়েছে বসনিয়ার বিরুদ্ধে জয় পাওয়াটা। বিশেষ করে প্রথমার্ধে দলের হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর। জয় পেলেও আর্জেন্তিনাকে যে আরও উন্নতি করতে হবে সেটা কিন্তু সাফ বলে দিচ্ছেন মেসি।
“স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ নিয়ে আশঙ্কা থাকে। আমরাও সামান্য নার্ভাস ছিলাম। এটা প্রথম ম্যাচের আগে সব দলের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ম্যাচটা জেতা। আর সেটা আমরা জিতেছি। কিন্তু আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে।” প্রথমার্ধে আর্জেন্তিনার খেলা দেখে সমর্থকরা হতাশা গোপন করেননি। মেসি নিজেও হয়তো সেটা জানেন। তাই বলে দিয়েছেন, “বসনিয়াকে প্রথমার্ধে আমরাই খেলতে দিয়েছি। অনেক বার ওদের পায়ে বল তুলে দিয়েছি। ওদের গোলে আমাদের শট নেওয়া খুব কঠিন হয়েছে। কারণ, আমরা ওদের গোলের চেয়ে অনেক দূরে ছিলাম।” সঙ্গে যোগ করেন, “তবে আর্জেন্তিনার দ্বিতীয় গোলটা আমাদের বিরাট স্বস্তি দিয়েছে। কারণ, সেই সময় ম্যাচটা আরও কঠিন হয়ে উঠছিল। গোলটা আমার কাছে বিশেষ করে স্বস্তির। ভীষণ স্পেশ্যাল।”
দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্তিনার জ্বলে ওঠার কারণ কী? মেসিদের ঠিক যে ফর্মে দেখতে চায় সমর্থকরা। মেসি বলেছেন, “দ্বিতীয়ার্ধে ইগুআইন নামার পর আর্জেন্তিনার আক্রমণাত্মক ফুটবল স্টাইলটাই আমাদের বেশি পছন্দের। অ্যাটাকিং খেলার সময় আমাদের বল পজেশন যেমন বেশি থাকে, তেমনই অনেক বেশি ফরোয়ার্ড পাস খেলি। আমাদের প্রথম ম্যাচের লাইন-আপটা অ্যাটাকিং ফুটবল খেলার পক্ষেই বেশি ভাল।” পাশাপাশি প্রথমার্ধে দলের পরিকল্পনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল সেটাও মেনে নেন আর্জেন্তিনীয় ক্যাপ্টেন। তার দায়ও নিজের কাঁধেই নেন। “প্রথমার্ধে আমি অ্যাটাকিং থার্ডে একা পড়ে যাচ্ছিলাম। তবে আমরা প্রথম ম্যাচে দু’টো সিস্টেমই ব্যবহার করে দেখলাম। ম্যাচের কয়েকটা সময় আমরা যেমন খেলেছি তাতে আমি খুশি। তবে এটাও সত্যি যে, কয়েকটা সময় আমরা ভাল খেলিওনি। তার পিছনে আমার ভুলত্রুটি একটা কারণ।”
ত্রুটি অবশ্য এখানেই শেষ নয়। খেলা শুরুর আগে ম্যাচের ম্যাস্কট খুদে বালকটির সঙ্গে হাত মেলাননি বলেও মেসির সমালোচনা কম হয়নি। আর্জেন্তিনীয় মহাতারকা যদিও ব্যাপারটা মানতে চাননি। বলে দেন, “এই নিয়ে আমার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে আমার কানে এসেছে। বিশ্বাসই হচ্ছে না ঘটনাটা। কেন আমি বাচ্চাটার সঙ্গে হাত মেলাব না! ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না। জানি না, তখন কোন চিন্তায় ডুবে ছিলাম।” সঙ্গে আরও বলেন, “অনেক কিছুই তো বলা হচ্ছে আমায় নিয়ে। ওখানে আরও দুটো বাচ্চা ছিল। ওদের সঙ্গেও তো কথা বললাম। এ সব কথার কোনও মানে হয় না। আমারও তো বাচ্চা আছে, ভাইপোরা রয়েছে। একটা বাচ্চার সঙ্গে এ রকম ব্যবহার কখনও করতে পারি না।”
প্রায় সব দলই বিশ্বকাপের অভিযান শুরু করে ফেলেছে, তার মধ্যে এগিয়ে কে? প্রথম ম্যাচের বিচারে বিশ্বকাপের ফেভারিট বাছতে বসাটা ঠিক হবে না বলে মনে করেন আর্জেন্তিনীয় ক্যাপ্টেন। তাঁর মতে অনেক দলই যা পারফর্ম করেছে তার থেকে অনেক ভাল খেলার ক্ষমতা ধরে। তবে তার মধ্যেও এখনও পর্যন্ত জার্মানি আর নেদারল্যান্ডস প্রথম ম্যাচের বিচারে তাঁর কাছে এগিয়ে।
আর্জেন্তিনার কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়াও প্রথম ম্যাচে টিমকে আহামরি নম্বর দিচ্ছেন না। দশের মধ্যে ছয়। তা ছাড়া বিরতিতে মেসিকে সাহায্য করতে পরিবর্ত নামানোটাই সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে বলে মনে করেন বর্ষীয়ান কোচ। বলে দেন, “আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। প্রথমার্ধের পর যে পরিবর্তন করেছি সেটা মেসিকে সাহায্য করার জন্য। মেসি আরও বল সাপ্লাই পেতে শুরু করার পর ম্যাচের রং পাল্টে যায়।”