Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
football

ফুটবল খেললে ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে না তো! পায়ে বল নিয়ে বাবার সংশয় ঘোচাল মেয়ে রিম্পা

ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে কন্যাশ্রী কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রিম্পা। তাঁকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছেন তেহট্টের বাসিন্দারা। এ বার ভারতীয় দলেও সুযোগ পাবেন রিম্পা— এমনই আশায় রয়েছেন তাঁরা।

Picture of Rimpa Haldar

কন্যাশ্রী কাপে চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে রিম্পা হালদার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তেহট্ট শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:০৭
Share: Save:

ফুটবলের অনুশীলনে মেয়েকে বাধা না দিলেও সংশয়ী ছিলেন বাবা। ফুটবল খেললে মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে না তো— সারা ক্ষণ এ চিন্তা ঘুর ঘুর করত মনে। তবে বাবার যাবতীয় সংশয় ঘুচিয়ে দিয়েছেন মেয়ে। বাংলার অনূ‌র্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা করে নিয়েছেন। শুধু কি জায়গা করে নেওয়া? দলের সহ-অধিনায়কও হয়েছেন তেহট্টে মেয়ে রিম্পা হালদার।

ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে কন্যাশ্রী কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রিম্পা। তাঁকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছেন তেহট্টের হাঁসপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। এ বার ভারতীয় দলেও সুযোগ পাবেন রিম্পা— এমনই আশায় রয়েছেন তাঁরা। এই একই আশায় রয়েছে রিম্পার পরিবারও।

ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের টান রিম্পার। সেই টানেই হাঁসপুকুরিয়া বিদ্যাপীঠের খেলার মাঠে আনাগোনা চলত হালদার পাড়ায় শ্রীবাস হালদারের মেয়ের। যে মাঠ দাপিয়ে বেড়ায় স্পোর্টিং ইউনিয়নের ছেলেরা। সেখানকার ছেলেদের সঙ্গেই ফুটবল নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু রিম্পার।

দিনমজুরের মেয়ে ফুটবল খেলবে? বিশ্বাস করেননি অনেকেই। তবে রিম্পার পায়ের কাজ দেখে এক জনের বিশ্বাস ছিল, ফুটবল খেললে এ মেয়ে বহু দূর যাবে। সে সব ভেবেই তাঁকে আলাদা করে অনুশীলন করানো শুরু করেন হাঁসপুকুরিয়া স্পোর্টিং ইউনিয়নের অভীক বিশ্বাস। রিম্পাকে দেখে এলাকার বহু মেয়ে ফুটবলের টানে মাঠে আসতে শুরু করে। শুরু হয় মেয়েদের ফুটবল কোচিং ক্যাম্প। ওই কোচিং ক্যাম্প থেকেই উত্থান রিম্পার।

তেহট্টে ওই এলাকায় মেয়েদের ৪টি কোচিং ক্যাম্প নিয়ে শুরু হয়েছিল ফুটবল প্রতিযোগিতা। এর মধ্যে কলকাতায় শুরু হয় কন্যাশ্রী কাপ। ওই প্রতিযোগিতা থেকে রিম্পা-সহ আরও কয়েক জনের সঙ্গে খেলার চুক্তি করে শহরের ক্লাবগুলি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যোগ দেন রিম্পা। বাংলার নির্বাচকদের নজরেও পড়ে যান। এর পর বাংলা অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যোগ দেওয়া ডাক আসে। মনোনীত হন বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সহ- অধিনায়ক হিসাবে। ‘খেলো ইন্ডিয়া’য় খেলতে রিম্পা উড়ে যান মধ্যপ্রদেশের বালাঘাটে।

খেলার ফাঁকেই গত বছর হাঁসপুকুরিয়া বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন রিম্পা। তবে ফুটবলই তাঁর ধ্যানজ্ঞান।

ফুটবলার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় থাকলেও তা কেটে গিয়েছে রিম্পার বাবা শ্রীবাসের। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট থেকেই মেয়ে ফুটবল খেলতে ভালবাসত। স্কুলের পর খেলার মাঠে চলে যেত। আমি কোনও দিন বাধা দিইনি। মেয়ের ফুটবল খেলায় আমার থেকে অনুমতি চাইলে অভীকের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। তবু মনে সংশয় ছিল, ফুটবলে খেললে ভবিষ্যতে মেয়ের ক্ষতি হবে না তো? আজ সে সব সংশয় দূর হয়ে গিয়েছে।’’

রিম্পার প্রতিভা নিয়ে অবশ্য সংশয় ছিল না অভীকের। তিনি বলেন, ‘‘রিম্পা খুবই প্রতিভাবান ফুটবলার। আশা করছি, অচিরেই ভারতীয় দলে সুযোগ পাবে।’’ তাঁর উত্থানের পিছনে স্যরেদের অবদান রয়েছে বলে মত রিম্পার। তিনি বলেন, ‘‘আমার এই জায়গায় পৌঁছনোর পিছনে মূল অবদান হাঁসপুকুরিয়া স্পোর্টিং ইউনিয়নের। বিশেষ করে অভীক স্যর, চন্দন স্যর, বর্ণন স্যর এবং অয়ন স্যরের। তাঁদের জন্যই আজ এত দূর পৌঁছেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

football Tehatta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE