ভারত যে ভাবে পেশি ফোলাচ্ছে, যা খেলছে তাতে দেখে মনে হচ্ছে ওরা হয়তো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রাখতে পারবে। টানা সাতটা জয়। ধোনিরা খেলছে আত্মবিশ্বাস, অফুরান এনার্জি আর কিছু করে দেখানোর মরিয়া লক্ষ্য নিয়ে। বুদ্ধি দিয়ে ক্রিকেটটা খেলছে ভারত। সব মিলিয়ে ওদের খেলাটা পরিপূর্ণ, নিখুঁত।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সামগ্রিক পারফরম্যান্স ভাল ছিল না। তবু ওদের বিরুদ্ধে ভারতের জয় আমাকে প্রভাবিত করেছে। এই ম্যাচটা জেতা বাংলাদেশের কাছে সব সময়ই কঠিন ছিল। এমসিজিতে কোনও টিম তিনশো প্লাস তাড়া করে জেতেনি। ভারতের বিরুদ্ধে ওদের রেকর্ড দেখেও মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ স্ট্রাগল করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে আঠাশ ম্যাচে ভারত জিতেছে চব্বিশটা। বাংলাদেশ মাত্র চারটে।
রোহিত শর্মার ফর্মে ফেরাটা টিমের কাছে খুব আনন্দের। ১২৬ বলে করা ওর নিয়ন্ত্রিত ১৩৭ রানের ইনিংসে ছিল সূক্ষ্ম স্ট্রোক প্লে। আলতো ছোঁয়ায় থার্ড ম্যান দিয়ে বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল পাওয়ার হিটিং। রোহিতের টাইমিং অসাধারণ। ওর ব্যাটিংয়ে সৌন্দর্য আছে। কব্জির আলতো মোচড়েই বাউন্ডারি আসে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওর অতীত রেকর্ড খুব ভাল নয়। পাঁচ ইনিংসে গড় ছিল ১৪। তাই এ রকম একটা পারফরম্যান্স রোহিতকে নিশ্চয়ই তৃপ্তি দেবে। বাংলাদেশের বোলারদের রীতিমতো শাসন করল ও।
তবে বিরাট কোহলির ফর্ম ভারতকে চিন্তায় রাখতে পারে। টিমের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে ওকে দেখা হলেও বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত সে রকম দাপট দেখাতে পারেনি কোহলি। বরং কোহলিকে ছাপিয়ে ধবন, রোহিত, রায়নার পারফরম্যান্স আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। কোহলির প্রতিভা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। হয়তো সেমিফাইনালটাই ওর দাপটের দিন হয়ে উঠবে। কোহলি রান না পাওয়ায় রায়না মিডল অর্ডারে নেমে ম্যাচে ছাপ ফেলার সুযোগ পাচ্ছে। জিম্বাবোয়ে ম্যাচে সেঞ্চুরির পর এ দিনের ৬৫ রানে রায়না টিমের জন্য কতটা কার্যকর সেটা স্পষ্ট। সুযোগের সদ্ব্যবহার শুধু নয় রায়নার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে যেন ও জানে মাঠের ঠিক কোথায় গ্যাপ রয়েছে। ফিল্ডিং ম্যাপটা যেন ওর মাথায় আঁকা থাকে। ফিল্ডিংয়ের গ্যাপগুলো কাজে লাগিয়ে প্রচুর রানও পাচ্ছে।
বাংলাদেশের ফিল্ডিং অবশ্য ভাল হয়নি। মিসফিল্ড, ওভারথ্রোতে আসা রানগুলোই বড় হয়ে উঠল শেষ পর্যন্ত। খারাপ ফিল্ডিংয়ের জন্য প্রায় ২০ রানের মতো দিয়েছে বাংলাদেশ। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে খারাপ ফিল্ডিংয়ের কোনও জায়গা নেই। ওদের বোলাররা প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু লাইন-লেংথ ঠিক না থাকায় রোহিত আর রায়নাকে দ্রুত আউট করতে পারেনি। ওই সময়ে যে ভাবে সহজেই রান উঠছিল তাতেই ম্যাচটা বাংলাদেশের হাতের বাইরে চলে যায়।
বাংলাদেশকে ৩০৩ রান তাড়া করতে হলে ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ কতটা পারফর্ম করে আর ওর সতীর্থরা ওকে কতটা সাহায্য করতে পারে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে ছিল। বিশ্বকাপে দুটো সেঞ্চুরি করাই শুধু নয়, মাহমুদউল্লাহর অলরাউন্ড ব্যাটিং আমাকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্ত দলের অন্য কয়েকজন ব্যাটসম্যানের মতো মাহমুদউল্লাহও ২০ রানের আশপাশে আটকে গেল। ওখানেই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক হয়ে যায়। তবে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেও যা পারফর্ম করেছে তাতে ওরা মাথা উঁচু করে বিদায় নিতে পারে। ওদের এই উজ্জীবিত, বিনোদনমূলক ক্রিকেটে ভবিষ্যতে আখেরে লাভ হবে ওদেরই।
ভারতীয় বোলিংও দুরন্ত হয়েছে। প্রত্যেক বোলারই নিজের কাজটা দারুণ ভাবে সামলেছে। বোলিং ইউনিট হিসেবে ভারত প্রতিদিন উন্নতি করছে। তার উপর ফিল্ডাররা মাঠে দক্ষতা দেখিয়ে যে ভাবে বোলারদের সাহায্য করছে সেটা ভারতকে বিপক্ষ হিসেবে বিপজ্জনক করে তুলেছে। ভবিষ্যতে তাই আরও ভাল লড়াই দেখার অপেক্ষায় আছি।
একটা ঘটনার কথা বলে লেখাটা শেষ করতে চাই। রুবেলের যে ফুলটস বলটায় রোহিত বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে ‘নো’ বল হওয়ায় বেঁচে যায়, সেটা পরে টিভি রিপ্লেতে মনে হয়েছে বলটা কোমরের নীচে হলেও হতে পারত। আমার বক্তব্য হল, এ সব ক্ষেত্রে তৃতীয় আম্পায়ারের ক্ষমতা থাকা উচিত মাঠের আম্পায়ার ভুল করলে তা শুধরে দেওয়ার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy