ম্যাচ জিতে টিমের সঙ্গে উত্সব জনের। ছবি: পিটিআই
সকালে যোগাযোগ করার পর তাঁর জনসংযোগ সচিব প্রথমে বললেন, “হবে না।” ফের এসএমএসে অনুরোধ। জবাব এল, দুপুর দু’টোয়। শেষমেশ নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র অন্যতম মালিক জন আব্রাহাম বিকেল চারটেয় টিম হোটেলের ২০৩ নম্বর ঘরে আনন্দবাজারের সঙ্গে বসলেন ফুটবল আড্ডায়।
প্রশ্ন: কাল কলকাতায় পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে র্যঁদেভুটা হল?
জন: র্যঁদেভু (বলেই হাসতে হাসতে সোফায় প্রায় লুটিয়ে পড়লেন)! ওহ, দারুণ অভিজ্ঞতা! ছোটবেলায় বাবার কাছে শুনতাম গ্রেট পিকের কথা। স্কুলেও শুনতাম। সেই লোকটা আমার হাতের সামনে! মোহিত হয়ে ওঁর কথা শুনছিলাম।
প্র: যে জন আব্রাহামে মোহিত তাঁর মহিলা অনুরাগীরা, সেই জন কি না মোহিত প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে!
জন: কী বলছেন? অলিম্পিকে দেশের ক্যাপ্টেন। এশিয়াডে পোডিয়ামে দাঁড়িয়েছেন সোনার মেডেল গলায় ঝুলিয়ে। ওঁদের জন্য জাতীয় সঙ্গীত বেজেছে। সেখানে আমরা তো কেবল সিলভার স্ক্রিনে রাজত্ব করে বেড়াই। মোহিত না হয়ে উপায় নেই দাদা।
প্র: কী কথা হল পিকের সঙ্গে?
জন: আরে, আগে বলি আমার তো ওঁর সামনে গিয়ে চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করছিল সত্যিই পিকের সামনে দাঁড়িয়ে তো? ফুটবল নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে। সবচেয়ে ভাল লাগল যখন উনি আমাকে বললেন, এখনকার সিনেমার হিরোদের মধ্যে তুমি তো বেশ ফিট। এটা সাংবাদিক, ফ্যানরা বললে এক রকম অনুভূতি। কিন্তু পিকের মতো চ্যাম্পিয়ন বললে অনুভূতিটা একেবারে আলাদা হয়।
প্র: ভাইচুং আপনার বন্ধু। ভাইচুং নিজেও নর্থ-ইস্টের ফুটবল নিয়ে আপনার মতোই পাগল। সেখানে আইএসএল-যজ্ঞে আপনার পাশে ভাইচুংকে দেখা যাচ্ছে না কেন?
জন: কোনও অন্য ব্যাখ্যা করবেন না বিষয়টা নিয়ে। ভাইচুং নিজেই আইএসএলের সঙ্গে জড়িত কোনও না কোনও কাজে। তাই দেখতে পাচ্ছেন না। আর কিছুই না। ওর সঙ্গেও কথা হচ্ছে। সকলেই সঙ্গে আছে। কারণ আমার দলটা উত্তর-পূর্ব ভারতের টিম। ক্যাচলাইনটা এইট স্টেটস, ওয়ান ইউনাইটেড। ভাইচুং থেকে সুনীল ছেত্রী, কুঞ্জরানি দেবী সবাই আমাদের সঙ্গে আছেন।
প্র: ফুটবল টিমের মালিকানা নেওয়ার সময় কলকাতা বা কেরলের দিকে ঝুঁকলেন না যে?
জন: কলকাতার ফুটবল ঐতিহ্য নিয়ে কথা উঠলেই আমার মাথা শ্রদ্ধায় নিচু হয়ে যায়। প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, জেভিয়ার পায়াস কারা সব খেলেছেন আমাদের স্কুল-কলেজ জীবনে। কেরলেও বিজয়ন-সত্যেন-পাপ্পাচানদের মতো তারকারা খেলেছেন। কিন্তু ওই দু’টো টিমের জন্য তো সৌরভ-সচিনরা এগিয়ে এসেছেন। আর এ দেশে বিশ্বমানের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল নিয়ে কিছু হলে আমি যে নর্থ-ইস্টের টিমটা নেব তা আমার প্রিয় বন্ধু লারসিং মিং-কে চার বছর আগে একটা পার্টিতে জানিয়ে দিয়েছিলাম। আর মনে রাখবেন, এই মুহূর্তে ভারতীয় ফুটবলের হৃদয় যদি কলকাতা হয়ে থাকে, তা হলে নর্থ-ইস্ট হল মস্তিষ্ক। এই অঞ্চলকে বাদ দিয়ে এ দেশে ফুটবল হবে না।
প্র: আপনি মালয়ালি। সেখানে আপনার প্রথম ম্যাচই কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। চাপটা কেমন?
জন: পরের ম্যাচ কিন্তু আপনাদের শহরের বিরুদ্ধে (বলেই হাসি)। আর কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে নর্থ-ইস্টের একমাত্র ‘মাল্লু’ (মালয়ালি) আমি। আমার বাবা মালয়ালি। মা মুম্বইয়ান। কিন্তু আমার দিল্, আমার বাচ্চা নর্থ-ইস্ট। আমার বাচ্চাদের তাই এ দিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে মোটিভেশন বাড়াতে বললাম, সন্ধ্যায় কোনও চাপ নিও না। মাঠে নেমে খেলাটা উপভোগ করো।
প্র: আর বিপক্ষে সচিন ফ্যাক্টর?
জন: ফ্যাক্টর কোথায়? সচিন তো ভগবান! মাঠে ওকে হাত ধরে ঢোকাব। ও আজ আমার অতিথি।
প্র: তিন দিন আগেও কিন্তু গুয়াহাটিতে আইএসএল নিয়ে মাতামাতি দেখিনি!
জন: তা হলেই বুঝুন ফুটবল নিয়ে এই নর্থ-ইস্টের পাগলামি কী পর্যায়ে যেতে পারে। তিন বছর অপেক্ষা করুন, দেখবেন এই ভারতীয় লিগে খেলতে বিশ্বে হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে।
প্র: দু’মাসের লিগ-ই ভারতীয় ফুটবলে ইউ-টার্ন আনবে?
জন: তখন সময় বাড়তেই পারে। এটাই হয়ে উঠতে পারে দেশের প্রধান ফুটবল লিগ।
প্র: তার মানে আই লিগের মৃত্যু ঘটবে?
জন: আমার অনুমান, এক দিন এই দু’টো লিগ মিলে যেতে পারে।
প্র: কীসের ভিত্তিতে এই অনুমান?
জন: কলকাতায় কাল আইএসএল নিয়ে মানুষের যে উন্মাদনা দেখলাম তার পরে আশাবাদী হতেই পারি। সৌরভের সঙ্গে ওখানে প্রথম ম্যাচে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হল। তবে কী আলোচনা তা জানতে চাইবেন না। সময় মতো দেখতে পাবেন।
তবে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড এখনই ঠিক করেছে যে, প্রত্যেক ম্যাচ থেকে পাওয়া প্রাইজ মানি দিয়ে নর্থ-ইস্টের বিভিন্ন জায়গায় আমরা ফুটবল স্কুল গড়ব। এবং এটা ফাঁকা আওয়াজ নয়। গড়বই। যেখানে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারের বাচ্চারা অগ্রাধিকার পাবে।
প্র: এত নর্থ-ইস্ট নর্থ-ইস্ট করে আপনার লাভ কী? দেশের এই অঞ্চলে তো আপনাদের বলিউডের সিনেমাই দেখানো হয় না!
জন: তাতে কী? আমি তো এখানে ফিল্মের ব্যবসা ফাঁদতে আসিনি। শুধু দেশের জন্য কয়েক জন প্রতিভাবান ফুটবলার তুলে আনতে চাই। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম বিশ্বকাপে ভারতের জার্সি গায়ে খেলছি। ওটা আজও আমার কাছে স্বপ্নই রয়ে গিয়েছে। সেই স্বপ্ন সত্যি করতেই তো আমাদের ‘লেটস ফুটবল’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy