একাগ্র: আর্জেন্টিনার মহড়ায় মেসি। সেমিফাইনালে সামনে কলম্বিয়া। ফাইল চিত্র।
লিয়োনেল মেসি বলেছেন, এখনও স্বপ্ন সত্যি হয়নি। কোপা আমেরিকা জয়ের স্বপ্ন! আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তির প্রথম লক্ষ্যটা ছিল সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করা। সেটা তিনি পেরেছেন। ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে সতীর্থদের সাজিয়ে দিয়েছেন নিশ্চিত গোলের বল। একবার নয়, দু’বার। সঙ্গে আবার একটা অবিশ্বাস্য ফ্রি-কিক থেকে গোল করেছেন।
মেসিই এমনিতে কোপা ধরার একমাত্র ভরসাস্থল আর্জেন্টিনার। বুধবার সেমিফাইনালে কলম্বিয়া ম্যাচের আগে অত্যন্ত সাবধানি তিনি, ‘‘অবশ্যই আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল খেলা। এখন বিশ্রাম নিয়ে নিজেদের পুরোপুরি তৈরি করতে হবে পরের ম্যাচের জন্য। কারণ আসল লক্ষ্যে এখনও পৌঁছনো যায়নি।’’
আসল লক্ষ্য কতটা কঠিন? বিশেষ করে যখন ফাইনালে দেখা হতে পারে নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রদের ব্রাজিলের সঙ্গে। মেসি বলেছেন, ‘‘এখানে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, খুবই ঘনঘন ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। ফুটবলারেরা একটুও বিশ্রাম পাচ্ছে না। তা ছাড়া এখানে সব মাঠই অত্যন্ত খারাপ। তাই যে কোনও সময় খেলা জটিল হয়ে যাচ্ছে। বিপক্ষ দলের চাপের সামনে মাঠের কোনও সাহায্যই পাওয়া যাচ্ছে না। বরং উল্টোটাই সত্যি। প্রতি পদক্ষেপে অসুবিধেয় পড়তে হচ্ছে। তাই কোপা জেতার কাজটা মোটেই সহজ নয়।’’ যোগ করেছেন, ‘‘অবশ্য সমস্যাটা শুধু আমাদের নয়। সব দলেরই। তাই এটা নিয়ে অজুহাত দেওয়ার কোনও জায়গা নেই।’’
শুধু প্রথম বার কোপা জেতা নয়। মেসির সামনে ব্যক্তিগত নজির গড়ারও সুযোগ থাকছে কলম্বিয়া ম্যাচে। দেশের জার্সিতে ফুটবল-সম্রাট পেলের মোট গোলের সংখ্যা ৭৭। ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে মেসি করেছেন তাঁর ৭৬ নম্বর গোল। অর্থাৎ কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে একটা গোল করলেই মেসি ধরে ফেলবেন পেলেকে। আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তি অবশ্য পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ব্যক্তিগত নজিরকে কখনওই তিনি অগ্রাধিকার দেন না। তাঁর কাছে সবার আগে দল। দল নিয়েই তাঁর যাবতীয় গর্ব। এমনকি তিনি বলেছেন, ‘‘এখানে সব দলই জৈব সুরক্ষা বলয়ে নিয়ম ভেঙেছে। একমাত্র ব্যতিক্রম আর্জেন্টিনা। ছেলেরা সবাই দেশের জন্য দারুণ কিছু করতে চায়। মনে রাখবেন, আমরা এই কোপার জন্যই বহুদিন পরিবার, বাচ্চাদের ছেড়ে এখানে পড়ে আছি।’’
বুধবার ভারতীয় সময় ভোরে আর্জেন্টিনা বনাম কলম্বিয়া ম্যাচ। খেলা হবে ব্রাসিলিয়ায় কিংবদন্তি গ্যারিঞ্চার নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে। এমনিতে এ’বছরেরই গোড়ার দিকে এই দুই দেশের খেলা হয়েছিল। সেই ম্যাচ ২-২ ড্র হয়। তবে কোপায় আর্জেন্টিনা টানা চারটি ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে খেলবে। সেখানে কলম্বিয়া তাদের শেষ পাঁচটি ম্যাচের দু’টি জিতেছে। হেরেছে দু’টি। একটি ড্র। বুধবার আর্জেন্টিনাকে হয়তো আটলান্টার সেন্টার-ব্যাক ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোকে ছাড়াই খেলতে হবে। তাঁর চোট এখনও সারেনি। অবশ্য কোচ লিয়োনেল স্কালোনির সব পজিশনেই ভাল ভাল বিকল্প আছে। ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে এমনকি সের্খিয়ো আগুয়েরো, অ্যাঙ্খেল ডি মারিয়াকেও তিনি প্রথম দলে রাখেননি। এঁদের মধ্যে ডি মারিয়াকে নামান দ্বিতীয়ার্ধে। তবে প্যারিস সাঁ জারমাঁ তারকা নামার পরে আর্জেন্টিনা আরও অনেক গতিশীল ফুটবল খেলেছিল। এখন দেখার কোচ তাঁকে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দলে রাখেন কি না।
ফুটবল বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রাজিলে এ বার মেসি আর একবার কোপা জেতার সুযোগ পাবেনই। তবে আশঙ্কাও আছে। অনেকের মতে, কঠিন সময় আর্জেন্টিনা বারবার বিপদে পড়ে আত্মতুষ্টির জন্য। এখন দেখার, এ বার মেসিরা শেষপর্যন্ত কী করেন।
মেসির মতো আগামী বছর কাতার বিশ্বকাপের আগে কোপা আমেরিকা জিতে নিজের জায়গাও শক্তপোক্ত করতে মরিয়া কোচ লিয়োনেল স্কালোনি। তিনি বলেছেন, “এই কোপা থেকেই আগামী বছরের বিশ্বকাপের প্রথম দলটাকে তৈরি করে নিতে হবে। তার জন্য এই প্রতিযোগিতায় জেতাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। চ্যাম্পিয়ন হলে বুঝতে পারব, কাদের প্রথম একাদশে রেখে সেরা দলটা তৈরি করা উচিত।”
এ বারের আর্জেন্টিনা দলে অনেক নতুন মুখও রয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য যাঁদের এখন থেকেই তৈরি করে ফেলতে চান লিয়োনেল মেসিদের কোচ। তিনি বলেছেন, “আমাদের হাতে সময় খুব একটা নেই। বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্ব এবং কোপার মতো প্রতিযোগিতায় খেলার মাধ্যমেই রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি করে নিতে হবে।”