গত বার ব্রাজিল বিশ্বকাপে এই ম্যাচেই শেষ হয়েছিল নেইমারের দ্য সিলভা জুনিয়রের স্বপ্ন। সে দিন ব্রাজিল ২-১ হারিয়েছিল কলম্বিয়াকে। তবে সেই জয়ের আনন্দ ঢাকা পড়ে গিয়েছিল দলের ‘চোখের মণি’ নেইমারকে চোটের জন্য হারানোয়। এর পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস। আজও সেই কলম্বিয়া ম্যাচটা ‘অভিশপ্ত’-ই থেকে গেল নেইমারের জন্য। এ বার হয়তো তিনি চোট পেলেন না। তবে হারের স্বাদটা পেতে হল নেইমারকে। বুধবার রাতে কোপা আমেরিকার হাইভোল্টেজ লড়াইয়ে ব্রাজিল ০-১ হারল কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে। এবং মাথা গরম করে ম্যাচের শেষে লাল কার্ডও দেখলেন ‘ওয়ান্ডার কিড’।
চিলির সান্তিয়াগো তখন চলে গিয়েছে দু’দেশের দখলে। কোপা আমেরিকাকে যতই প্রচারহীন বলা হোক না কেন, ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনার অভাব নেই। এক দিকে কলম্বিয়া সমর্থকদের ‘হামেস হামেস’ চিত্কার, তো পাল্টা ব্রাজিল সমর্থকদের ‘ভামোস নেইমার’। বর্তমান প্রজন্মের দুই তরুণ তারকার যুদ্ধই ছিল এই ম্যাচের ইউএসপি। এবং সেই যুদ্ধে নেইমারকে ভাল ভাবেই হারালেন হামেস।
প্রথমার্ধের শুরু থেকেই কলম্বিয়া আক্রমণ করতে শুরু করে। আগের ম্যাচ ০-১ হারায় হামেস-ফালকাওরা মরিয়া হয়ে পড়ে গোল পেতে। ৪-৪-২ ছকে নামা ব্রাজিল আক্রমণ তৈরি করলেও ফাইনাল থার্ডে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছিল। প্রায় প্রতিটা মুভই শেষ হচ্ছিল মিস পাস দিয়ে। বল দখলে রাখলেও কলম্বিয়ার চাপে নিজেদের হাফেই বেশি খেলতে হয়েছে ব্রাজিলকে। প্রথম কয়েক মিনিট পুরোপুরি অদৃশ্য ছিলেন নেইমার। কয়েক বার বল পেলেও কলম্বিয়া ডিফেন্সে লোক বাড়িয়ে দেওয়ায় খুব বেশি কিছু করতে পারেননি তিনি।
পাশাপাশি বারবার আক্রমণে উঠছিল কলম্বিয়া। তবে ফালকাও, কুয়াদ্রাদোর নেওয়া শটগুলো তিনকাঠিতে থাকছিল না। বিরতির ঠিক আগেই ম্যাচের ছবি পাল্টায়। কুয়াদ্রাদোর বাড়ানো পাস থেকে মুরিলোর দুর্দান্ত শট। নিট ফল গোল। পেরু ম্যাচের মতোই আবার নেইমারই সু্যোগ পান সমতা ফেরানোর। সেই দানি আলভেজের বাড়ানো ক্রসেই নেইমার হেড মারেন। তবে এ দিন তাঁর হেড কলম্বিয়া গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা সহজেই বাঁচিয়ে নেন।
বিরতির পরে খেলা আরও ওপেন হয়। ভাল জায়গায় বল পেয়েও বাইৱে মারেন নেইমার। কলম্বিয়ার কুয়াদ্রাদো একাই ব্রাজিল রক্ষণ নাস্তানাবুদ করে দুর্দান্ত শট মারেন। তবে দিনের সেরা সু্যোগটি আসে ব্রাজিলের রবের্তো ফির্মিনোর কাছে। ফাঁকা গোল পেয়েও শট বাইরে মারেন তিনি। নেইমার যত হারিয়ে যেতে থাকেন ম্যাচ থেকে, ততই যেন জ্বলে উঠতে থাকেন হামেস। মাঝমাঠ থেকে একাধিক সুযোগ তৈরি করতে থাকেন দলের জন্য। এর মধ্যে একটি গোলও প্রায় করে ফেলছিলেন তিনি।
রেফারির নব্বই মিনিটের বাঁশি বাজতেই ব্রাজিল-কলম্বিয়া প্রায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। লাল কার্ড দেখতে হয় নেইমার এবং কলম্বিয়ার কালোর্স বাক্কা-কে।
ম্যাচ শেষে আবার অচেনা মেজাজেই দেখা গেল নেইমারকে। মাথা নিচু। হতাশ মুখ। ১৯৬৯-এ পেলে জমানার পড়ে সবথেকে ধারাবাহিক জয়ের ধারা শেষ হল ব্রাজিলের(১১ ম্যাচ)। আর সেলেকাওদের বিরুদ্ধে তৃতীয় বার জিতল কলম্বিয়া। এবং সব শেষে কলম্বিয়া ম্যাচটা সেই ‘অভিশপ্ত’ই হয়ে থাকল নেইমারের জন্য।