বাবা মারা গিয়েছেন বহু দিন। মা লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। যে বাড়িতে তিনি থাকেন, সেই দশ ফুট বাই দশ ফুটের ঘরটা স্যাঁতস্যাঁতে। দখলি জমির উপর তৈরি হওয়া বস্তি অঞ্চল যেমন হয়।
নাগেরবাজার আর এন গুহ রোডের বাইশ বছরের গোলকিপারের জীবনটা বৃহস্পতিবারের পর বদলে যাবে কি না নিজেও জানেন না শঙ্কর রায়। তবে বস্তির সেই অনামী, জেদি, নাছোড় যুবকই বাংলার ফুটবলে এ দিন এনে দিলেন কয়েক হাজার ওয়াটের আলো। তাঁর দু’হাতের উপর ভর করেই ছয় বছর পর বাংলা উঠে এল সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে।
অসামান্য দক্ষতায় দু’টো শট বাঁচালেন কলকাতা লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনের ক্লাব পিয়ারলেসের গোলকিপার। তাঁকে নিয়ে সতীর্থরা ম্যাচের পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেও নিজে অবশ্য এখনও তৃপ্ত নন মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিমের শেষ ডিফেন্ডার।
গোয়ার টিম হোটেল থেকে ফোনে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বললেন, ‘‘জীবনে প্রথম বাংলার জার্সি পরার সুযোগ পেয়েছি। চ্যাম্পিয়ন হয়ে কলকাতায় ফিরতে চাই। এখন এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’’ আর তারপর? এ বার বুঁজে আসে উচ্ছ্বসিত কিপারের গলা। তিনি বলে দেন, ‘‘অভাবের দিন আনি দিন খাই সংসার আমাদের। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে সবার চোখে পড়ে যাব নিশ্চয়ই। যদি কেউ একটা চাকরি দেয় তা হলে আমাদের সংসারটা বেঁচে যাবে।’’
মিজোরামের দু’জনের শট বাঁচানোর সময় গোল লাইনে দাঁড়িয়ে কী ভাবছিলেন? বিশেষ করে সাডেন ডেথের কিকটা? প্রশ্ন শুনে বাংলার কিপার বলে দেন, ‘‘ভাবছিলাম আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলার সবাই। যে কোনও ভাবে যদি কয়েকটা শট বাঁচাতে পারি তা হলে জিতে যাব। ফাইনালে উঠব। দু’টো পেরেছি।’’ ম্যাচের আগের দিন বিশেষভাবে পেনাল্টি কিক অনুশীলন করেননি স্বীকার করলেন শঙ্কর। ‘‘অন্য দিন যেভাবে অনুশীলন করি সে রকমই করেছিলাম। আলাদা কিছু করিনি।’’
বাংলার ফুটবলে আলো ছড়ানোর আগে অবশ্য কলকাতা লিগে এ বার দারুণ ফর্মে ছিলেন শঙ্কর। পিয়ারলেসের গোলে দাঁড়িয়ে মোহনবাগান এবং মহমেডানকে একাই আটকে দিয়েছিলেন তিনি। একের পর এক গোল রুখে। দু’টো ম্যাচেই পেয়েছিলেন ম্যাচের সেরার পুরস্কার।
পিয়ারলেসের আগে অবশ্য কলকাতা লিগে রেলওয়ে এফসি এবং পাঠচক্রেও চুটিয়ে খেলেছেন ছয় ফুট দু’ইঞ্চির এই কিপার। ‘‘বিধাননগর ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে পাঠচক্রের কর্তা নবাব ভট্টাচার্য আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর ক্লাবে। সেটাই ময়দানে প্রথম আমার পা রাখা।’’ গত বছর পিয়ারলেসের গোলে দাঁড়িয়ে ভাল খেলার সুবাদেই তাঁকে বাংলার ট্রায়ালে ডেকেছিলেন কোচ মৃদুল। গোয়াতে প্রতি ম্যাচেই দারুণ খেলছেন বাংলা গোলকিপার।
কোন কিপারের খেলা আপনার ভাল লাগে? কাকে আদর্শ হিসাবে দেখেন? এক সেকেন্ডও সময় না নিয়ে শঙ্করের উত্তর, ‘‘সুব্রত পাল আমার আদর্শ। উনি নেহরু কাপে দেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। ওর খেলা আমি ফলো করি।’’ এ দিন অন্য সেমিফাইনালে গোয়া ২-১ হারায় কেরলকে। ফলে রবিবার ফাইনালে বাংলাকে খেলতে হবে গোয়ার সঙ্গে। গ্রুপ লিগে বাংলা-গোয়া ম্যাচ ড্র হয়েছিল। বাংলা চ্যাম্পিয়ন হবে কি না সেটা জানতে রবিবার রাত হয়ে যাবে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের পর শঙ্কর রায়ের জীবনটা নতুন দিকে মোড় নেয় কী না সেটাই দেখার।
আরও গতি চান স্টিভন: আন্তর্জাতিক ম্যাচে আরও গতিতে খেলতে হবে ভারতকে। মনে করেন জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন। কাম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে ভারতের ৩-২ জয়ের পর তিনি বলেন, ‘‘আরও গতিতে শুরু করতে হবে। ২০০৫ এর পর আমাদের ফের বিদেশে ফ্রেন্ডলিতে জিতে আরও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy