Advertisement
৩০ মার্চ ২০২৩
Piyali Basak

Piyali Basak: আড়াই বছর থেকে পাহাড়ের প্রতি টান, চন্দননগরের পিয়ালির পদতলে এ বার এভারেস্টও

মাত্র ছ’বছর বয়স থেকেই ট্রেকিং শুরু। তার পর থেকেই পাহাড়ে ওঠার নেশা পেয়ে বসে। পিয়ালি অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া এভারেস্টে উঠে নজির তৈরি করলেন।

পিয়ালি বসাক।

পিয়ালি বসাক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২২ ১৪:২২
Share: Save:

ছোটবেলায় ‘কিশলয়’ বই থেকে মাউন্ট এভারেস্ট সম্পর্কে পড়ে পাহাড়ের প্রতি টান অনুভব করেছিল মেয়েটা। তেনজিং নোরগে, এডমন্ড হিলারিরা যে ভাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছিলেন, সেই কাহিনি রোমাঞ্চিত করেছিল তাঁকে। মেয়ের স্বপ্নে সঙ্গী হন বাবা-মাও। মাত্র ছ’বছর বয়স থেকেই ট্রেকিং শুরু। তার পর থেকেই পাহাড়ে ওঠার নেশা পেয়ে বসে। চন্দননগরের সেই মেয়ে পিয়ালি বসাক রবিবার অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া এভারেস্টে উঠে অনন্য নজির তৈরি করে ফেললেন।

২০০০ সালে অমরনাথ অভিযানে গিয়ে জঙ্গি হামলা খুব কাছ থেকে দেখেছেন পিয়ালি। কেদারনাথে গিয়ে মেঘভাঙা বৃষ্টি, তুষারধস থেকে জীবন হাতে করে শুধু বেঁচেই ফেরেননি, প্রায় ১০০ জন তীর্থযাত্রীকে বাঁচানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। সেই মেয়েই পৃথিবীর সপ্তম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ধৌলাগিরি জয় করেন অক্সিজেন ছাড়া। ভারতের প্রথম অসামরিক মহিলা হিসাবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। এই শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে অতীতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পিয়ালি অসমসাহসী। তাই কোনও বাধাই তাঁকে আটকাতে পারেনি। ধৌলাগিরির আগে ২০১৮ সালে অষ্টম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মানাসলু জয় করেন।

চন্দননগরের কানাইলাল প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করেন পিয়ালি। এই স্কুলেই একসময় পর্বতারোহীদের পোশাক ও সামগ্রীর প্রদর্শনী হত। ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে পাহাড়ে চড়ার বুট, দড়ি নেওয়ার জন্য বায়না করত পিয়ালি। সেই স্কুলেই এখন তিনি শিক্ষিকা। খুব ভালো আঁকতে পারেন পিয়ালি। এ ছাড়া মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্ট রয়েছে। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেছেন। আইস স্কেটিংয়ে রাজ্যের প্রথম মহিলা খেলোয়াড় তিনি। খুব ভাল যোগাসনও করেন।

তবে পারিবারিক ভাবেও অনেক সমস্যা সামলাতে হয়েছে তাঁকে। বাবা তপন বসাক খুবই অসুস্থ। কথা বলতে পারেন না। নিজের হাতে খেতেও পারেন না। তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়োদৌড়ি, বাড়ির দোকান-বাজার সবই করতে হয় পিয়ালিকে। স্কুলশিক্ষিকার কাজও সামলান একার হাতেই। পাহাড়ে চড়তে গিয়ে ঋণ হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। তার পরেও হাল ছাড়েননি পিয়ালি। তবে এতকিছু পরেও মেয়ের এই কৃতিত্বে স্বভাবতই গর্বিত তাঁর পরিবার। পিয়ালির এজেন্সির মাধ্যমে তাঁর দিদি তমালি প্রথম এভারেস্টে ওঠার খবর পান।

পিয়ালির মা বললেন, “ছোটবেলা থেকে পাহাড়ে চড়ার দিকে অদ্ভুত আগ্রহ ছিল ওর। এখানে যে প্রদর্শনী হত সেখানে ছুটে ছুটে চলে যেত। মাত্র আড়াই-তিন বছর বয়স থেকেই পাহাড়ে উঠতে চাইত। ওর বাবা বলত, আর একটু বড় হ। তারপর ঠিক উঠবি। কিছুতেই শুনতে চাই না। আজ ওর এই সাফল্যে আমরা আপ্লুত। কী ভাবে খুশি প্রকাশ করব সেটা বুঝতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.