বাংলাকে হারিয়ে রেলের উল্লাস।
পরিণাম— বিরক্তি, যন্ত্রণায় বারবার লক্ষ্মীর চোখমুখ কুঁচকে ফেলা। ১৮৫-র টানাটানির সংসারে দরকার প্রতিপক্ষ ব্যাটিংকে শুরুতেই পঙ্গু করে দেওয়া। কিন্তু লক্ষ্মীকে উল্টে দেখতে হল, পরের পর বাউন্ডারি বেরোচ্ছে। থার্টি ইয়ার্ডস সার্কেলে কুৎসিত ফিল্ডিংয়ের প্রতিযোগিতা চলছে তাঁর সতীর্থদের মধ্যে!
পরিণাম— অশোক দিন্দার বিখ্যাত ‘ফায়ারি স্পেল’ আজ হাওয়া! বেঙ্গল এক্সপ্রেস প্রথম উইকেটটা পেলেন রেল একশো পেরিয়ে যাওয়ার পর। শেষের বিজ্ঞাপন আরও হতাশাজনক। টানা নো বল করে যাচ্ছেন বাংলার এক নম্বর পেসার। ক্রমাগত ফ্রি হিট এবং বাউন্ডারি!
পরিণাম— চলতি ক্রিকেট মরসুমে আরও একটা বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল এবং বিদায়। রঞ্জির পর বিজয় হাজারে। মহারাষ্ট্রের পর রেল। প্রতিপক্ষর নামই শুধু পাল্টাল, বাংলার টুর্নামেন্ট-ভাগ্য নয়। এ বার যেন নিয়মই হয়ে গিয়েছে যে, সর্বভারতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল পর্যন্ত লক্ষ্মীরা স্বপ্নের ক্রিকেট খেলবেন। এবং সেমিফাইনালে উঠে তাঁরা এমন এক ক্রিকেট-বিজ্ঞাপন আমদানি করবেন যে দেখে মনে হবে, টিমটা সেমিফাইনালে ওঠার যোগ্যই ছিল না! রঞ্জি শেষ। বিজয় হাজারেও গেল। বাকি শুধু জাতীয় টি-টোয়েন্টি। দেখা যাক!
কিন্তু সে সব পরের ব্যাপার। শুক্রবারের ইডেন-বিপর্যয়ের ময়নাতদন্ত করতে বসলে যদি সর্বাগ্রে উঠে আসে পিচ, তা হলে দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই পক্ষাঘাতগ্রস্থ বঙ্গ ব্যাটিং। সন্ধেয় এক সিএবি কর্তা আক্ষেপ করছিলেন, ‘কারা কারা সব ঢুকে পড়ছে টিমে!’ আক্ষেপ যুক্তিযুক্ত। জয়জিৎ বসুদের মতো কেউ কেউ আজ যা ক্রিকেট উপহার দিলেন ইডেনে উপস্থিত হাজার চারেক দর্শককে, তাতে আগামী তিন বছর তাঁদের বেঙ্গল জার্সি পাওয়া উচিত নয়। শর্ট মিড উইকেটের ট্র্যাপে পড়ে জয়জিতের আউট অনভিজ্ঞতার কথা ভেবে ক্ষমা করা যেতে পারে। কিন্তু কী ভাবে ডাইভ মেরে হাতের তলা দিয়ে বল গলিয়ে বাউন্ডারি দিতে পারেন টিমকে জয়জিৎ, বোধগম্য হয় না। মুশকিল হল, তাঁদের বদলে যে বা যাঁরা আসবেন তাঁরাও বা কত ভাল? ক্লাবহাউসে দাঁড়িয়ে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “আরে, টিমে লক্ষ্মী ছাড়া তো কারও খাঁচাই নেই!” যদিও লক্ষ্মীর ব্যাটিংও এ দিন অমার্জনীয়। বাংলা ১০৯-৪ এই অবস্থায় বঙ্গ অধিনায়কের কী দরকার ছিল তুলে মারতে যাওয়ার? টিমটা তো আরও উল্টে চাপে পড়ে গেল। শ্রীবৎস গোস্বামী— বিরাট কোহলির সঙ্গে শুরু করেছিলেন। আজ বিরাট ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক। আর শ্রীবৎস রঞ্জিতেও এখনও নিয়মিত নন। বিজয় হাজারেতে ওপেন করতে নেমে প্রথমে সেট হন, তার পর নিয়ম করে আউট হয়ে যান। ভাবা যায়, আজ একটা সময় পঁচিশ ওভার কোনও বাউন্ডারি মারতে পারেনি বাংলা! মনোজ-লক্ষ্মীর মতো হার্ডহিটাররাও মাঠের বাইরে ফেলতে গিয়ে, মাঠের ভিতরে ‘জীবন’ দিয়ে গেলেন! আর এত ঢক্কানিনাদে পিচ-পরিবর্তন ঘটিয়ে লাভের লাভ কী?
না আঠারোটা রান বাড়তি!
খুব সহজে, বঙ্গ ব্যাটিং সবুজে যা, পাটাতেও তা, আবার ধুলোতেও তাই। শেষ দিকে রেলের কয়েকটা উইকেট পরপর পড়ল ঠিকই, কিন্তু সেগুলো সবই ‘মৃত্যু’র আগে মরণকামড়। রাতে সিএবি কর্তাদের শোকার্ত মুখগুলো দেখলে খারাপ লাগবে। বড় আশা করে তাঁরা ভেবেছিলেন, বাংলা বিজয় হাজারে ফাইনাল খেলবে দোলের দিন। সভ্য-সদস্যদের আনা হবে, মিডিয়াকেও নিয়ে আসা হবে দরকারে বাসে, লক্ষ্মীরা চ্যাম্পিয়ন হলে হবে বাংলার আসল বসন্তোৎসব!
সব শেষ। বরং এখন দেখতে হবে বাংলায় ‘ব্রাত্য’ এক বাঙালি ক্রিকেটার ইডেনে ফাইনাল খেলছেন রেলের হয়ে! এবং এমন অপ্রত্যাশিত হারের পর কর্তাদের স্তব্ধ মুখগুলো দেখলে, কানে বাজবে ‘স্টপার’-এর সেই বিখ্যাত উক্তি। যেখানে কমল গুহ নামক এক অপ্রত্যাশিতের কাছে হারে লিগ জয়ের স্বপ্নচূর্ণের পর বলে ফেলেছিলেন ‘যুগের যাত্রী’র ক্লাব কর্তা।
‘এত মাংস এ বার খাবে কে!’
সরি। এত রং এ বার খেলবে কে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ১৮৫ (মনোজ ৬১, শ্রীবৎস ৩৮, সায়নশেখর ২৮, সাইনি ৩-২৫, কর্ণ ২-৪১),
রেলওয়েজ ১৮৮-৫ (পৌনিকর ৮৩, শিবকান্ত ৫৬ নট আউট, বীরপ্রতাপ ৩-৫৪)।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।