আরও পড়ুন: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানকে ১২৪ রানে হারাল টিম ইন্ডিয়া
খেলা দেখতে দেখতে আজহার যেন ফিরে যাচ্ছিলেন পুরনো দিনের অধিনায়কের ভূমিকায়। আগাম বলে দিতে থাকলেন, ‘‘পাকিস্তান শর্ট বলে আক্রমণ করার চেষ্টা করবে যুবিকে। তবে এখানে খুব সুবিধে করতে পারবে না।’’ যুবরাজকে শর্ট বলেই আক্রমণ করার চেষ্টা করলেন ওয়াহাব রিয়াজ। তার পর নিজেই চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন। মহম্মদ আমির যখন চোট পেয়ে বসে পড়েছেন, তখনও আজহার বলে দিতে পারলেন, ‘‘ও আর বল করতে পারবে না। বাইরে বেরিয়ে যাবে।’’ একটু পরে ওয়াহাব রিয়াজ একই ভাবে বসে পড়লেন। হাসতে হাসতে আজহারের মন্তব্য, ‘‘গেল আর একটা। ও-ও উঠবে না।’’ সত্যিই আজহারের পূর্বাভাস মতো আমির আর ওয়াহাব আর ওঠেননি। বাইরে নিয়ে যেতে হয় তাঁদের। টুর্নামেন্টেই তাঁরা অনিশ্চিত কি না, সেটাই দেখার।
হুঙ্কার: এজবাস্টনে আরও এক পাকিস্তান ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়ে বিরাট কোহালি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বড় জয় দিয়ে শুরু করল ভারত। ছবি: গেটি ইমেজেস
যুবরাজের ব্যাটিং দেখতে দেখতে আজহার বলে ফেললেন, ‘‘যুবি শর্ট বলে একটু সমস্যায় পড়ে ঠিকই। কিন্তু ওর শর্ট আর্ম পুল শটটাও দারুণ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এই শটটায় প্রচুর রান করেছে।’’ একটু পরে যুবরাজের শর্ট আর্ম পুল আছড়ে পড়তে শুরু করল। পাক পেসারদের তখন বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। ‘‘ইংল্যান্ডে পাল্টা আক্রমণ করার স্ট্র্যাটেজিই নিতে হয়। যুবি একদম ঠিক করছে,’’ বলছেন আজহার। কেন ইংল্যান্ডে প্রতি আক্রমণই সেরা রণনীতি? জিজ্ঞেস করায় আজহার ব্যাখ্যা করলেন, ‘‘এটা আমি এখানে কাউন্টি খেলার সময় আবিষ্কার করেছিলাম। যে হেতু পরিবেশ বোলারদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ থাকে, ক্রিজে আঠা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। পাল্টা চালাতেও হবে। ডার্বিশায়ারের হয়ে এই মাঠে আমি ওয়ারউইকশায়ারের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম। ওদের অ্যালান ডোনাল্ড ছিল। আমি কাউন্টার অ্যাটাক করে সফল হয়েছিলাম।’’
তবে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফিল্ডারদের অন্যতম আজহার বেশ হতাশ ফিল্ডিংয়ের মান দেখে। বিশেষ করে ভারতের ইনিংস চলার সময় যে ভাবে পাকিস্তানের ফিল্ডাররা একাধিক ক্যাচ গলালেন। ‘‘লং ক্যাচ ধরবে কী, ওদের দৌড়ে আসাটা দেখেই আমি বুঝে যাচ্ছি, ক্যাচটা ফেলে দেবে। ভাল ফিল্ডারের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে ফুটওয়ার্ক। যেটা ভাল হলে ডাইভ দেওয়ারও দরকার পড়ে না।’’ তিনি কী ভাবে ভাল ফিল্ডার হয়েছিলেন? জানতে চাওয়ায় আজহারের জবাব, ‘‘প্র্যাকটিস করতাম। আলাদা করে সময় দিতাম ফিল্ডিংয়ের জন্য। আর আমি ক্যাচ ধরার সময় বলের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করতাম। আগে থেকে শরীর ছুড়ে ক্যাচ ধরার চেষ্টা করতাম না।’’
ভারত-পাকিস্তান মহারণে তিনি বহু বার অংশগ্রহণ করেছেন। অধিনায়কত্ব করেছেন। এই ম্যাচের আলাদা বাতাবরণটা কেমন? আজহার মনে হল খেলার দিনের সেই উত্তেজনা ফিরে পেতে চাইলেন। গ্যালারির দিকে হাত দেখিয়ে বললেন, ‘‘এ রকম আবহ কোন ম্যাচে পাবেন! দু’দেশের যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে স্বপ্নের ম্যাচ। আমি যখন ক্যাপ্টেন ছিলাম, পাকিস্তান ম্যাচ মানে হোটেল থেকে শুরু করে মাঠ, কোথাও ছাড় পেতাম না। সমর্থকেরা এসে বলবে, পাকিস্তানকে কিন্তু হারাতেই হবে। এই ম্যাচটা সম্পূর্ণ আলাদা ম্যাচ। অন্য কোনও ম্যাচের সঙ্গে এর তুলনা হবে না।’’
বক্স থেকে ফিরে আসার আগে আর এক বার প্রশ্ন করা গেল— কে জিতবে এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি? একটুও না ভেবে আজহারের জবাব, ‘‘ভারত।’’ টুর্নামেন্টে আপনার তুরুপের তাস? ‘‘হার্দিক পাণ্ড্য। দুর্দান্ত ম্যাচউইনার। গেমচেঞ্জার। শেষ ওভারটায় এসেই কী রকম পেটাল দেখলেন!’’ এ বারও সময় না নিয়ে বলে গেলেন এখনও মেপে মেপে খাওয়া এবং আগের মতো সিক্সপ্যাক ধরে রাখা মহম্মদ আজহারউদ্দিন।