Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
শারজার মিয়াঁদাদের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন দীনেশ

শেষ বলে ছয় মেরে নাগিন নাচের ওঝা কার্তিক

দু’ওভারে ৩৪ রান তুলতে হবে— এই অবস্থায় কার্তিক ক্রিজে এসে যে প্রথম বল থেকেই মারতে থাকে। ঠিক আগের ওভারে মুস্তাফিজুর এক রান দিয়েছিল।

বিধ্বংসী: কলম্বো শাসন করলেন দীনেশ কার্তিক। রবিবার ফাইনালে। ছবি: এএফপি

বিধ্বংসী: কলম্বো শাসন করলেন দীনেশ কার্তিক। রবিবার ফাইনালে। ছবি: এএফপি

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৪:১৫
Share: Save:

আইপিএল বলুন বা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ— সব অভিজ্ঞতা ঘেঁটে দেখলাম, এমন বিস্ময়কর, অনিশ্চয়তায় ভরা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ গত তিন-চার বছরে দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না। রবিবার রাতে শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় সিরিজ ফাইনালের ফয়সালা হল যে ভাবে, সারা ম্যাচেই যে রকম অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হল, তা বহু বছর মনে রাখার মতো। দীনেশ কার্তিক ফিরিয়ে আনল শারজায় জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কা মেরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্মৃতি। এত দিনে শাপমুক্তি হল ভারতীয় ক্রিকেটের। এক ভারতীয় ব্যাটসম্যান শেষ বলে ছয় মেরে ট্রফি জেতাল ভারতকে।

সোশ্যাল মিডিয়া এবং খবরের কাগজে যা নিয়ে খুব হইচই হচ্ছিল, তা হল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নাগিন নাচ। রবিবার কার্তিকের দাপটে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সেই নাচ নাচা হল না। তবে নাগিন নৃত্য হল গ্যালারিতে। টিভি-তে দেখলাম, ভারতের জয়ের পরে শ্রীলঙ্কার দর্শকরা সেই নাচ নাচছে। আসলে ওরা বাংলাদেশের কাছে হারটা ভুলতে পারেনি। ইন্টারনেটে দেখি, সুনীল গাওস্করও কমেন্ট্রি বক্সে এই নাচ নাচছে।

সৌম্য সরকারের শেষ বলটায় যে ভাবে ছয় মারল কার্তিক, তা অবিশ্বাস্য। সৌম্য বলটা ইয়র্কার করতে চেয়েছিল। অফস্টাম্পের অনেক বাইরে, প্রায় পাঁচ নম্বর স্টাম্পের ওপর রেখেছিল বলটা। ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ওই বলে বড় জোর বাউন্ডারি মারা যায়। ছয় হাঁকানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করল কার্তিক। ধোনির অনুপস্থিতিতে যে ভাবে ফিনিশারের ভূমিকা পালন করল ও, তাতে কেকেআর সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত হতেই পারে। আইপিএলেও কার্তিকের এই ফর্ম থাকলে নাইটদেরই মঙ্গল। আসলে কার্তিক ভাল ফিনিশার। আগেও আইপিএলে ম্যাচ জিতিয়েছে। এখানে বোধহয়, টিম ম্যানেজমেন্ট ওকে ওই ভূমিকায় দেখে নিতে চাইছিল।

আরও পড়ুন: সিওএ-র সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় প্রথম দিন-রাতের টেস্ট

দু’ওভারে ৩৪ রান তুলতে হবে— এই অবস্থায় কার্তিক ক্রিজে এসে যে প্রথম বল থেকেই মারতে থাকে। ঠিক আগের ওভারে মুস্তাফিজুর এক রান দিয়েছিল। বাংলাদেশের হাতে চলে যাওয়া ম্যাচ অবিশ্বাস্য ভাবে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দিল কার্তিক ওই ১৯ নম্বর ওভার থেকে। রুবেল হোসেনের ওভারে দু’টো বাউন্ডারি ও দু’টো ওভার বাউন্ডারি মারল। আর শেষ ওভারের শেষ বলে ওর ছয় হাঁকিয়ে ভারতকে জেতানো তো ঐতিহাসিক।

অভিনব: কমেন্ট্রি বক্সে গাওস্করের সেই নাগিন নাচ। ছবি: টুইটার।

বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচটা অনেকটা যেন পেনাল্টি কিকের মতো। জিতলে লোকে বলবে, ‘বাংলাদেশকেই তো হারিয়েছ’। আর হারলে বলবে, ‘বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলে!’ এই ম্যাচের আগে কার্তিকই এ কথা বলে। কিন্তু ইদানীং এই ফর্ম্যাটে শাকিবরা যা পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে, এর পরে বোধহয় ওদের নিয়ে আর এ সব বলা যাবে না।

শেষ দুটো ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে অবিশ্বাস্য ভাবে হারানোর পরে ওরা রবিবার প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে ভারতের সামনেও যে অনিশ্চয়তার দেওয়াল খাড়া করে দিয়েছিল, তার প্রশংসা করতেই হবে। মুস্তাফিজুরের ওই ওভারটার পরে তো মনে হচ্ছিল ম্যাচটা হয়তো বাংলাদেশই জিতে যাবে। কার্তিক এসেই ছবিটা পুরো উল্টে দেয়।

রবিবার ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই টালমাটাল অবস্থা ছিল। কখনও মনে হচ্ছিল ভারতই জিতবে, আবার কিছুক্ষণ পরেই মনে হচ্ছিল উল্টোটাও হতে পারে। যখন দেখা যায় পাওয়ারপ্লে-তে ভারত ৫৬-২ তুলেছে, তখন মনে হচ্ছিল ম্যাচ বার করে নেবে। রোহিত পাওয়ার-প্লে-তে দারুণ ব্যাটিং করে। রায়না শুরুতেই আউট হওয়ায় রোহিতের ওপর চাপ পড়ে যায়। ঝুঁকি নিয়েই বেশ কয়েকটা শট নেয় ও। কিন্তু রোহিত আউট হতেই পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যায়।

আরও কঠিন হয়ে ওঠে দীনেশ ওই সময় ক্রিজে না এসে বিজয় শঙ্করকে পাঠানোয়। যে ছেলেটা টুর্নামেন্টে এখনও ব্যাট করতেই নামেনি একবারও, তাকে এই রকম একটা কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট হাতে নামিয়ে দেওয়াটা একটা বড় ভুল। আত্মহত্যার চেষ্টা যেন। তখন রোহিত ড্রেসিংরুমে না থাকায় সিদ্ধান্তটা নিশ্চয়ই রবি শাস্ত্রী নিয়েছিল। একটা মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত হচ্ছিল এটা।

যুজবেন্দ্র চহালের দুর্দান্ত বোলিং শুরু থেকেই বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার পরে সেই জায়গা থেকে সাব্বির রহমান আবার বাংলাদেশকে টেনে তোলে। ওর ৫০ বলে ৭৭ রানই ওদের দেড়শোর দিকে নিয়ে আসে। সাব্বির যেখানে ৮০ শতাংশ শটই মিড উইকেট, স্কোয়ার লেগ দিয়ে মারে, সেখানে পয়েন্টের ফিল্ডারকে লাইনে এনে ওকে দিয়ে কাট করানোর চেষ্টা করা উচিত ছিল। তা হলে আগেই আটকে যেত ও। বাংলাদেশের রানটাও অতটা হত না। বুমরা, ভুবিরা থাকলে বোধহয় এই ভুলটা হত না।

স্কোরকার্ড

বাংলাদেশ ১৬৬-৮ (২০)

ভারত ১৬৮-৬ (২০)

বাংলাদেশ

তামিম ইকবাল ক শার্দূল বো চহাল ১৫

লিটন দাস ক রায়না বো ওয়াশিংটন ১১

সাব্বির রহমান বো উনাদকাট ৭৭

সৌম্য সরকার ক ধবন বো চহাল ১

মুশফিকুর রহিম ক শঙ্কর বো চহাল ৯

মাহমুদুল্লাহ্ রান আউট (কার্তিক) ২১

শাকিব রান আউট (রাহুল-শঙ্কর) ৭

মেহদি হাসান ন.আ. ১৯

রুবেল হুসেন বো উনাদকাট ০

মুস্তাফিজুর রহমান ন.আ. ০

অতিরিক্ত

মোট ১৬৬-৮ (২০)

পতন: ২৭-১ (লিটন, ৩.২), ২৭-২ (তামিম, ৪.২), ৩৩-৩ (সৌম্য, ৪.৬), ৬৮-৪ (মুশফিকুর, ১০.১), ১০৪-৫ (মাহমুদুল্লাহ্, ১৪.২), ১৩৩-৬ (শাকিব, ১৬.৫), ১৪৭-৭ (সাব্বির, ১৮.২), ১৪৮-৮ (রুবেল, ১৮.৩)।

বোলিং: উনাদকাট ৪-০-৩৩-২, ওয়াশিংটন ৪-০-২০-১, চহাল ৪-০-১৮-৩, শার্দূল ৪-০-৪৫-০, বিজয় শঙ্কর ৪-০-৪৮-০।

ভারত

শিখর ধবন ক আরিফুল বো শাকিব ১০

রোহিত ক মাহমুদুল্লাহ্ বো নাজমুল ৫৬

সুরেশ রায়না ক মুশফিকুর বো রুবেল ০

রাহুল ক সাব্বির বো রুবেল ২৪

মণীশ ক সাব্বির বো মুস্তাফিজুর ২৮

বিজয় শঙ্কর ক মেহদি বো সৌম্য ১৭

দীনেশ কার্তিক ন.আ. ২৯

ওয়াশিংটন ন.আ. ০

অতিরিক্ত

মোট ১৬৮-৬ (২০)

পতন: ৩২-১ (ধবন, ২.৪), ৩২-২ (রায়না, ৩.৩), ৮৩-৩ (রাহুল, ৯.৩), ৯৮-৪ (রোহিত, ১৩.২), ১৩৩-৫ (মণীশ, ১৭.৬), ১৬২-৬ (বিজয়, ১৯.৫)।

বোলিং: শাকিব ৪-০-২৮-১, মেহদি ১-০-১৭-০, রুবেল ৪-০-৩৫-২, নাজমুল ৪-০-৩২-১, মুস্তাফিজুর ৪-১-২১-১, সৌম্য ৩-০-৩৩-১।

চার উইকেটে জয়ী ভারত

ম্যাচের সেরা দীনেশ কার্তিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Dinesh Karthik Nidahas Trophy Video
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE