স্পোর্টিং ক্লুব অবশ্য সেই অর্থে ক্লাব নয়। চলে ব্যক্তিগত মালিকানায়। তারাও কিন্তু চেনা-পুরনো কোনও কোচকে এ বার দায়িত্ব দেয়নি। স্পেনের একেবারে নতুন আনকোরা কোচ অস্কার ব্রুজোকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ক্লাবের প্রধান কর্তা পিটার ভাজ। পুরনো ওগবা কালু, বৈমা কারপের সঙ্গে নতুন বিদেশি এবং স্থানীয় অপরিচিত ফুটবলার নিয়ে তৈরি স্পোটিং ক্লুব এখন লিগ টেবিলে চার নম্বরে। তারা অনেক দিন ছিল তিন নম্বরে। কিন্তু ফের ভারতে ফিরে আসা বিদেশি ডুডু ওবেগামি একের পর এক ম্যাচ জিতিয়ে সালগাওকরকে তুলে এনেছেন তিন নম্বরে। স্পোর্টিং চলে গিয়েছে চারে। তবে খেতাবের লড়াইতে স্পোর্টিং এখনও অন্যতম দাবিদার।
কলকাতার দলগুলি এ বারও আই লিগে ব্যর্থ হওয়ার পর দুই প্রধানের কোচ আর্মান্দো কোলাসো বা করিম বেঞ্চারিফা চাকরি যাওয়ার মুখে। কর্তারা মুখে স্বীকার না বললেও নতুন কোচের খোঁজে নেমে পড়েছেন ইতিমধ্যেই। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে আই এফ এ শিল্ড জেতায় সঞ্জয় সেন হয়তো টিঁকে যাবেন মহমেডানে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের কোচ বদল হচ্ছেই। দু’টো নাম ভাসছে সেখানে--ট্রেভর মর্গ্যান এবং এলকো সাতোরি। মর্গ্যানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন লাল-হলুদ কর্তারা। আর এলকোর এজেন্ট প্রতিদিন ধরনা দিচ্ছেন বাগান কর্তাদের কাছে। যে দুই কোচের কথা শোনা যাচ্ছে সেই দু’জনের সাফল্যই কিন্তু আহামরি কিছু নয়। মর্গ্যান ফেড কাপ, কলকাতা লিগ জিতেছেন। আই লিগ পাননি তিন বছরে। এর চেয়ে বেশি কৃতিত্ব সুব্রত ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিকেরই আছে। আর এলকো? একবার আই এফ এ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন, আই লিগে চতুর্থ। আই লিগে টানা পাঁচ ম্যাচ হেরেছেন এ বছর। ফেড কাপে গ্রুপ লিগে বিদায়। তা হলে কেন আবার তাদের নাম ভাসছে? আর মর্গ্যান বা এলকো যদি কোচ হিসাবে এত মহার্ঘ্যই হন, তা হলে এতদিন বেকার হয়ে দু’জনেই বসে আছেন কেন? কেন তাদের জোটেনি অন্য কোনও দেশের ক্লাব?
এসেই চমক: ওয়েস্টউড, স্নোয়ি।
লাজং এফ সি-র বিশ্বকাপার কর্নেল গ্লেন এবং বাংলাদেশের শেখ জামালের স্ট্রাইকার ওয়েডসনের সঙ্গে পরের মরসুমের জন্য কথাবার্তা চালাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। সর্নি নর্দি, জন জনসন, সাব্রোসার দিকে নজর আছে মোহনবাগানের। চেনা বিদেশিদের নেওয়ার ইচ্ছের পাশাপাশি পরিচিত কোচেদের দিকেই কেন ঝুঁকছেন দুই প্রধানের কর্তারা? কেন ওয়েস্টউড, স্নোয়িদের মতো কোনও নতুন কোচের কথা ভাবছেন না ইস্ট-মোহন কর্তারা? ভাবছেন না জন জনসন বা মুস্তাফা রিগাদের মতো নতুন ফুটবলারদের টিমে নেওয়ার কথা। ইস্টবেঙ্গল তো এর আগে সুলে মুসা, জ্যাকসন, জুনিয়রের মতো ফুটবলার এনেছে। সফলও হয়েছে। বাগান এনেছে দুষিত, জাটুপংদের। কিন্তু এখন সেই ঝুঁকি কেন নিতে চাইছেন না কর্তারা? শোনা যাচ্ছে এর অন্যতম কারণ ক্লাবের নির্বাচন। নিয়ম মতো দুই ক্লাবেই এ বছর নির্বাচন হওয়ার কথা। পুরনো তারকা-মুখ না আনলে ব্যর্থতার প্রলেপ দেওয়া সম্ভবও নয়। নতুন নাম সাফল্য না পাওয়া পর্যন্ত বাজারে খাবে না। ফলে চেনা মুখই পছন্দ দুই প্রধানের। ক্লাব কর্তারা অবশ্য কোচ বা দলগঠনের সঙ্গে নির্বাচনের যোগের কথা মানতে নারাজ। স্বাভাবিক কারণেই।
“আমাদের সমর্থকদের ক্লাব। সব সময় তাদের চাপ থাকে। বেঙ্গালুরু, স্পোর্টিং-এর সেই চাপ কিন্তু নেই। ফলে আমাদের যা করতে হয় সব সদস্যদের কথা ভেবে। একটা ম্যাচ হারলেই যেভাবে চাপ বাড়ে তাতে সমস্যা তৈরি হয়,” মানছেন মোহনবাগান সহসচিব সৃঞ্জয় বসু। অবনমনে থাকা বাগান কর্তার আরও সংযাজন, “আমরা তো স্টিভ ডার্বিকে এনেছিলাম গত বছর। কী করল?” ইস্টবেঙ্গল ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য আবার বলে দিলেন “আমরা এখনও দল বা কোচ নিয়ে ভাবিনি। তবে এটা বলছি নতুন মার্কোস ফালোপাকে তো এ বছর আনা হয়েছিল। কোনও লাভই হয়নি? সফল কোচ আর্মান্দোকে দায়িত্ব দেওয়া হল। তা-ও চ্যাম্পিয়ন হতে পারছি না আই লিগে,” বলছিলেন হতাশ সন্তোষবাবু। তবে মোহন-কর্তাদের মতো সমর্থকদের চাপকে স্বীকার করতে নারাজ লাল-হলুদ ফুটবল সচিব। বললেন, “কোচ বা ফুটবলার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সদস্য-সমর্থকদের চাপে সিদ্ধান্ত বদল করি না আমরা। যেটা ভাল সেটা করার চেষ্টা করি।” কিন্তু স্টিভ ডার্বি বা মার্কোস ফালোপারা তো ক্লাব পর্যায়ে তেমন বড় কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না আগে। যা বেঙ্গালুরুর ওয়েস্টউড বা পুণের মাইক স্নোয়ির আছে। অর্থাৎ সঠিক কোচ নির্বাচনেই গলদ ছিল। নিট ফল তা হলে কী? নতুন বোতলে পুরনো পানীয়ই পছন্দ দুই প্রধানের। তাতে টিম আই লিগে চতুর্থ হোক বা অবনমনের লড়াই লড়ুক! পেশাদার ক্লাবের কাছে যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বেঙ্গালুরুর সাফল্যও সেখানে দাগ কাটে না!