Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘সিন্ধুর স্ম্যাশ ভোঁতা করেই জিতল সাইনা’

হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পরে সাইনা সে ভাবে বড় মঞ্চে জয় না পাওয়ায়, অনেকেই বলেছিলেন ওর দিন শেষ। সাইনা আর ফিরতে পারবে না।

মধুমিতা বিস্ত
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

ক’দিন ধরেই শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। তাই ভাবছিলাম, এত ভোরে এই শরীর নিয়ে উঠতে পারব তো সাইনা-সিন্ধুর ফাইনাল দেখতে! শেষ পর্যন্ত পুরো ম্যাচটাই দেখলাম। রাতে ঘুমোতে পারিনি। প্রিয় দুই ছাত্রী কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম ফাইনাল খেলছে, আর আমি দেখব না, তা হয় নাকি!

আমার রাত জাগাটা সার্থক। হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পরে সাইনা সে ভাবে বড় মঞ্চে জয় না পাওয়ায়, অনেকেই বলেছিলেন ওর দিন শেষ। সাইনা আর ফিরতে পারবে না। রবিবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি গোল্ড কোস্টে সব মিলিয়ে টানা ১২টা ম্যাচ জিতে কিন্তু সাইনা দেখিয়ে দিল, ২৮ বছর বয়স, এত বড় একটা চোটের ধাক্কা সামলাতে হলেও, এখনও দেশকে অনেক সম্মান এনে দেওয়া ওর বাকি।

বিশ্বের ৩ (সিন্ধু) বনাম ১২ নম্বরের (সাইনা) মধ্যে যে রকম লড়াই হওয়ার কথা সেটা এই ম্যাচে কিন্তু সে ভাবে দেখা যায়নি। কারণ, সিন্ধুর চোট। সিন্ধুর শরীরী ভাষা দেখেই বুঝতে পারছিলাম ওর আত্মবিশ্বাস সেই জায়গায় নেই। তার কারণ হয়তো গোড়ালির চোটের জন্য গোল্ড কোস্টে সে ভাবে ম্যাচ প্র্যাকটিস না
করতে পারা।

সেমিফাইনালের আগে সাইনা বা সিন্ধু কাউকেই সে ভাবে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তেই হয়নি। তাও সিন্ধুর সেমিফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী মিশেল লির চোট ছিল। তাই ফাইনালে সিন্ধুর কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায়। একে চোট, তার উপরে ভাল প্রস্তুতি না থাকা। তা ছাড়া গোটা ম্যাচে কিন্তু সিন্ধুকে জাম্প স্ম্যাশ মারতে দেখা যায়নি। যেটা ওর প্রধান অস্ত্র। কোর্টে সিন্ধু যে স্ম্যাশগুলো করেছে, সাইনার আক্রমণের সামনে ভোঁতা হয়ে গিয়েছে।

প্রথম গেমে তো সিন্ধু সে রকম প্রতিরোধ করতেই পারেনি সাইনার দাপটের। দ্বিতীয় গেমে সিন্ধু আরও আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেছিল। গেমটার মাঝামাঝি সিন্ধু এগিয়েও ছিল। যদি এই গেমটা সিন্ধু বার করে নিতে পারত, তা হলে সাইনার সমস্যা হত। কারণ আগের দিনই সেমিফাইনালে ওকে প্রায় ৬৮ মিনিট লড়ে জিততে হয়েছিল ক্রিস্টি গিলমোরের বিরুদ্ধে। তার উপর ওর পায়েও সমস্যা ছিল। যে কারণে স্ট্র্যাপও করা ছিল। তা ছাড়া গত ১১ দিন ওকে টানা ১১টা ম্যাচ খেলতে হয়েছে। তবু সিন্ধুর দুর্বলতাগুলো সাইনা দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় গেমেই ম্যাচটা ২১-১৮, ২৩-২১ জেতে।

সাইনার খেলার ধরন এমনিতেই আক্রমণাত্মক। রবিবার যেন আরও বেশি আগ্রাসী মনে হচ্ছিল। সঙ্গে ক্রস কোর্ট, ড্রিবল, নেট প্লেতে সাইনা সিন্ধুর থেকে এগিয়ে ছিল। তা ছাড়া, মিক্সড টিম ইভেন্ট থেকে সব ম্যাচ খেলেছে বলে সাইনা কোর্টের পরিবেশ, পরিস্থিতির সঙ্গে অনেক বেশি পরিচিত ছিল। যে সুবিধাটা সিন্ধু পায়নি। তা ছাড়া, বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতার দিক থেকেও তো সাইনা এগিয়ে ছিল। এই নিয়ে বড় মঞ্চে ১৮টা ফাইনাল খেলল সাইনা। হেরেছে মাত্র সাতটায়। সিন্ধু সেখানে ন’টা ফাইনাল খেলে জিতেছে তিনটে।

আর একটা জিনিস দেখলাম, সাইনা অনেক বেশি র‌্যালি করছে এখন। র‌্যালি নিয়ন্ত্রণ করতে করতেই হঠাৎ ফাইনাল শটে যাচ্ছে। তাতে সিন্ধুর মতো প্রতিপক্ষও বুঝতে পারছে না কখন ফাইনাল শটটা আসবে।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, এশিয়ান গেমসেও সাইনা কি এ রকমই দাপট দেখাতে পারবে? মনে রাখতে হবে, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তা ছাড়া বিশ্বের এক নম্বর চিনা তাইপের তাই জু ইংয়ের বিরুদ্ধে খেলতে হবে এশিয়ান গেমসে। তাই লড়াইটা অবশ্যই অনেক বেশি কঠিন। তবে সাইনা চোটের পরে দু’বছরে যে ভাবে প্রত্যাবর্তন করল, সেটা দেখে বলা যায়, ওর পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE