ফতুল্লায় ধবন ধামাকা। বুধবার। ছবি: এপি।
বেলা সাড়ে এগারোটার আশেপাশে ফতুল্লা মিডিয়া বক্সের বাইরে যে বাংলাদেশ কর্তাকে পাওয়া গেল, উদাস দৃষ্টিতে তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে। কালো, আরও কালো, নিকষ কালো মেঘের একটা সমুদ্র নারায়ণগঞ্জ স্টেডিয়ামের আকাশকে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ গিলে ফেলছে। জনৈক বাংলাদেশ কর্তা অস্ফুটে বলে ফেললেন, “নামা এখন একটু দরকার, তাই না?”
টেস্টের প্রথম দিন, প্রথম সেশন। ক্রিকেট সাংবাদিকদের সাধারণ বিচারবুদ্ধি বলে, যুদ্ধের মেদিনী জয়ের প্রথম পর্বের সময়। যেখানে ব্যাটিং টিম চাইবে হাতে উইকেট রেখে যতটা সম্ভব দুর্গকে নিরুপদ্রব রাখতে। ফিল্ডিং টিমের থিওরিটা হবে, যত তাড়াতাড়ি পারো গোটা কয়েক খসিয়ে দাও। ম্যাচটা যাতে গোড়াতেই ধরে নেওয়া যায়। সেখানে কারও আকাশের কাছে বৃষ্টির প্রার্থনার এক এবং শুধু একটাই কারণ হতে পারে। লোকটা ক্রিকেট-বীতশ্রদ্ধ।
মুশফিকুর রহিম ও তাঁর বাকি দশ বাঙালি যোদ্ধা দেখিয়ে গেলেন, ওই কাতর প্রার্থনার দ্বিতীয় কারণও থাকতে পারে। ক্রিকেট-বীতশ্রদ্ধ না হয়ে ওটা হতে পারে একটা টিমের বাঁচার প্রার্থনা! নিজ-ভূমিতে অপমানের হাত থেকে বাঁচার। পিচকে বোলারের বধ্যভূমি বানিয়ে নিজেকেই শোষিত হওয়ার থেকে আটকানো। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘গব্বর’ তখনই ৭২ ব্যাটিং। একশোর উপর স্ট্রাইক রেটে আপন খেয়ালে বঙ্গ পেসারদের কচুকাটা করে চলেছেন।
বাঙালি হলে চোরা দুঃখ হবে লিখতে। কিন্তু আবেগ সরিয়ে রেখে ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা যদি বিচার্য হয়, তা হলে লিখতে হবে ভারতের বাংলাদেশ সফরের একমাত্র টেস্টে একটাই টিম খেলছে! এবং সেটা ভারত। অন্তত বুধবার পর্যন্ত কোনও প্রতিপক্ষ পাওয়া যাচ্ছে না। পদ্মাপারের বৃষ্টি তুমুল আক্রোশে ম্যাচের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তাকে বন্ধ রাখছে সাড়ে তিন ঘণ্টা। আলো কমে আসছে, ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে টেস্ট ম্যাচ করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতে কী? ধবন-বিজয় ওপেনিং জুটিকে একবারের জন্যও কি ন্যূনতম বিপদে ফেলা গেল? ধবনের একটা ক্যাচ পড়া বাদ দিলে বাংলাদেশ বোলিং থেকে এমন কোনও ঘাতক ডেলিভারি বার হয়নি যা কি না বিপদের পাগলাঘণ্টি বাজিয়ে দেবে ভারতীয় শিবিরে। সোজাসুজি বললে, ফতুল্লা টেস্টে শিখর-শাসন চলছে বিনা যুদ্ধে। বিনা প্রতিরোধে।
আজ তিনি অপরাজিত থাকলেন দেড়শোয়। মাত্র একশো আটান্ন বল খেলে। টি-টোয়েন্টি প্রভাবিত ওয়ান ডে পৃথিবীতেও যা সম্মানীয় স্কোর আর এটা তো টেস্ট! গত বছর অস্ট্রেলিয়া সফর একদম ভাল যায়নি শিখরের। রান পাননি পরের পর ম্যাচে। সিডনি টেস্টে তাঁকে বাদ দিয়ে নেমেছিল টিম। শুধু তাই নয়, বিরাটের সঙ্গে একবার এমন লেগে গিয়েছিল যে, অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে প্রেস কনফারেন্সে এসে বলতে হয়েছিল, ‘আনরেস্ট ইন দ্য ড্রেসিংরুম’। কেএল রাহুল আবার তাঁর জায়গায় নেমে সেঞ্চুরি করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও কঠিন করে ছেড়েছিলেন। পরে বিশ্বকাপে রান পেয়েছিলেন শিখর। কিন্তু টেস্ট গ্রহের সাম্প্রতিক ‘অভিশাপ’ থেকে বেরোতে তাঁকে বোধহয় এমন কোনও নির্মম ইনিংসই খেলতে হত। সমালোচকরা বলতে পারেন যে, বাংলাদেশ ওয়ান ডে-তে নতুন শক্তি। টেস্টে নয়। পাল্টা যুক্তি দেখানো যেতে পারে, বাংলাদেশ টেস্টে অমিতশক্তিধর না হলেও তারা শেষ পর্যন্ত একটা টিম। সেখানেও ভাল ব্যাটসম্যান, ভাল বোলার আছে।
মুশকিল হল, প্রতিভা থাকলেই শুধু হয় না। প্রতিভার প্রয়োগও লাগে। মুশফিকুর রহিমরা যে টিম এ দিন নামালেন, হতবাক করে দেওয়ার মতো। পাটা উইকেটে কি না চারটে স্পিনার! সেটাও ভারতের মতো স্পিন খেলায় সিদ্ধহস্ত টিমের বিরুদ্ধে! টিমে পেসার মাত্র একজন। এ তো মোটামুটি পদ্মার ইলিশ রান্না করে প্লেটে তুলে দেওয়া। খেলেই হল! ‘গব্বরের’ স্পিন-ভোজনও হল দেখার মতো। ডান হাতি, বাঁ হাতি, অফস্পিন, লেগস্পিন স্পিনের যে ক’রকম প্রজাতি সামনে এল স্রেফ ধ্বংস হয়ে ফিরে গেল। কপিবুক কভার ড্রাইভ থেকে টি-টোয়েন্টির আড়া কিছু বাদ দিলেন না দিল্লিওয়ালা। বাংলাদেশ বোলিং তাঁকে কতটা ‘বিপদে’ ফেলল বোঝাতে বোধহয় দু’একটা তথ্য আর দৃশ্যই যথেষ্ট। শিখর যখন হাফসেঞ্চুরির দিকে, মুরলী বিজয় পাঁচে আটকে। একশোয় পৌঁছলেন, ইনিংসে ডট বলের সংখ্যা দেখা গেল সাত! মুরলী বিজয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে হাজার রান টপকে গেলেন। আট বছর আগে ঢাকায় দীনেশ কার্তিক-ওয়াসিম জাফরের অপরাজিত ১৭৫ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ডও কিছুক্ষণে বারোটা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওপেনিং জুটিতে আজ পর্যন্ত ওটাই ভারতের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ ছিল। আজকের পর ওটা পদ্মায় মিশে গেল। ও হ্যাঁ, সেঞ্চুরি পর দু’হাত ছড়িয়ে একবার দাঁড়ানো, আর একটা হাসি আছে। কিন্তু এর বাইরে কিছু পাওয়া যায়নি। পেল্লায় গোঁফে মোচড়-টোচড়, কিছু না।
সন্ধেয় দেখা গেল বাংলাদেশ কোচ চণ্ডিকা হাতুরাসিংঘেকে প্রবল গুলিগোলার মুখে পড়তে। এ পারের সাংবাদিককুল ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে প্রশ্নবাণে। আপনার মনে হয় না এক পেসার নিয়ে খেলার স্ট্র্যাটেজি চরম ভুল হয়ে গেল? বাংলাদেশ কোচের পদে এক বছর কাটানোর পর মনে হয় টিমের কোনও উন্নতি হয়েছে? পিচ-চরিত্র, ভারত কী করতে পারে না পারে, বিবিধ প্রসঙ্গে প্রাক্তন শ্রীলঙ্কানকে বলতে শোনা গেল, ‘এটা আমাদের কন্ট্রোলে নেই,’, ‘ওটা কন্ট্রোলে নেই।’ আসলে ম্যাচটাই বোধহয় আর ‘কন্ট্রোলে’ নেই। যে দিকে এগোচ্ছে পরিস্থিতি, তাতে অভাবনীয় কিছু না ঘটলে ভারত হয় ম্যাচটা জিতবে। না হলে দুমদাম বৃষ্টি এসে (আগামী ক’দিনে পূর্বাভাস আছে) ম্যাচটাকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাবে। সে সব থাক। আপাতত প্রাসঙ্গিক হল, ভারত প্রথম ইনিংসে থামবে কোথায়?
মুরলী বিজয়ও গোকুলে বাড়ছেন!
ভারত
প্রথম ইনিংস
বিজয় ৮৯ ব্যাটিং
শিখর ১৫০ ব্যাটিং
অতিরিক্ত ০
মোট ২৩৯-০
বোলিং: শাহিদ ১২-২-৫২-০, সৌম্য ২-০-৭-০, শুভাগত ১৩-০-৪৭-০,
সাকিব ৯-১-৩৪-০, তাইজুল ১২-০-৫৫-০, জুবায়ের ৭-০-৪১-০, ইমরুল ১-০-৩-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy