লাল-হলুদের কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের সঙ্গে মমতা। ছবি পিটিআই
বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় এ বছর একটা সময় ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল-ভবিষ্যৎ সঙ্কটের মধ্যে পড়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় সমস্যা কাটে। ইমামি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ইস্টবেঙ্গল। বুধবার ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, আগামী চার-পাঁচ বছর বিনিয়োগকারী নিয়ে ভাবতে হবে না ইস্টবেঙ্গলকে। সব ঠিক থাকলে পরবর্তী কয়েক বছরে ইমামিই ইস্টবেঙ্গলের বিনিয়োগকারী থাকছে। পাশাপাশি এ দিন রাজ্য সরকারের তরফে ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডানকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মমতা। গত সপ্তাহে মোহনবাগানকেও সমপরিমাণ টাকা দিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগকারীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে ইস্টবেঙ্গলের। প্রথমে তাদের বিনিয়োগকারী হিসাবে এসেছিল কোয়েস। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এক বছরের বেশি টেকেনি। গত দুই বছর শ্রী সিমেন্ট ছিল লাল-হলুদের বিনিয়োগকারী। তাদের সঙ্গেও প্রথম থেকেই খটাখটি শুরু হয়। প্রথম বছরের পরেই চুক্তি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সে বার মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় আরও এক বছর থাকতে রাজি হয় তারা। তবে দ্বিতীয় বছরের পর সম্পর্ক আর এগোয়নি।
গত ২৫ এপ্রিল নবান্ন থেকে ইস্টবেঙ্গলের নতুন বিনিয়োগকারী হিসাবে ইমামির নাম ঘোষণা করেন মমতা। তার পরেও চুক্তি নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। সে সব মিটে গিয়ে আইএসএলে নামতে মরিয়া লাল-হলুদ। বুধবার ‘রাজা সুরেশচন্দ্র চৌধুরি মেমোরিয়াল আর্কাইভের’ উদ্বোধন করতে এসে মমতা বলে দিলেন, বিনিয়োগকারী চিন্তা থেকে আপাতত মুক্ত লাল-হলুদ।
মমতা বলেছেন, “এক দিন ইমামির কর্তা গোয়েঙ্কার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আমি বললাম, আপনাদের তো অনেক টাকা। বাংলায় তো আমজনতার জন্য অনেক ব্যবসা করেন। আপনারা কেন ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নিচ্ছেন না? উনি বললেন, দিদি আপনি বললে আমরা রাজি। আমি ভাবতে পারিনি কাজটা এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। ওঁরা কথা রেখেছেন। শুনলে খুশি হবেন, আগামী কয়েক বছর চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। প্রতি বছর বন্যা হবে আর ঘর ভাসবে, এই চিন্তা ছেড়ে দিন। আপনারা শুধু ভাল করে খেলুন।” মুখ্যমন্ত্রীর এই কথার পরেই হাততালির ঝড় ওঠে।
এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ লাল-হলুদ তাঁবুতে এসে পৌঁছন মমতা। সঙ্গে ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কলকাতায় মেয়র তথা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ক্রীড়া রাষ্ট্রমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি, বিধায়ক সুজিত বসু প্রমুখ। তাঁবুতে ঢুকেই আগে পতাকা উত্তোলন করেন মমতা। এর পর নতুন জাদুঘরের উদ্বোধন করেন তিনি। তাঁকে গোটা জাদুঘর ঘুরে ঘুরে দেখান ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার। এর পর মাঠে যান মুখ্যমন্ত্রী। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার মেহতাব হোসেন, রহিম নবি, দীপঙ্কর রায় তাঁর হাতে ফুটবল তুলে দেন। ফুটবলে শট মারতেও দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে।
১৯৯৪ সালে মমতাকে আজীবন সদস্যপদ দিয়েছিলেন প্রয়াত সচিব দীপক (পল্টু) দাস। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও নতুন তাঁবুর উদ্বোধনে এসেছিলেন মমতা। ক্লাবের শতবর্ষ অনুষ্ঠানেও হাজির হয়েছিলেন তিনি। ফের এলেন লাল-হলুদ তাঁবুতে। মুখ্যমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে পুষ্পস্তবক তুলে দেন ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলার বিকাশ পাঁজি। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর তরফে প্রয়াত দুই ফুটবলার সুভাষ ভৌমিক এবং সুরজিৎ সেনগুপ্তের পরিবারের হাতে ছবি তুলে দেওয়া হয়।
জাদুঘর দেখে মুগ্ধ মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “খুব ভাল হয়েছে। এটা বিশ্বের অন্যতম সেরা আর্কাইভ হতে চলেছে। এত ভাল হয়েছে যে বলে বোঝানো যাবে না। আমি চাই সিএবি থেকে শুরু করে বাকি সব ক্লাব এ ধরনের জাদুঘর করুক।”
মমতা এ-ও জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার কাজ চলছে। তাঁর কথায়, “এই অনুষ্ঠান চলার মাঝেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওঁর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, আমাদের রাজ্যে কোনও ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় নেই। অনেক ছেলেমেয়ে, ক্রীড়া প্রশিক্ষক তৈরি হবে সেখান থেকে। খেলাধুলো নিয়ে পড়াশোনা করা যাবে, শিক্ষিত হওয়া যাবে। চিন এ ভাবেই খেলাধুলোয় এত উন্নতি করেছে। চুঁচুড়ায় বেসরকারি উদ্যোগে একটা ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। যে-ই এগিয়ে আসুক, জমি নিয়ে ভাবতে হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy