‘‘অপরাজিত চেন্নাইকে হারিয়ে এসেছে বলেই যে কাশ্মীরকে সমীহ করছি তা নয়, দলটা ধারাবাহিকভাবে খুব ভাল খেলছে। তবে আমরা ম্যাচটা জিততে চাই। কাজটা সহজ নয়। বরং বেশ কঠিন। সতর্ক হয়ে এগোতে হবে,’’ দোভাষীর মাধ্যমে বলে দেন আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস। বুদ্ধিদীপ্ত চোখ নিয়ে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকা ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচকে দেখলেই বোঝা যায় বর্ষশেষের দিকে ঢলে পড়া সন্ধ্যায় কাশ্মীরের আক্রমণ থামাতে নানা ভাবনা ঘুরছে তাঁর মাথায়। অনুশীলনেও তার ছোঁয়া। রাশভারী চেহারার আলেসান্দ্রোর চেয়ে অবশ্য অনেক শান্ত মনে হয় আলেক্স ফার্গুসনের প্রাক্তন ছাত্র ডেভ রবার্টসনকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রে়ঞ্জার্সের হয়ে খেলেছেন এক সময়। তখন ‘ফার্গি’-র কোচিংয়ে খেলেছেন তিনি। ভারতে এসে টানা তিন বছর ধরে রিয়াল কাশ্মীরকে কোচিং করাচ্ছেন রবার্টসন। বরফে মাঝেমধ্যেই ঢেকে যায় যেখানকার মাঠ, সেখানকার আই লিগের প্রথম দল হিসেবে কাশ্মীরকে তুলে এনে তিনি ইতিমধ্যে হইচই ফেলে দিয়েছেন ভারতীয় ফুটবলে। বলছিলেন, ‘‘ভাবতেই পারিনি যে, আই লিগে আমরা প্রথম সুযোগ পেয়েই এত ভাল খেলব। ফুটবলারদের উৎসাহেই এই জায়গায় পৌঁছেছি আমরা। বাইরের মাঠে খেলতে নেমে প্রথম দুটো ম্যাচ হারিনি। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সেই ধারা বজায় রাখতে চাই।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের জবি জাস্টিন আই লিগে খেলা ভারতীয় স্ট্রাইকারদের মধ্যে সেরা। ওর উপর নজর রাখতে হবে। বারো বছর বয়স থেকেই শুনছি ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের নাম। ওদের বিরুদ্ধে খেলতে নামাটা দারুণ উত্তেজনার।’’
বৃহস্পতিবার সকালে দুই ক্লাবের অনুশীলনেই দেখা গিয়েছে দলকে চাপমুক্ত রাখতে সচেষ্ট তাদের কোচেরা। অনুশীলন শেষে দিল্লি ডায়নামোস থেকে ট্রায়াল দিতে আসা নতুন স্ট্রাইকার সেইমিনমান মানচাংকে মাঝখানে রেখে হাততালি দিয়ে অভিনব কায়দায় নেচেছেন জবি জাস্টিন, খাইমে কোলাদোরা। পরে জানা গেল, পুরো দলের সঙ্গে নতুন ফুটবলারকে পরিচয় করানোর নতুন এই পদ্ধতি আমদানি করেছেন স্প্যানিশ কোচ। উল্টেদিকে পুরো দলকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টার মধ্যেই অনুশীলন করিয়েছেন কাশ্মীরের কোচ। তবে নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলাতে গিয়ে এ দিন বড় ক্ষতি হয়েছে রবার্টসনের দলের। হঠাৎই চোট পেয়েছেন স্ট্রাইকার গোনোহিরো ক্রিজো। তাঁর হাঁটু ফুলে গিয়েছে। আইভরি কোস্টের ফুটবলারটির মাঠে নামা কঠিন।
রিয়ালই আই লিগে এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে কম গোল খেয়েছে। নয় ম্যাচে মাত্র পাঁচ গোল। যা পাহাড় থেকে নেমে ভারতভ্রমণে (টানা ছয়টি বাইরের ম্যাচ খেলছে কাশ্মীর) বেরিয়ে পড়া কাশ্মীরের ক্লাবটির সাফল্যের আসল রসায়ন। কোচ রবার্টসন তাঁর ছেলে ম্যাসনকে স্টপারে খেলাচ্ছেন। ম্যাসনের সঙ্গী ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে অভিজ্ঞ লাভডে এনিনায়ে। ম্যাসন-লাভডে জুটির সঙ্গে সঙ্গত করছেন দুই বঙ্গ সন্তান ব্যান্ডেলের আভাস থাপা এবং আসানসোলের ঋত্বিককুমার দাশ। এই দলটার মাঝমাঠের প্রাণভোমরা ময়দানের দুই প্রাক্তন। মোহনবাগানে খেলে যাওয়া সুরচন্দ্র সিংহ এবং ইস্টবেঙ্গল-মহমেডানে খেলে যাওয়া বাজি আর্মান্ড। রক্ষণ আঁটসাট রেখে শরীরী ফুটবলের বুননই স্কটিশ কোচের প্রধান অস্ত্র।
আলেসান্দ্রোর কাছে তাই আজ কাশ্মীরের রক্ষণ ভাঙাই আসল চ্যালেঞ্জ। জবি ছাড়া ইস্টবেঙ্গলে সেই অর্থে কোনও স্ট্রাইকার নেই। অদ্ভুত হেয়ার স্টাইলের জবির সঙ্গে খাইমেকে ৪-৪-১-১ ব্যবহার করে সাফল্য পাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদের আসল শক্তি তাদের মাঝমাঠ। লালরিন্দিকা রালতে, ব্যান্ডন ভালরেনডিকা, কাশিম আইদারাকে নানা ভাবে ব্যবহার করেন আলেসান্দ্রো। বিশেষ করে দুই উইং দিয়ে বল তুলে এনে প্রতিপক্ষের বক্সে বিষ মাখানো পাস বাড়াচ্ছেন ডিকারা। সেটাই সম্ভবত আজও ব্যবহার হবে প্রতিপক্ষকে থামাতেও। তাতে কি হারানো যাবে কাশ্মীরকে? রিয়াল মাদ্রিদ ‘বি’ টিমের প্রাক্তন কোচ আলেসান্দ্রোর কপালে কিন্তু চিন্তার ভাঁজ পড়ছে।
শুক্রবার আই লিগে: ইস্টবেঙ্গল বনাম রিয়াল কাশ্মীর (যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, বিকেল ৫-০০)।