Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভয়ঙ্কর বুমরাই দু’দলের মধ্যে আসল পার্থক্য

আমি নিজে এক জন প্রাচীনপন্থী ক্রিকেটার। যে মনে করে, মাঠে নেমে বিশেষ কথা-টথা বলার কোনও মানে হয় না।

দুরন্ত: বুমরার পরিশ্রম করার ক্ষমতায় মুগ্ধ জেফ থমসন। ফাইল চিত্র

দুরন্ত: বুমরার পরিশ্রম করার ক্ষমতায় মুগ্ধ জেফ থমসন। ফাইল চিত্র

জেফ থমসন
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৭
Share: Save:

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম বার টেস্ট সিরিজ জেতার জন্য ভারতীয় দলকে অভিনন্দন। নিজে এক জন অস্ট্রেলীয় হওয়ার ফলে জানি, উপমহাদেশের একটা দলের পক্ষে কতটা কঠিন এই কাজ। এখানের সব কিছু অনেক আলাদা। পিচ, পরিবেশ, পরিস্থিতি— সব কিছু। অস্ট্রেলিয়ার পিচে যে বাড়তি গতি এবং বাউন্স থাকে, তা সামলাতে সমস্যায় পড়ে যায় উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় পা দেওয়ার পর থেকে বিরাট কোহালি এবং ওর দলকে দেখে মনে হয়েছে, ওরা একটা বিশেষ অভিযানে এসেছে। যে অভিযান সফল ভাবে শেষ না করে ফিরবে না! কোহালিকে দেখেও মনে হয়েছে, টেস্ট সিরিজ জেতার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

আমি নিজে এক জন প্রাচীনপন্থী ক্রিকেটার। যে মনে করে, মাঠে নেমে বিশেষ কথা-টথা বলার কোনও মানে হয় না। আমাদের সময় কোনও বাগ‌্‌যুদ্ধ হত না। যা লড়াই, সে সব হত ব্যাট আর বলের মধ্যে। সে জন্যই আমার মনে হয়েছিল, টিম পেনের সঙ্গে স্লেজিং-যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ফোকাসটা নষ্ট করে ফেলে কোহালি। কিন্তু ওই ভুল থেকে দ্রুত শিক্ষাও নিয়েছে ভারত অধিনায়ক। পার্‌থ টেস্টের পরে একই ভুল করেনি। ঠান্ডা মাথায় অসাধারণ ভাবে দলকে নেতৃত্ব দিল। শেষ দু’টো টেস্টে তো অধিনায়ক হিসেবে সেরাটা পেলাম কোহালির কাছ থেকে। দলকে দারুণ ভাবে চালনা করল, দুর্দান্ত মানসিকতার পরিচয় দিল আর ভুলেও বিপক্ষের ফাঁদে পা দিল না।

কোহালিকে সবাই জানে এমন একটি ছেলে বলে যে মাঠে নিজের আবেগ প্রদর্শন করতে দু’বার ভাবে না। দারুণ আগ্রাসী মেজাজের। কিন্তু মেলবোর্ন আর সিডনিতে কোহালিকে দেখে বুঝলাম, ও ক্রমে আরও পরিণত হচ্ছে। এ রকম ভারসাম্য যদি ও ধরে রাখতে পারে, তা হলে আগামী দিনে কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে বিপক্ষের কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। ভুললে চলবে না, অস্ট্রেলিয়া থেকে টেস্ট সিরিজ জেতার পরে কোহালি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।

এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে সব বিভাগে টেক্কা দিয়েছে ভারত। আমি শুনছিলাম, আমাদের বোলিং নাকি বিশ্বের অন্যতম সেরা। কিন্তু এই সিরিজে তার কোনও পরিচয় পাইনি। চেতেশ্বর পূজারাকে থামানোর কোনও রাস্তা খুঁজে পায়নি আমাদের বোলাররা। তিনটি সেঞ্চুরি-সহ ৫২১ রান করে গেল পুজারা। গড় ৭৪.৪২। ভারতীয়রা যেখানে পাঁচটি সেঞ্চুরি করল, সেখানে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের কেউ তিন অঙ্কের রান করতে পারেনি। এ ছাড়া ভারতের মায়াঙ্ক আগরওয়াল আছে। যে দু’টো টেস্টেই সেঞ্চুরির কাছে চলে এসেছিল। মায়াঙ্ককে দেখে মনে হয়নি অভিষেক সিরিজ খেলছে। কোহালি-পূজারা ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভ ছিল। ওদের ঘিরে বাকিরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যায়। কোহালি-পূজারাকে দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। ওরা কখনও উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসে না।

ভারতীয় পেস বোলিং এবং যশপ্রীত বুমরার কথাও আলাদা করে বলতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাওয়া ৭০টি উইকেটের মধ্যে ৫০টি উইকেটই পেয়েছে ভারতীয় পেসাররা। অস্ট্রেলীয় পেসাররা যেখানে পেয়েছে ৪০টি উইকেট। ভারতীয়রা এখানে অতিথি দল হিসেবে এসে পেস এবং বাউন্সে আমাদের চমকে দেয়। সুইং এবং রিভার্স সুইং— দু’টোই পেয়েছে ভারতীয় পেসাররা। বুঝিয়ে দিয়েছে, নতুন এবং পুরনো বলে বল করার দক্ষতা ওদের আছে। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কোনও বুমরাও ছিল না।

ম্যান অব দ্য সিরিজ বাছা নিয়ে আমি কোনও প্রশ্ন তুলছি না। পূজারার পারফরম্যান্সের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানিয়েই বলছি, এই সিরিজে যদি কেউ তফাত গড়ে দিয়ে থাকে, তা হলে সে বুমরা। ওর পরিশ্রম করার ক্ষমতা অতুলনীয়। পরের পর ওভার করে যাবে একই রকম তীব্রতা নিয়ে। বুমরার ওই রকম ব্যতিক্রমী অ্যাকশনের জন্য ও বাড়তি পেস এবং বাউন্সটা আদায় করতে পারে উইকেট থেকে। বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক ব্যাটসম্যানের কাছেই আতঙ্ক হয়ে উঠবে বুমরা। কোনও সন্দেহ নেই, আমরা এক জন বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বোলারকে দেখছি।

এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের খুবই সাধারণ দেখিয়েছে। ওরা তিরিশের ঘরে রান করছিল। যেটা কোনও ব্যাটসম্যানের নয়, টেল এন্ডারদের স্কোর। এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রান হল মার্কাস হ্যারিসের ৭৯। যা রবীন্দ্র জাডেজার ৮১ রানের চেয়ে দুই কম। এতেই বোঝা যাচ্ছে দুই দলের মধ্যে ফারাকটা কী রকম। এখনই অ্যাশেজ নিয়ে কথাবার্তা চলছে। কিন্তু তার আগে আমি দেখতে চাই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কী করে অস্ট্রেলিয়া। এই মুহূর্তে আমি ভাল প্রতিভা বা দলের মধ্যে কোনও গভীরতা দেখছি না। যেটা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত সবার কাছেই একটা উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত।

অস্ট্রেলিয়ার হারটা নিয়ে আমি কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওরা বলছিল, এখন শিল্ড ম্যাচেও ব্যাটসম্যানরা তিরিশের মাঝামাঝি গড় রাখছে। আমি ওদের বললাম, এ সব কী হচ্ছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৩০ গড় মানে তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামলে সেই ব্যাটসম্যান সমস্যায় পড়ে যাবেই। আমার মনে হয়, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের কাঠামোয় পুরো বদল আনা দরকার। সময় হয়েছে তারুণ্যে বিনিয়োগ করার। তরুণ প্রতিভা বেছে নিতে হবে, তাদের তৈরি করতে হবে একটা কঠিন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে। যে ভাবে অতীতে ক্রিকেটার তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়া। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার দল নির্বাচন আর কোচেদের দক্ষতাও খতিয়ে দেখতে হবে। তা হলে যদি কিছু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE